কৃষিনির্ভর ও অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত আমাদের দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসলের চাষা বা চাষাবাদের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে কয়েক যুগ আগে থেকেই। এই চাষাবাদের সঙ্গে উন্নততর প্রযুক্তির উপকরণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাসায়নিক সার, বালাইনাশক ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার। পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য বিভিন্ন ফসল চাষ ও সংরক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে নানান ধরনের ক্ষতিকর বালাইনাশক। ফল পাকানো, ফল সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং ফলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকারের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদিও হামেশা ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আমরা আমজনতা এক প্রচণ্ড ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি। এসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল উদ্ভিদের মূল ও পাতার সাহায্যে উদ্ভিদের ভেতর প্রবেশ করে, ফল ফসল ও সবজিকে বিষাক্ত করে তোলে; ঐসব ফল-ফসল-সবজি খেলে মানুষের লিভার আক্রান্ত হওয়াসহ স্নায়ুরোগ, রক্তচাপ, হৃৎরোগ, ক্যানসার, গর্ভপাত, পঙ্গু সন্তান জন্ম প্রভৃতি জটিলতা তৈরি হতে পারে। অপরদিকে কীটনাশক জমিতে ব্যবহারের ফলে শস্যের উপকারী পোকামাকড় ও অণুজীব ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে, যা আমাদের ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ। আবার ফল আগাম পাকানোসহ ফল সবজির উজ্জ্বলতা ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য আরেক ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল বা রাসায়নিক দ্রব্য, সেগুলোও জনস্বাস্থ্যের জন্য সমভাবে হুমকিস্বরূপ। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার। দ্রুত এবং নিমিষে আগাছা দমনের জন্য কৃষক ব্যবহার করছেন সহজলভ্য আগাছানাশক। এসব কেমিক্যালও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর নয়, ক্ষতিকর!
স্বাস্থ্য এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের যৌথ এবং অভিন্ন মতামত
কৃষি ও চিকিৎসাব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নতি ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু বহুবিধ রাসায়নিক সন্ত্রাসের মধ্যে পড়ে মানব শরীরে রোগের প্রকোপ বেড়েছে অনেক অনেক বেশি। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা এক্ষুনি নিতে হবে নচেৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেটা এক ভয়াবহ অশনিসংকেতের বার্তাবাহক বটে! কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শানুসারে, যেভাবে পরিমিত ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা দরকার তা আমাদের বেশিরভাগ কৃষকই যথাযথভাবে জানেন না এবং যারা জানেন তারাও সেটা ঠিকমতো মানেন না। কয়েক বছর আগেকার একটি
বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ৬ গুণের অধিক কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৪ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দেশে কীটনাশকের ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ গুণেরও বেশি। কীটনাশকের অতিরিক্ত ও যথেচ্ছ ব্যবহারে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে জীবকুল, উদ্ভিদ এবং মূল্যবান মৎস্য সম্পদের। বিষাচ্ছাদিত পরিবেশের কারণে বিভিন্ন জাতের মৎস্যের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদের তালিকাও দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। কৃষি সহায়ক পাখি ও কীটপতঙ্গ হারিয়ে যাচ্ছে। আজকে দেশি মাছ এবং দেশি ঘুঘু ফিঙে বক সহ বিভিন্ন পক্ষীকুল হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বালাইনাশকের যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিত পরিবেশবান্ধবহীন ব্যবহার। অন্যদিকে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে বালাইনাশকের ফলে। কারণ নারী ও শিশুরা কীটনাশক মিশ্রণ ও সংরক্ষণের প্রধান কাজগুলোর সাথে বিশেষভাবে জড়িত থাকে। খুব বেশি বালাইনাশকের কাছে থাকলে একজন নারীর সন্তানধারণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং একজন পুরুষ চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারে তার পৌরুষত্ব, সাথে সাথে মাটির স্বাস্থ্য যাচ্ছে ক্রমাবনতির দিকে। আমাদের দেশের কোনো এলাকার মাটির ক্ষারত্ব কম, অম্লত্ব বেশি, আবার কোনো এলাকাতে এটার বিপরীত চিত্রও দেখা যায়। জৈব কার্বনের মাত্রাও আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে; যেখানে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ থাকা উচিত শতকরা ৫ ভাগ সেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানের মাটিতে এই পরিমাণ শতকরা এক ভাগেরও নিচে নেমে গেছে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটির নিচে ছত্রাক ব্যাকটেরিয়াসহ যেসব অণুজীব রয়েছে সেগুলো ধ্বংস হচ্ছে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অপরিমিত ব্যবহারের ফলে। এসব মাটিস্থ অনুজীবের সংখ্যা যত কমবে ততই রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা ও উৎপাদন হ্রাস পাবে। কীটনাশক প্রয়োগের পর সবজি সাধারণভাবে ১৫ দিনের মধ্যে রান্না করে খেলে শরীরে নানা প্রকারের রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। এছাড়া সবজিতে অনুমোদনপ্রাপ্ত কীটনাশক প্রয়োগের পর কমপক্ষে এক সপ্তাহের পূর্বে খেত থেকে তুলে তা বিক্রি না করা এবং না খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ কীটনাশক ব্যবহারের পরদিনই বা ঐদিনই কৃষকরা জমি থেকে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পড়ছে নিশ্চিত স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে।
দেশে বিগত ১০ বছরে যেভাবে পেস্টিসাইডের ব্যবহার বেড়েছে, তাতে উদবিগ্ন কৃষি বিজ্ঞানীরা। ১৯৯৯ সালে দেশে ১৪ হাজার ৩৪০ টন পেস্টিসাইড ব্যবহার হতো। ২০১৪ সালে সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে পেস্টিসাইডের ব্যবহার ৫ গুণ বেড়ে হয়েছে ৬০ হাজার টনের ওপরে। অথচ এই সময়ের মধ্যে দেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় এক শতাংশ হারে কমে যাচ্ছে। তাই এক ভয়াবহ রাসায়নিক সন্ত্রাসের মুখোমুখি রয়েছি আমরা, এ দেশের আমজনতা। এটা তো একদিকের চিত্র; অন্যদিকের চিত্রটাও একই ধরনের ভয়াবহ। বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙুর, নাশপাতিসহ দেশি- বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণ ফলমূলের উজ্জ্বল রং ক্রেতাদের নজর কাড়ে, সেগুলো বিক্রিও হয় বেশি দামে। তাই অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং তা উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করার জন্য অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রং ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। ফল গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রি করা মুহূর্ত পর্যন্ত এক একটি ফলে কখনো কখনো ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া যায়। হরমোন জাতীয় কেমিক্যাল ইথরেল ইথিফোন, রাসফোন অতিমাত্রায় স্প্রে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। অন্যদিকে ফলমূল দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করতে ফরমালিনসহ আরও কিছু বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহারও চলছে অহরহ। ইথিলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে ২-৪ দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রং ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে থেকে পাকা মনে হলেও এর ভেতরের অংশে অপরিপক্ব থেকেই যায়। পরবর্তীতে সে ফলগুলো খাওয়ার কারণে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল, শুরু হয় নানা অসুখ- বিসুখ। অপরিপক্ব ফলমূলের স্বাদ-গন্ধ, পুষ্টিমান অনেক কমে যায়। কেমিক্যাল মেশানো ফল চেনা অতটা কঠিন কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলে সমান (ইউনিফর্ম) রং হবে না, বোঁটার অংশে লালচে আভা রং হবে এবং ফল মিষ্টি হবে। কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলে সব অংশে সমান রং হবে এবং ফলের ভেতরে চামড়ার অংশে একটু তিতা হবে। তাছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত বলতেই হয়, ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড। অতিরিক্ত তাপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো আম রাখলে তা ক্যালসিয়াম সায়ানাইডে পরিণত হয়, যা অত্যন্ত মারাত্মক বিষ এবং মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকভাবে কৃত্রিম উপায়ে ফল পাকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বাতাসের সংস্পর্শে এসে এসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে যা ইথিলিনের মতো কাজ করে (CaC2 + 2H2O = Ca (OH)2 + C₂H₂)। ক্যালসিয়াম কার্বাইডে আছে আর্সেনিক ও ফসফরাস হাইড্রাইড, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ইথিলিনের ব্যবহার
কৃত্রিম ফল পাকানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি বেশ নিরাপদ কারণ এখানে প্রাকৃতিক হরমোনকে ব্যবহার করা হয়। তবে ইথিলিন ব্যবহার করতে হয় খুব সাবধানে কারণ এটা flammable and explosive। এটার পরিমিত ব্যবহার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ইথিফোন বাজারে বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে পাওয়া যায়, যেমন- ইথরেল, ফ্লোরেল, রাসফোন ইত্যাদি। ইথিফোন (ethephon: 2- chloroethylphosphonic acid) একটা কৃত্রিম যৌগ যেটা ভেঙে ইথিলিন তৈরি হয়।
ইথিফোনের যৌক্তিক ব্যবহার
(১) ১ লিটার পানিতে ১ মিলি ইথোফোন মিশিয়ে তার মধ্যে ফল ডুবিয়ে নিউজপ্রিন্ট কাগজের ওপরে ছড়িয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এতে করে ২ দিনের মধ্যে পেকে যাবে। (২) সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ পদ্ধতি হলো একটা বড় মুখ বিশিষ্ট পাত্রের মধ্যে ৫ লিটার পানির সাথে ১০ মিলি ইথোফোন এবং ২ গ্রাম সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড মিশিয়ে পাত্রটি ফল সমৃদ্ধ বায়ু নিরোধক ঘরের মাঝে রাখতে হবে। রুমের তিন ভাগের এক ভাগ ফল রাখতে হবে, বাকিটুকু খালি থাকবে। ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফল পাকার কাজটি সম্পন্ন হবে। (২) সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বায়ুনিরোধক ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট ফলের জন্য নির্দিষ্ট তাপে ও মাত্রায় ফল পাকানো। এভাবে ব্যবহারে ইথোফোন কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। গোটা বিশ্বব্যাপী ইথোফোন ফল পাকানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে এই গ্রোথ হরমোন কেন সরকারিভাবে ফল পাকানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না সেটার কারণ অজ্ঞাত।
ফরমালিনের অপব্যবহার
ফরমালডিহাইড গ্যাসের (CH₂O) সাথে পানি মিশিয়ে যে দ্রবণ তৈরি করা হয় সেটাকে বলে ফরমালিন (Formalin)। ফরমালিন উগ্র এবং ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত তরল পদার্থ। মিথানলকে জারিত করে (Oxidation) ফরমালডিহাইড গ্যাস (CH₂O) তৈরি করা হয়। আর ফরমালডিহাইডের মধ্যে আস্তে আস্তে পানি মিশিয়ে ফরমালিন তৈরি করা হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা কাঙ্ক্ষিত ঘনত্বে (৪০%) পৌঁছায়। এটি ক্ষার ও অম্লের মাঝামাঝি একটি নিষ্ক্রিয় দ্রবণ। ফরমালিনের অন্যতম প্রধান কাজ হলো জীবাণু নাশ করা। ছত্রাক, ব্যকটেরিয়াসহ যে কোনো ধরনের জীবাণুকে দ্রুত মেরে ফেলতে পারে ফরমালিন। সেজন্য চিকিৎসা
শাস্ত্র ও গবেষণা কাজে ফরমালিনের ব্যাপক যৌক্তিক ব্যবহার রয়েছে। ফরমালিন জীবন্ত প্রাণীর আমিষের সাথে মিশে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলে। সেজন্য বায়ুরোধী কাচের পাত্রে বিভিন্ন জীবন্ত প্রাণী বা প্রাণীর অংশবিশেষ সংরক্ষণের জন্য ফরমালিনের ব্যবহার সর্বজনস্বীকৃত। বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্যও ফরমালিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফরমালিন জীবন্ত প্রাণীর শরীরের গভীরে প্রবেশ করে জীবাণু নাশ করতে পারে এবং ভেতরের কোষ কলাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে সাহায্য করে। একবার কোনো জীবন্ত দ্রব্যতে ফরমালিন মেশানো হলে সেটা জীবাণুমুক্ত হওয়ার সাথে সাথে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে যেন কোনো জীবাণুর আক্রমণ হতে না পারে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করে এই ফরমালিন। বস্তুত ফরমালিন জীবন্ত প্রাণীর আমিষের সাথে মিশে থাকা জীবাণুকেও মেরে ফেলতে পারে অন্য কিছুকে নয়। কিছু কিছু অসাধু ফল ব্যবসায়ী না জেনে না বুঝে ফলে অহেতুক ফরমালিন ব্যবহার করে থাকে। এটাতে ফল সংরক্ষণে আদতে কোনোই কাজে আসে না, বরং ফরমালিন দেওয়া ফল ও সবজি ২৪ ঘণ্টার পর থেকে কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করতে থাকে। ফরমালিন পরীক্ষার কীট দিয়ে পরীক্ষা করলে হাটে-মাঠে-ঘাটে বাতাসে সকল ফল- ফুল-সবজিতে ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে, তাই ঢালাওভাবে সর্বত্র ফরমালিন আছে বলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যৌক্তিক নয়। তবে মাছ মাংস ও দুধে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের গবেষণায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। একইসাথে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আমেরিকা এবং থাইল্যান্ডের ক্যাসেসার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেও একই তথ্য পাওয়া গেছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের করণীয়
- মানুষকে নৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ করে এসব কেমিক্যালের ব্যবহার সীমিত করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে;
- আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার করে, যান্ত্রিক ও প্রাকৃতিকভাবে রোগ পোকামাকড় দমনের সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োগ বাড়াতে হবে;
- বালাই সহনশীল জাতের ব্যবহার করতে হবে;
- উপকারী পোকামাকড় ও প্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে;
- পরিমিত ও পরিশীলিত রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা নেওয়া;
- নিরাপদ সময়কাল মেনে ফল ফসল খাওয়া;
- ফলমূল খাওয়ার আগে লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে আবার ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে সেটা ব্যবহার করা;
সাবধানতার সাথে বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা;
- আগাছা বিনাশের জন্য বালাইনাশকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা;
- উন্নত বিশ্বের ন্যায় আইনের প্রয়োগ করে বালাইনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং নতুন বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন সীমিতকরণ করা;
- বাংলাদেশে কৃষির অত্যাধুনিক লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের একমাত্র বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান “কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর”। এখানে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে বালাইনাশকের ব্যবহার সীমিত করে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
- এ ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকার মতো কার্যকরী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে; যেখানে ৫ ফোঁটা হালকা মানের বালাইনাশক ব্যবহার করতে গেলেও কমপক্ষে ৫টি বন্ড পেপারে মুচলেকা দিতে হয়। আর সেখানে যত্রতত্র বালাইনাশক বেচাকেনা এবং ব্যবহারের কথা ভাবাই যায় না।
- দেশের প্রতিটি স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটা করে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ সেন্টার আছে, তারা আমদানি রপ্তানিকৃত পণ্যে শুধু রোগবালাইয়ের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে উদ্ভিদ স্বাস্থ্য প্রমাণপত্র প্রদান করে থাকেন। এসব পণ্যে ক্ষতিকর কেমিক্যালের অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা দেখার আইনি ক্ষমতা তাদের ওপরে অর্পণ করা এখন সময়ের দাবি মাত্র।
- সকল বিষয়ে একাকী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের ওপরে চাপালে কাজ হবে না। ভেজাল সার কীটনাশক নিয়ে ব্যাপক মামলা হয়ে থাকে কিন্তু প্রকারান্তরে মামলার চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হয়ে থাকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে, ফলে এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের খুব একটা কিছু করার নেই।
- মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা। কার্বাইড, • ইথরেল ইথিফোন ফরমালিন ব্যবহারের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যাপক ফল ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা মোটেও যথার্থ নয়! বর্তমানে ফল পাকানোর জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইথরেল ইথিফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। এটার পরিমিত মাত্রার ব্যবহার মোটেই দূষনীয় নয়। সুতরাং ইথরেল ইথিফোনের যৌক্তিক ব্যবহার অনুমোদন দেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। কার্বাইডে ক্ষতি হচ্ছে অনেক বেশি। ক্ষতি হচ্ছে বালাইনাশকের নিরাপদ সময়কাল না মেনে ফল সবজিতে ব্যাপকভাবে বালাইনাশকের ব্যবহার অথচ এর জন্য কোনো আইনী ব্যবস্থা ও মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদেরকে এখনই ভাবতে হবে।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে = Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 HIGH QUALITY GARDENING SEEDS
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 HIGH QUALITY GARDENING TOOLS
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 ORGANIC FERTILIZERS AND PESTICIDES
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet