Cultivation of wood litchi in roof gardens – ছাদ বাগানে আঁশফলের চাষ

আঁশফলের চাষ

 আঁশফল দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। কিন্তু লিচুর চেয়ে বেশ ছোট। আঁশফলকে কোনো কোনো এলাকায় কাঠ লিচু নামেও অভিহিত করা হয়। এটার ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Longan ও Nephelium longana। আকারে ছোট হলেও এ ফল খেতে বেশ মিষ্টি লাগে। আঁশফলের শাঁস সাদা, কচকচে যা কালো বীজকে ঢেকে রাখে। লিচু শেষ হওয়ার পরপরই আঁশফল পাওয়া যায়। ফলে আঁশফলের কদর একেবারে কম নয়। তবে আঁশফলও এখনো দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই ছাদ বাগানে দুই একটি করে গাছ লাগিয়ে এই ফলের বিলুপ্তি সাধন আমাদের সময়ের দাবি। তবে সুখবর হলো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বারি থেকে বারি আঁশফল-১ ও বারি আঁশফল-২ নামে দুটি পৃথক জাত অবমুক্ত করা হয়েছে এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টার থেকে বাউ আঁশফল-১ ও বাউ আঁশফল-২ নামে আরো দুটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। আঁশফলে আমিষ, শর্করা এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। এই ফলের রয়েছে বেশ কিছু ঔষধি গুণাগুণ। আঁশফল উদারময় নিবারক ও ক্রিমিনাশক। চীনারা আঁশফলকে বলকারক ফল মনে করে থাকেন। ইন্দো-চীনে আঁশফল থেকে বলকারক টনিক তৈরিরও খবর পাওয়া যায়। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় আঁশফলকে অবহেলা করবার অবকাশ নেই। সাধারণ ফল চাষের মতোই এটি বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করা সম্ভব।

 বারি আঁশফল-১:

এটি একটি উচ্চফলনশীল ও নিয়মিত ফল প্রদানকারী জাত। গাছ খাটো, ছড়ানো ও অত্যধিক ঝোপালো। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে ফুল আসে এবং শ্রাবণ মাসের শেষার্ধে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফল ছোট, গোলাকার, বাদামি রঙের, শাঁস সাদা কচকচে এবং খুব মিষ্টি। জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ করা যায়।

বারি আঁশফল-Bari fiber

চিত্র: বারি আঁশফল

বারি আঁশফল-২:

এটিও একটি উচ্চফলনশীল ও নিয়মিত ফলদানকারী জাত। গাছ খাটো, ছড়ানো ও অত্যধিক ঝোপালো। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছে ফুল ধরে এবং শ্রাবণ মাসের শেষার্ধে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়। ফল তুলনামূলক বড়, বাদামি রঙের, শাঁস সাদা, কচকচে এবং খুব মিষ্টি। বীজ খুব ছোট, খোসা পাতলা, বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ করা যায়। ফলে উপর্যুক্ত দুটো জাতের আঁশফল খাটো, ছড়ানো এবং ঝোপালা আকৃতির হওয়ায় অনায়াসে এই জাত দুটি ছাদ বাগানের টবে চাষ করা যেতে পারে।

 আঁশফলের বংশবিস্তার:

বীজ থেকে সহজেই চারা তৈরি করা যায়। বীজ থেকে উৎপাদিত গাছ হুবহু মাতৃ গুণাগুণ বহন করে না এবং ফল ধরতে দীর্ঘ সময় (৭-৮ বছর) লাগে। অঙ্গজ বংশবিস্তারই আঁশফলের জন্য অনুমোদিত বংশবিস্তার পদ্ধতি। লিচুর মতোই গুটি কলম হচ্ছে অঙ্গজ বংশবিস্তারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সফলতার হার বেশি (৮০-৯০%)। তবে গুটিকলমের মাধ্যমে তৈরি গাছের শিকড়ের বিস্তার কম থাকায় এবং প্রধান মূল না থাকায় সহজেই বাতাসে উপড়ে যায়। অপরদিকে একটি গাছ হতে অল্প কয়েকটি গুটি কলম করা যায়। তাই গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে চারা তৈরি করা উত্তম। সাধারণত ৮-১২ মাস বয়সের আঁশফলের চারা রুটস্টক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মে-জুন মাসে কাঙ্ক্ষিত মাতৃগাছ হতে ৪-৫ মাস বয়স্ক সায়ন সংগ্রহ করে ফাটল (Cleft grafting) পদ্ধতিতে জোড়া লাগানো হলে সফলতা ও কলমের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং এ পদ্ধতিতে উৎপন্ন কলম হতে ৩-৪ বছরে ফল পাওয়া যায়।

 ছাদে আঁশফলের চাষ এবং পরিচর্যা:

ছাদে আঁশফলের চারা/কলম চারা লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম বা একই মাপের সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগেও আঁশফল লাগানো যেতে পারে। পট বা টব নির্বাচনের পরে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য

“ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে আঁশফলের কলম/কাটিং রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অত্র পুস্তকের “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের “বিভিন্ন বয়সি ফল গাছের জন্য বছরভিত্তিক সার প্রয়োগের মাত্রা” অনুচ্ছেদে বর্ণিত নিয়মাবলি অনুসরণ করুন। অধিকন্তু অন্যান্য পরিচর্যার ব্যাপারেও “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের অপরাপর বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ ধরনের কোনো রোগ পোকামাকড়ের তেমন কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। আঁশফলে রোগবালাই ও পোকামাকড় তেমন একটা নেই বললেই চলে। তবে সাদা মাছি, থ্রিপস, ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ, জাবপোকা দেখা দিলে অন্যান্য ফল চাষে যে ধরনের ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে, সেটা অনুসরণ করতে হবে। তবে লিচুর চাষের মতো আঁশফলে মাকড় বা মাইট লাগবার তেমন রেকর্ড পাওয়া যায় না। Crops in Sandy Soil

পোকামাকড় রোগবালাই দমন:

 আঁশফলে সচরাচর তেমন কোনো পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ফলের পরিপক্ব পর্যায়ে ফিঙে, দোয়েল ও বাদুড় ফল খেয়ে প্রচুর পরিমাণ ফল নষ্ট করে থাকে। তাই প্রত্যেক গাছ আলাদাভাবে বা সম্পূর্ণ বাগানে নাইলন নেট দিয়ে ঘিরে ফল রক্ষা করা যেতে পারে।

 কালো পিঁপড়া:

 এ ফল বেশি মিষ্টি বিধায় গাছে থাকা অবস্থায় কালো পিঁপড়া বীজ ও খোসা বাদ দিয়ে ফলের সব শাঁস খেয়ে ফেলে। বাগানের আশেপাশে পিঁপড়ার বাসা থাকলে তা ধ্বংস করে ফেলতে হবে। অথবা পিঁপড়া মারার কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

ফল সংগ্রহ:

সম্পূর্ণ পাকার পর ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আবার বেশি পেকে গেলে গাছ থেকে ফল ঝরে পড়ে এবং ফেটে যায়। তাই সময়মতো আঁশফল সংগ্রহ করতে হবে। তাই সঠিক পরিচর্যা করে সঠিক জাত নিরূপণ করে আঁশফল চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব। এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। সুতরাং, আঁশফল হতে পারে আগামীর সম্ভাবনাময় লিচুর বিকল্প একটা ফল।

 কলমের প্রাপ্তিস্থান:

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জাতের আঁশফলের কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও আঁশফলের কলম সংগ্রহ করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *