জৈব কৃষি (অর্গানিক ফার্মিং)
এটি এক প্রকার কৃষিব্যবস্থা যেখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈব পদার্থের পুনঃচক্রায়ন যেমন- কম্পোস্ট ও শস্যের অবশিষ্টাংশ, ফসল আবর্তন ও সঠিক ভূমি কর্ষণের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে সুস্থ সবল ফসল উৎপাদন করা হয়।
জৈব কৃষির প্রয়োজনীয়তা
- সবুজ বিপ্লব নামক আন্দোলনে কৃষির উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, অথচ মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
- উচ্চ মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মাটিতে ও কৃষি পণ্যে এর কুপ্রভাব পড়েছে।
- মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক রাখা।
- কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে মানুষের যাবতীয় স্বাস্থ্যহানি কমানো।
- পরিবেশকে সংরক্ষণ করে পরবর্তী বংশধরদের জন্য উপযোগী রাখা।
- কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্বারা পরিবেশ দূষিত হওয়া রোধ করা।
- পৃথিবীর বুকে নিরাপদ জীবনযাপন (মানুষ, পশু-পাখি, জলজ প্রাণী) পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য জৈব কৃষিব্যবস্থার প্রয়োজন।
জৈব কৃষির মূলনীতি
১. উদ্ভিদ পুষ্টির পুনঃচক্রায়ন।
২. উর্বর মাটি তৈরি।
৩. প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ।
৪. বালাই ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার।
৫. ব্যাপকহারে পশু সম্পদ উৎপাদন ও উন্নয়ন।
জৈব কৃষি পদ্ধতি
জৈব কৃষিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা অনুসরণ করে ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ, খাদ্য উৎপাদন ও পানি ব্যবহার নিশ্চত করা হয়। বংশানুগতভাবে সমন্বিত হয় এমন গাছপালা ফসল নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এ ধরনের কিছু পদ্ধতি হলোঃ সারিবদ্ধ ফসল, মিশ্র/আন্তঃফসল, আচ্ছাদন ফসল, সবুজ সার, মালচিং।
জৈব সার
জৈব কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের জৈব সারের উৎস হচ্ছে- খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, সবুজ সার, জৈবিক নাইট্রোজেন সংযোগকারী (বিএনএফ) উদ্ভিদ ও জৈব উৎস থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য বর্জ্য পদার্থসমূহ। তাছাড়া পচানো (১-২ সপ্তাহ) তরল গোবর ও কিছু পচা সবজিখেতে উপরি প্রয়োগ করা হয়।
জৈব কীটনাশক
জৈব কৃষিতে কিছু কিছু পাতা, কাণ্ড, ডাল, মূল বাকল এর রস কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের কিছু গাছের নাম নিচে দেওয়া হলো :
জৈব কৃষিতে কীটনাশকরূপে ব্যবহৃত গাছপালা
নং | গাছের নাম | গাছের কার্যকরী অংশ |
১ | ধুতরা | পাতা, কাণ্ড, ফুল, বীজ |
২ | ভেন্নার তৈল | বীজ |
৩ | বন্য তামাক | পাতা, |
৪ | পেঁপে | পাতা, |
৫ | শিয়াল মুথা | পাতা, কাণ্ড, ফুল |
৬ | আফ্রিকান ধৈঞ্চা | মূল |
৭ | ডনম | পাতা, কাণ্ড, ফুল, বীজ |
৮ | অড়হর | পাতা, কাণ্ড, ফুল |
৯ | তুলসী পাতা | পাতা, কাণ্ড, ফুল |
১০ | মেক্সিকান গাঁদা | পাতা, কাণ্ড, ফুল |
জৈব বর্জ্যের ব্যবহার
জৈব কৃষিব্যবস্থা মাটির উর্বরতা রক্ষা ও খাদ্যোপাদান সরবরাহের জন্য জৈব বর্জ্যের পুনঃচক্রায়নের ওপর নির্ভরশীল। আর গাছপালা থেকে প্রাপ্ত কীটনাশক দিয়ে রক্ষা করা হয় ফসল। কিছু ঔষধি গাছ ব্যবহার করা হয়। এতে বুঝা যায় যে, কৃষিজ উৎপাদনের জন্য জৈব কৃষির সাফল্য নির্ভর করছে জৈব বর্জ্যের ব্যবহারে দক্ষতার ওপর। এটা একাধারে পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য ও জৈব পরিবেশ সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
জৈব কৃষির জন্য সমন্বিত কৃষির কয়েকটি দিক
প্রায় সকল প্রকার জৈব কৃষিতেই কৃষির বিভিন্ন উপাদান যেমন- ফসল, পশু-পাখি, মাছ প্রভৃতি সমন্বিত করা হয়। এতে সকল বর্জ্যের পুনঃচক্রায়ন ভালো হয়। এমনকি মিশ্র খামারই যথেষ্ট নয়, যদি না সেখানে বর্জ্যের পুনঃচক্রায়ন করা হয়।
ঔষধি গাছের সমন্বয়
ছোট ঘাস, লতা-গুল্ম এগুলোকে আগাছা ভেবে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের কিছু কিছু গাছ থেকে প্রাকৃতিক কীটনাশক ও ঔষধ তৈরি করে তা ফসল, পশু-পাখি ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা যায়। উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ৮০% মানুষ নির্ভর করে ঔষধি গাছপালার উপর। যেমন- তুলসী পাতা দিয়ে আমের পোকা দমন করা যায়।
কাঠ জাতীয় গাছের সমন্বয়
মাঝারি আকারের গাছ-পালা ও বৃক্ষ থেকে আমরা লাভ করি অনেক ফল, খাদ্য, গো-খাদ্য, জ্বালানি, আঁশ, কাঠ এবং সেই সাথে প্রচুর জৈব পদার্থ ও বর্জ্য। এরা ঔষধ ও কীটনাশক সরবরাহ করতে সক্ষম।
জৈব কৃষির উপকারিতা
- সবুজ সার ব্যবহারের ফলে (আফ্রিকান ধৈঞ্চা) ধান উৎপাদন হয় বছরে ১৫.৪৬ টন/হেক্টর এবং পতিত রাখলে ধান হয় বছরে ১৫.৩৩ টন/হেক্টর। অথচ প্রচলিত নিয়মে সার ব্যবহার করে ধান হয় বছরে মাত্র ১১.২০ টন/হেক্টর।
- দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা দ্বারা ভারতে দেখা যায় যে, ধান উৎপাদনে সার ব্যবহারের ফলে ফলন ক্রমশ কমে যাচ্ছে অথচ জৈব সার ব্যবহারে ফলন ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
- দেশীয় ধৈঞ্চা ব্যবহারে যে পরিমাণ নাইট্রোজেন পাওয়া যায়, ৬০ কেজি/হেক্টর মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহারেও তা হয় না। বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী গাছপালা জ্বালানি ও গাছের খাদ্য জোগান দিতে পারে। যেমন- ইপিল-ইপিল, একাশিয়া, অড়হর। এগুলোর ঔষধিগুণও আছে।
- কেঁচোর ডিম ছিটিয়ে জমি উর্বর করা বা জৈব পদার্থ পচানোর ফলে ভারতে কৃষির খরচ অনেকাংশে কমে থাকে।
- জৈব কৃষির পণ্য উচ্চ মানের ও স্বাদের হয় বলে দাম হয় বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জৈব কৃষি দেয় নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ। যার ফলে জৈব পরিবেশে প্রতিটি জীবই বিপদমুক্তভাবে জন্মাতে ও বড় হতে পারে। নিরাপদ পরিবেশ নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্য দুটোরই নিশ্চয়তা দেয়।
- মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
- মাটির উৎপাদন ক্ষমতা ও অণুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet