Cultivation of litchi in roof gardens – ছাদ বাগানে লিচু চাষ।

Cultivation of litchi in roof gardens

গন্ধ ও স্বাদের জন্য দেশ-বিদেশে লিচু জনপ্রিয়। গাছ মাঝারি আকৃতির, সুগন্ধ ও টকময়ু স্বাদের জন্য ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। চাহিদার তুলনায় আমাদের দেশে লিচুর উৎপাদন অনেক কম। লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। ইংরেজি নাম Litchi/Lychee এবং বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensis। লিচু মাঝারি জাতের গাছ হওয়ায় ছাদ বাগানে চাষ করা সম্ভব। বোলতা, মৌমাছি, বিছা পোকা এসব কামড়ালে লিচুর পাতার রস ব্যবহার আমাদের লোকায়ত চিকিৎসার অনেক পুরোনো পদ্ধতি। কাশি, পেটব্যথা, টিউমার এবং গ্লান্ডের বৃদ্ধি কমাতে লিচু ফল কার্যকর। চর্মরোগের ব্যথায় লিচু বীজ ব্যবহার করা হয়। পানিতে সিদ্ধ লিচুর শেকড়, বাকল ও ফুল গলার ঘা সারায়। কচি লিচু শিশুদের বসন্ত রোগে এবং বীজ অম্ল ও স্নায়ুবিক যন্ত্রণার ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাকল ও শেকড়ের কৃাথ গরম পানিসহ কুলি করলে গলার কষ্ট দূর হয়। অনেক জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, গুটি, মাদ্রাজি, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, বেদানা, কদমী সবচেয়ে ভালো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ৩টি লিচুর জাত উদ্ভাবন করেছে: বারি লিচু-১, বারি লিচু-২ ও বারি লিচু-৩। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও বেশ কিছু লিচুর চাষ হয়ে থাকে।

ছাদে লিচুর চাষ পদ্ধতি :   ছাদে লিচুর চারা/কলম লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে লিচু গাছের কলম রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে

না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে লিচু কলম রোপণ করলে কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। লিচু কলম লাগানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো গাছের যে ডালে লিচু ধরে সেই ডালের কলম লাগানো। তাতে করে দ্রুত লিচুর কলম থেকে ছাদ বাগানে লাগানো লিচু গাছ থেকে ফল পাওয়া সম্ভব।

 অন্যান্য পরিচর্যা :   বিভিন্ন পরিচর্যা সহ প্রতিবছর দু’বার সার প্রয়োগের জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।

লিচুর বিশেষ পরিচর্যা :

 ডাল ছাঁটাইকরণ :   গাছের প্রধান কাণ্ডটি যাতে ৩ থেকে ৫ ফুট সোজাভাবে বাড়তে পারে, সেদিকে লক্ষ রেখে কলম রোপণের ২ থেকে ৩ বছর পর গোড়ার দিকের সমস্ত ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এছাড়া গাছের রোগাক্রান্ত, মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালাও কেটে ফেলতে হবে। মুকুল ভাঙন কলম চারার ক্ষেত্রে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রথম ৩ বছর পর্যন্ত মুকুল আসলে তা ভেঙে দিতে হবে। তবে ছাদ বাগানের গাছের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়। এছাড়া গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধির জন্য ২ ফুট পর্যন্ত ডগা ভেঙে দিতে হয় এবং গাছ ছোট হলে বাঁশের ঠিকা দিতে হবে। ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে গাছকে বেশি বাড়তে না দিয়ে ঝোপালো আকৃতির করে রাখলে তা থেকে বেশ লিচু পাওয়া সম্ভব।

লিচুর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ:

ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় এ পোকা ফলের বোঁটার নিকট দিয়ে ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এরা ফলের শাঁস খায় না, তবে বোঁটার কাছে বাদামি রঙের এক প্রকার করাতের গুঁড়ার মতো পদার্থ উৎপন্ন করে। এতে ফলের বাজারমূল্য কমে যায়। এ পোকা দমনের জন্য রিপকর্ড ১০ ইসি/সিমবুশ ১০ ইসি/সুমিসাইডিন ২০ ইসি ডেসিস ২.৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি. হারে মিশিয়ে ফলের মার্বেল অবস্থা থেকে শুরু করে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন পূর্বে শেষ স্প্রে করতে হবে; নইলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর হবে।

লিচুর মাকড় বা মাইট:

 লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতার নিচের দিক লাল মখমলের মতো হয়। পরবর্তীতে পাতা দুর্বল হয়ে মরে যায় এবং ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না। আক্রান্ত ফুলে ফল হয় না। ফল সংগ্রহের পর আক্রান্ত অংশ ভেঙে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া ক্যালথেন এমএফ অথবা নিউরন ৫০০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. পরিমাণ মিশিয়ে নতুন পাতায় ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অথবা থিওভিট: ৮০ ডব্লিউ জি: প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

Lychee spider or mite

চিত্র: লিচুর মাকড় বা মাইট

 বাদুড় :  লিচুর প্রধান শত্রু বাদুড়। ফল বাড়তে থাকার সময়ে একরাতের অসাবধানতায় সব ফল নষ্ট করে ফেলতে পারে। মেঘলা রাতে বাদুড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্ত গাছ জালের সাহায্যে ঢেকে দিয়েও বাদুড়ের আক্রমণ কমানো যায়। বাগানে গাছের ওপর দিয়ে শক্ত ও চিকন সুতা বা তার টাঙিয়ে রাখলে বাদুড়ের চলাচলে সমস্যা হয়।

Litchi bats and their use of nets

 চিত্র: লিচুর বাদুড় ও তার প্রতিকারে নেটের ব্যবহার

 লিচুর রোগবালাই দমন:

 পাউডারী মিলডিউ:

লিচুর মুকুলে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত মুকুল নষ্ট হয় ও ঝরে পড়ে। গাছে মুকুল আসার পর টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা থিওভিট ৮০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

 লিচুর অ্যানথ্রাকনোজ বা ফল পচা রোগ:

 প্রথমে ফলের বোঁটার দিকে পানি ভেজা পচা দাগের সৃষ্টি হয় যা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়ে সব ফল পচিয়ে ফেলে এবং একসময় ফল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। সাধারণত ফলের পোকার ছিদ্রপথ দিয়েও রোগের জীবাণু প্রবেশ করে এবং আর্দ্র ও বৃষ্টিপাতযুক্ত আবহাওয়ায় দ্রুত পচন ঘটায়।

তিকার :   লিচু বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে গাছের নিচে মরা পাতা, ফল ও আগাছা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পোকা দমনের জন্য লিচু মটরদানার আকৃতি হলে সাইথ্রিন ১০ ইসি অথবা সুমিসাইডিন ২০ ইসি অথবা ডেসিস ২.৫ প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে সেই সাথে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক

যেমন ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে একত্রে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন আগে শেষ স্প্রে প্রয়োগ করতে হবে।

পাতায় দাগ :   লিচু গাছের পাতায় অনেক সময় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। এতে আক্রান্ত গাছের পাতার আগা থেকে অর্ধেক অংশ শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার :  সাধারণত গাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব হলে এ রকম লক্ষণ দেখা যায়। সেজন্য গাছের বয়স অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো আবহাওয়ায় সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজন বোধে গাছের গোড়ায় কচুরিপানা/খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 ফল ঝরার কারণ:

 ফল ঝরে পড়া লিচু গাছের একটা প্রধান সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • প্রয়োজনীয় হরমোনের অভাব/তারতম্য।
  • অপুষ্টি ও খরা।
  • রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ।
  • ঝড়-বাতাস।

 প্রতিকার:

  • সুষম সার ও নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
  • গাছে ফল যখন মটরদানার সমান হয়, তখন ১ বার এবং যখন মার্বেল আকার হয় তখন ১ বার প্লানোফিক্স/মিরাকুলান/ ফ্লোরা অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
  • লিচুর রোগ ও পোকামাকড় যথাসময়ে সঠিকভাবে দমন করতে হবে।

 লিচুর ফল ফেটে যাওয়ার কারণ:

ফল ঝরে পড়ার মতো লিচুর ফল ফেটে যাওয়াটাও একটা বড় ধরনের সমস্যা। এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হলো:

 ১. গ্রীষ্মকালে পর্যায়ক্রমে শুদ্ধ আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলে উচ্চ তাপমাত্রা এবং নিম্ন আর্দ্রতাসম্পন্ন আবহাওয়ায় লিচুর শাঁস দ্রুত বাড়ে এবং সেই তুলনায় ফলের খোসা দ্রুত বাড়তে না পারার ফলে অনেক সময় ফল ফেটে যায়।

২. লিচু পাকার সময় আবহাওয়া শুষ্ক হলেও ফল ফেটে যেতে পারে।

চিত্র: লিচুর ফল ফেটে যাওয়া

 প্রতিকার:

১. গাছে ফল ধারণের পর থেকেই সেচের ব্যবস্থা করতে হবে এবং গোড়ায় কচুরিপানা/খড় দ্বারা ঢেকে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. জমিতে খড় বিছানো বা মালচিং মাটিতে সার কম থাকলে লিচু গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। সম্ভব হলে রোপণের ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বর্ষার শেষে সার দিয়ে সেচ দেওয়ার পরপরই খড় বা শুকনো ঘাস/আগাছা বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিলে গাছের শিকড় বাড়ে ও শক্তিশালী হয়, মাটিতে রস ধরে রাখা যায়। এতে আগাছা দমন হয় এবং গাছের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয়।

কলমের প্রাপ্তিস্থান :   বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জাতের লিচুর কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও লিচুর কলম সংগ্রহ করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *