Coconut tree fertilizer and pest control – নারিকেল গাছের সার ব্যবস্থাপনা ও গন্ডার পোকা দমন পদ্ধতি

Coconut tree fertilizer and pest control

Coconut tree fertilizer and pest control – নারিকেল গাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফলজ গাছ হিসেবে বিবেচিত। এর পাতাগুলি যেমন জ্বালানির কাজে লাগে, তেমনি নারিকেল ফল থেকে পাওয়া যায় পুষ্টিকর পানি, শাঁস ও তেল। কিন্তু এই গাছের ফলন নির্ভর করে মূলত পরিচর্যার উপর—বিশেষ করে সার ব্যবস্থাপনা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে।

আজকের আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব কীভাবে নারিকেল গাছের বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হয় এবং কীভাবে এর ক্ষতিকর পোকা গন্ডার দমন করা যায়—সেই সাথে জৈব সার ব্যবহারের সঠিক ফর্মুলা ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেও বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হবে।

🌿 অধ্যায় ১: নারিকেল গাছের সার ব্যবস্থাপনা

🔹 সার প্রয়োগের মৌসুম ও নিয়ম

নারিকেল গাছে সার বছরে দুইবার প্রয়োগ করতে হয়:

  • প্রথম কিস্তি: বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে

  • দ্বিতীয় কিস্তি: আশ্বিন মাসে

প্রয়োগ পদ্ধতি:

  • গাছের গোড়া থেকে চতুর্দিকে ১ মিটার দূরে ও ১.০-২.৫ মিটার জায়গা চিহ্নিত করে।

  • ২০-৩০ সেমি গভীর গর্ত করে সার প্রয়োগ করতে হবে।

  • প্রয়োগের পরে গর্তের মাটি কুপিয়ে হালকা পানি দিতে হবে।

  • খুব শুষ্ক বা অতিবৃষ্টিপাতের সময় সার প্রয়োগ না করাই উত্তম।

🔹 বয়সভেদে নারিকেল গাছের জন্য সার প্রয়োগের পরিমাণ

🧒 ১-৪ বছর বয়সী গাছের জন্য: (Coconut tree fertilizer and pest control)

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ১০ কেজি

  • ইউরিয়া: ২০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ১০০ গ্রাম

  • এমওপি: ৪০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ১০০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ৪০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ১০ গ্রাম

🧑 ৫-৭ বছর বয়সী গাছের জন্য:(Coconut tree fertilizer and pest control)

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ১৫ কেজি

  • ইউরিয়া: ৪০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ২০০ গ্রাম

  • এমওপি: ৮০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ২০০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ৬০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ১৫ গ্রাম

👨 ৮-১০ বছর বয়সী গাছের জন্য:(Coconut tree fertilizer and pest control)

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ২০ কেজি

  • ইউরিয়া: ৮০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ৪০০ গ্রাম

  • এমওপি: ১৫০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ২৫০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ৮০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ২০ গ্রাম

🧓 ১১-১৫ বছর বয়সী গাছের জন্য:(Coconut tree fertilizer and pest control)

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ২৫ কেজি

  • ইউরিয়া: ১০০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ৫০০ গ্রাম

  • এমওপি: ২০০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ৩৫০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ১০০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ৩০ গ্রাম

👴 ১৬-২০ বছর বয়সী গাছের জন্য:

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ৩০ কেজি

  • ইউরিয়া: ১২০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ৬০০ গ্রাম

  • এমওপি: ২৫০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ৪০০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ১৫০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ৪০ গ্রাম

🏝️ ২০ বছর বা তার বেশি বয়সী গাছের জন্য:

  • পঁচা গোবর/ভার্মি কম্পোস্ট: ৪০ কেজি

  • ইউরিয়া: ১৫০০ গ্রাম

  • টিএসপি: ৭৫০ গ্রাম

  • এমওপি: ৩০০০ গ্রাম

  • জিপসাম: ৫০০ গ্রাম

  • জিংক সালফেট: ২০০ গ্রাম

  • বোরিক এসিড: ৫০ গ্রাম

🌿 জৈব সার ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রস্তুত ফর্মুলা

জৈব সার গাছের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখে। নিচে জৈব সার তৈরির একটি কার্যকরী ফর্মুলা দেওয়া হলো:

✅ জৈব সার তৈরির ফর্মুলা (প্রতি গাছের জন্য):

  • পঁচা গোবর / ভার্মি কম্পোস্ট – ৫ কেজি

  • হাড়গুঁড়া – ২০০ গ্রাম

  • নিমখৈল – ১ কেজি

  • কেঁচো কম্পোস্ট – ৫ কেজি

  • ট্রাইকোডার্মা মিশ্রিত বায়ো সার – ৫০০ গ্রাম

ব্যবহার পদ্ধতি: ভালোভাবে উপকরণগুলো মিশিয়ে আগেই প্রস্তুত করে সারি সারি মাটির নিচে প্রয়োগ করুন।

Coconut tree pest control

🐞 অধ্যায় ২: গন্ডার পোকা দমন পদ্ধতি

গন্ডার পোকা (Rhynchophorus ferrugineus) নারিকেল গাছের অগ্রভাগ ছিদ্র করে প্রবেশ করে এবং কচি অংশ খেয়ে ফেলে। এতে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়।

🔍 পোকার পরিচিতি

  • লম্বায় ৩০-৫০ মিমি

  • মাথায় গন্ডারের মতো শিং থাকে

  • জন্ম নেয় গোবর বা পচা আবর্জনায়

🧬 জীবনচক্র

  • স্ত্রী পোকা ১০০-১৫০টি ডিম পাড়ে

  • ১২-২০ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়

  • ৪-৫ মাসে পূর্ণবয়স্ক হয়

  • একটি জীবনচক্র ১০ মাসের

❌ ক্ষতির লক্ষণ

  • গাছের নতুন পাতায় কাঁচি দিয়ে কাটা দাগ

  • পাতা ঝুলে পড়া

  • ফুল ও ফল কমে যাওয়া

  • কখনো গাছ সম্পূর্ণ মরে যাওয়া

🔧 দমন ব্যবস্থাপনা (প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক)

🧪 রাসায়নিক পদ্ধতি:

  • গর্তে লোহার শিক ঢুকিয়ে পোকার কীড়া মেরে ফেলা

  • কেরোসিন/প্রেট্রোল/ডায়াজিনন ৫-৬ মিঃলিঃ দিয়ে গর্ত বন্ধ

  • কার্বারিল ৮৫ ডব্লিউপি (সেভিন): ২ গ্রাম/লিটার পানিতে স্প্রে

🌿 প্রাকৃতিক / জৈব পদ্ধতি:

  • গাছের চারপাশে পচা খৈল বা ভেরেন্ডা বীজ গুঁড়া পানিতে জ্বাল দিয়ে রাখা

  • আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা ধরা

  • গাছ পরিষ্কার রাখা ও নিয়মিত মাটি ঝাড়া

  • বাগানে আবর্জনা না ফেলা ও পচা উপকরণ অপসারণ

✅ অধ্যায় ৩: গাছের সুস্থতা চিহ্ন

  • পাতা সংখ্যা: ৩২-৪০টি

  • প্রতি মাসে একটি নতুন পাতা

  • পাতা লম্বা ও ঊর্ধ্বমুখী

  • ফুল ও ফল স্বাভাবিক হারে বের হওয়া

  • পাতা হলুদ হয়ে শুকানোর আগে কাটা যাবে না

⚠️ সতর্কতা:
পাতা যদি ২৫টির নিচে নেমে যায়, গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০টির নিচে নামলে গাছ ফুল ফল দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

🔍 উপসংহার

সঠিক সার ব্যবস্থাপনা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি নারিকেল গাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ও উন্নত ফলন পাওয়া সম্ভব। আমরা যদি জৈব সার এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে একদিকে যেমন মাটির গুণগত মান বজায় থাকবে, অন্যদিকে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমে আসবে।

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *