আমাদের দেশের ফল বাজারগুলোতে বিদেশি ফলের প্রাচুর্য দেখা যায়। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে, যেখানে আমাদের দেশের মতো এত বেশি রকমের ফল জন্মে। আবার প্রত্যেক ফলের রয়েছে নানারকম জাতবৈচিত্র্য। স্বাদ ও পুষ্টিমানের বিচারে কুল বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ফল। কুলের ফল ও পাতা বাতের জন্যে উপকারী। ফল রক্ত শোধন, রক্ত পরিষ্কার ও হজমিকারক। শুকনা কুলের গুঁড়া এবং আখের গুড় মিশিয়ে চেটে খেলে মেয়েদের সাদা স্রাবের উপশম হয়।
বাউ কুল-১: বাউ কুল-১ হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্পের (Fruit Tree Improvement Project-FTIP) জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি জাত। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৯০ গ্রাম এবং এ কূলের বীজ এতটাই ছোট যে, এর ৯৫-৯৭ ভাগ অংশ খাওয়া যায়। কাজেই বাউ কুলের মূল আকর্ষণ এর আকার এবং ভক্ষণযোগ্য অংশ। ফল ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্যে ৫-৭ সেমি. এবং ব্যাস ৫-৬ সেমি. পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি থোকায় ২-৭টি পর্যন্ত ফল ধরে, বীজের ওজন ৩-৫ গ্রামের মতো। এর মিষ্টতা ২৪.১ টিএসএস অর্থাৎ এ কুলের মিষ্টতা অন্যান্য সকল কুল অপেক্ষা বেশি। বাউ কুল বছরে ২/৩ বার ধরে। এ কুল দেখতে আমাদের দেশের ঢাকা-৯০ বা ডাব কুলের মতো, আকারে অনেক বড় এবং অনেক বেশি ফলন দিয়ে থাকে। বাউ কুল টেবিল ফুট (Table Fruit) হিসেবে আপেলের পরিবর্তে খাওয়া যায়। এ কুলের রং সবুজাভ হলুদ এবং পাকা কুল অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। এ কুলের গাছ ঝোপালো বিধায় বাড়ির ছাদ, বাগানে, মাটির টব অর্ধ ড্রাম প্রভৃতি স্থানে সহজে চাষ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে এ কুল অতিমাত্রায় লাভজনক। বাউ কুলের প্রকৃত মাতৃগাছের কলম সংগ্রহের জন্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কার্যালয়ে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।
চিত্র: বাউ কুল-১
আপেল কুল : আপেল কুলের অন্যতম আকর্ষণ হলো এ কুলের মজাদার রং। এ দেশে আপেল হয় না বটে, তাই কুল গাছ থেকে যদি সবুজ বা হলুদ কুলের পরিবর্তে গাছ আপেলের মতো রঙের কুল ঝুলতে থাকে, তাতে সত্যি সত্যিই অবাক হবার মতো একটা ব্যাপার বটে। সম্প্রতি এমনই আকর্ষণীয় চোখ জুড়ানো রূপের একটি কুলের জাত উদ্ভাবন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর। মূলত এ জাতটির সন্ধান মেলে বছর কয়েক আগে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর জঙ্গল থেকে, এরপর ফলের জাত উন্নয়নের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কৃষিবিজ্ঞানীগণ শেষ পর্যন্ত এটিকে জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে আপেল কুল হিসেবে মুক্তায়িত করেন। খাদ্য ও শক্তির বিচারেও আপেলের চেয়ে কুলের মধ্যে প্রায় আড়াইগুণ শক্তি বেশি রয়েছে। বাংলাদেশে সচরাচর প্রাপ্ত কুলের মধ্যে রং, স্বাদ এবং মিষ্টতার সার্বিক বিচারে আপেল কুলের জাতটিকে সেরা বললে অত্যুক্তি হবে। প্রতিটি কুলের গড় ওজন ২৫-৩০ গ্রামের মতো। যেকোনো মাটিতে এ কূল ভালো জন্মে, তবে খোলামেলা রোদযুক্ত স্থানে ভালো হয়। ফলের গায়ে যত বেশি রোদ পড়ে, কুলের রং তত বেশি উজ্জ্বল হয়। আপেল কুলের সংরক্ষণ গুণও বেশ ভালো। অন্যান্য কুলের মতো আপেল কুলও ছাদ বাগানে হাফ ড্রামে চাষ করা যায়।
চিত্র: আপেল কুল
বল সুন্দরী বুল: বল সুন্দরী কুল দেখতে ঠিক আপেলের মতো। ওপরের অংশে হালকা সিদুর রং। খেতে সুস্বাদু। ফলটি রসালো ও সুমিষ্ট। বাউকুল ও আপেল কুলের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এই কুল চাষে সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রহী হচ্ছেন দেশের কৃষক। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ওই কুল চাষে সাফল্য পেয়েছেন এক কৃষক। এতে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে অন্য চাষিদের মধ্যেও। স্থানীয়ভাবে বল সুন্দরী কুল বলা হলেও
এটির প্রকৃত নাম বাউ-৩। তবে অনেকে বারমী কুল নামে এটিকে চেনে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে নতুন এ জাতের কুল উদ্ভাবন হয়।
চিত্র: বল সুন্দরী কুল ১
চিত্র: বল সুন্দরী কুল ২
বাউকুলের আকার ও আপেল কুলের বর্ণ সংকরায়ন করে নতুন জাতের এ কুলটি উদ্ভাবন করা হয়
কাশ্মীরি আপেল কুল: কাশ্মীরি আপেল কুল দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। স্বাদ হালকা মিষ্টি, অনেকটা বাউকুলের মতো। এর আগে আপেল কুল চাষ হলেও নতুন জাত কাশ্মীরি আপেল বরইয়ের চাষ দেশে এবারই প্রথম। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউ কুলের থেকে আকারে বেশ বড় এই কাশ্মীরি আপেল কুল। নতুন এ জাতের কুল চাষ করে দেশের অনেক কৃষক বেশ সফল হয়েছেন। এই কুলের চারা প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে কোনোভাবে আনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। জমিতে বা হাফ ড্রামে এ কুলের চারা রোপণের পর মাত্র নয় মাস পর ফল আসে। একেকটি গাছে বাম্পার ফল হয় বলে কুল চাষি থেকে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
চিত্র: কাশ্মীরি আপেল কুল
ছাদে কুলের কলম লাগানোর পদ্ধতি : ছাদে কুলের কলম লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে কুলের কলম রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতেও দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে কুল কলম রোপণ করলে কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
অন্যান্য পরিচর্যা : বিভিন্ন পরিচর্যা সহ প্রতিবছর দু’বার সার প্রয়োগের জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।
কুল গাছের অন্যান্য পরিচর্যা : মার্চের শেষের দিকে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় মূল কাণ্ড রেখে বাকি ডাল ছেঁটে দিতে হবে। কাটা অংশটিতে আলকাতরা দিয়ে দিতে হবে। এরপর কর্তিত গাছে নতুন কুশি বের হবে। প্রতিবছর কুলের ডাল ছাঁটাই না করলে কুল গাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত কুল পাওয়া যাবে না। কুল চাষের ক্ষেত্রে ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন কুল বাগানের মধ্যে বা আশেপাশে কোনো জংলী বরই বা কুল গাছ না থাকে, কারণ এগুলো নানান রোগের এবং মাছি পোকার পোষক হিসেবে কাজ করে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা :
কুল চাষে আগে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা না গেলেও বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং কুল চাষ বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু পোকা কুলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে কুলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ফসলটি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এ পোকামাকড়ের মধ্যে কুল বাগানে ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা ও টিউব স্পিটল বাগ পোকা অন্যতম।
ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা:
ফল ছিদ্রকারী উইভিল কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুলের উন্নত জাতে এ পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। পোকার সদ্যজাত লার্ভা হালকা হলুদ বর্ণের এবং এদের পা থাকে না। পূর্ণবয়স্ক পোকা গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্ণের হয়। পূর্ণবয়স্ক পোকা কচি ফলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা ও পিউপা থেকে পূর্ণরূপ ধারণ করে।
ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা যেভাবে কুলের ক্ষতি করে থাকে:
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বগুড়ার সূত্র মতে, সদ্যজাত লার্ভা কচি ফলের বীজে আক্রমণ করে এবং সম্পূর্ণ বীজ খেয়ে ফেলে।
আক্রান্ত ফলের নিচে কালো দাগ পড়ে এবং বীজের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফল ছোট গোলাকার হয় এবং ফ্যাকাশে ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে বা গাছ শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ফলে পোকার লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণবয়স্ক পোকার মল দেখা যায়। ফলের ভেতরের অংশ খাওয়ার পর গোলাকার ছিদ্র করে পোকা বের হয়ে আসে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে বাগানের সব গাছের ফল আক্রান্ত হয়। তবে আপেল কুল ও বাউ কুলে আক্রমণ বেশি হয়। সাধারণত গাছে ফুল আসার পর এ পোকার আনাগোনা দেখা যায় এবং পরাগায়নের পর গাছে ফল ধরা শুরু হলে পোকার আক্রমণ শুরু হয়।
চিত্র: কুলের ফল ছিদ্রকারী পোকা
এ পোকা দমনের জন্য যা করতে হবে:
কুল বাগানের আশেপাশের ঝোপ-জঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কুল গাছে অসময়ে আসা ফুল ও কুঁড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে। গাছ ও মাটিতে পড়ে যাওয়া আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণবয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করতে হবে। বেশি আক্রান্ত এলাকায় ফুল ধরার আগেই সব বাগান ও এলাকা অনুমোদিত কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক বা ডাইমেথোয়েট জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু পোকাটি ফলে ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ফলের ভেতর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় সেজন্য আক্রমণের আগেই পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য পরাগায়নের পর ফল ধরা শুরু হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
টিউব স্পিটল বাগ:
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বগুড়ার সূত্র মতে, এ পোকা কুল গাছের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে থাকে এবং এর আগে কখনও এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। পোকার নিম্ফগুলো সরু, লম্বা চুনযুক্ত টিউবের মধ্যে অবস্থান করে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। নিক্ষগুলো টিউবের মধ্যে তাদের তৈরি ফ্লুয়িডে (fluid)
নিজেকে লুকিয়ে রাখে এবং টিউবে এদের মাথা নিচে এবং পেট ওপরে রাখে। নিম্নগুলোর পেটে একটি বর্ধিত প্লেট থাকে যা টিউবের খোলা প্রান্তে দরজা হিসেবে কাজ করে এবং টিউবকে বন্ধ করে দেয়।
ক্ষতির প্রকৃতি:
পূর্ণবয়স্ক পোকা এবং নিম্ফ ফুল থেকে রস চুষে খায়। আক্রান্ত ফুল সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায় এবং ফল ধারণের অনুপযোগী হয়। অধিক আক্রান্ত গাছ সম্পূর্ণরূপে ফল ধারণে ব্যর্থ হয়। এরা মধু রস নিঃসৃত করে যেখানে শুটিমোল্ড জন্মে। ছায়াযুক্ত স্থানে আক্রমণ বেশি হয়। সাধারণত কুল গাছে ফুল আসার সময় আক্রমণ বেশি হয় এবং টিউবের মধ্যে নিম্ফ দেখা যায়। পরবর্তীতে ফুল ধরা শেষ হলে এরা টিউব ছেড়ে চলে যায় এবং গাছে শুধু খালি টিউব পড়ে থাকে।
দমন ব্যবস্থাপনা:
জমি সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে ডালপালায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়। ছায়াযুক্ত জায়গায় কুল চাষ না করাই উত্তম। হাত বা শক্ত লাঠি দিয়ে টিউবগুলো নিম্ফসহ ধ্বংস করতে হবে। যেহেতু ফুল ধরার সময় এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়, সেজন্য গাছে ফুল আসার সময়ে কাণ্ড বা শাখায় টিউব দেখামাত্র সাইপারমেথ্রিন বা ফেনভেলারেট জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কুলের ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ:
কচি ফলের ওপর সাদা সাদা নরম নরম ছাতার মতো এক ধরনের পোকা দেখা যাচ্ছে। এগুলোকে বলে ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ। আধুনিক জাতের কুল চাষে এটি একটি অতি ক্ষতিকর পোকা। নারিকেলি কুল ও বাউকুলে এ পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এ পোকা দেখতে অনেকটা সাদা, মোমের প্রলেপ দিয়ে ঢাকা। ক্ষুদ্র পোকারা গুচ্ছাকারে অনেকটা ক্ষুদ্র তুলার দলার মতো দেখায়। পাতার গোড়ায়, কচি ডালের
ভাঁজে ও ফলের বোঁটায় বসে রস চুষে খায়। হাতে সামান্য চাপ দিলেই গলে যায়। এ পোকার আক্রমণে কচি ফলের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতাসহ ডগা কুঁচকে যায় বা মুড়িয়ে যায় এবং অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গাছটাই পোড়ার মতো বা ভাইরাস আক্রমণের মতো দেখায়। এদের শরীর থেকে বের হওয়া মধুর মতো চটচটে আঠালো পদার্থ গাছের পাতায় পড়ে এবং পাতায় ধূসর রঙের মতো একটা আবরণের সৃষ্টি করে। এসব রস মিষ্টি। তাই সে রস খেতে পিঁপড়া ভিড় জমায়। আক্রান্ত গাছে পিঁপড়ার আনাগোনা দেখলেই বুঝতে হবে গাছে ছাতরা পোকা লেগেছে।
ব্যবস্থাপনা:
এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে অল্প আক্রমণ হলে নরম কাপড়ে কেরোসিন বা পেট্রল মাখিয়ে তা দিয়ে আক্রান্ত অংশ মুছে দিতে হবে। এতে পোকা মরে যাবে। বাগানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং আক্রান্ত ফল, ডাল ও পাতা কেটে পুড়িয়ে ফেলে এ পোকার আক্রমণ অনেক কমানো যায়। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০ গ্রাম গুঁড়া সাবান পানিতে গুলে স্প্রে করেও পোকা দমন করা যেতে পারে। আক্রমণ বেশি ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্ত গাছ ও তার পাশের গাছে অ্যাডমায়ার বা রিজেন্ট কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিলিটার গুলে ডাল ও পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ১০-১৫ দিন পরপর দুই তিন বার একইভাবে স্প্রে করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে একই বাগানে আর এ পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এই পোকা মাটি দিয়ে হেঁটে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যায়, সেহেতু গাছের গোড়ায় ১-৩ ইঞ্চি আলকাতরা, পিচ, টিনের পাত, আঠালো মাটি বা অন্য কোনো অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী আঠালো দ্রব্য গোল করে দিলে পোকা বিস্তার ঘটাতে পারে না।
কুলের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা:
কুলের পাউডারী মিলডিউ:
কচি কুলের ওপর সাদা গুঁড়োর মতো আবরণ পড়ে একটি রোগের কারণে। কুলের এটি একটি সাধারণ রোগ। সাদা গুঁড়োর মতো আবরণ পড়ে বলে এ রোগকে সাদা গুঁড়া রোগ বা পাউডারী মিলডিউ রোগ বলে। কুল গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এ রোগ আক্রমণ করে। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশের ওপর সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমগ্র পাতা, ফুল ও ফলকে আবৃত করে এবং শেষে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। এতে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। শুধু কচি ফলেই নয়, অনেক সময় ফল পাকার সময়ও এ রোগ আক্রমণ করে। তখন আক্রান্ত ফল ফেটে যায়। এতে ফল বাজারজাত করার অযোগ্য হয়ে যায়।
চিত্র: কুলের পাউডারী মিলডিউ
ব্যবস্থাপনা :
এ রোগ যাতে বাগানে না হতে পারে, সেজন্য গাছ ও বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, কুলগাছের মরা, শুকনো ও রোগাক্রান্ত ডালপালা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর রোগ দেখা দিলে থিওভিট প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম অথবা ডাইথেন এম৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে পাঁচ মিলি পরিমাণ মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর দুই-তিন বার গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কুলের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ:
কুলের ওপর কালো কালো দাগ পড়ছে অন্য একটি রোগের কারণে। তবে কুলের জন্য এ রোগটি এ দেশে নতুন। প্রাথমিকভাবে এ রোগকে অ্যানথ্রাকনোজ বা শুকনো রোগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কচি ফলেই এ রোগ আক্রমণ করছে। খুব ছোট ফলও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগের আক্রমণে ফলের ওপর প্রথমে বিন্দু বিন্দু কালো
কালো দাগ পড়ে। দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। দাগগুলো প্রায় গোলাকার। প্রথমে বিক্ষিপ্তভাবে দাগ পড়ে, পরে অনেক দাগ আবার একত্রে মিলে বড় দাগ তৈরি করে। আক্রান্ত ফল আশানুরূপ বড় হতে পারে না, সবুজ রং ফিকে হয়ে আসে এবং অনেক ফল ঝরে পড়ে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা:
এ রোগ দেখা দিলে গাছের নিচে ঝরে পড়া রোগাক্রান্ত ফল একত্র করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। এমনকি সম্ভব হলে আক্রান্ত ফল হাত দিয়ে গাছ থেকে তুলে একইভাবে ধ্বংস করতে হবে। আক্রমণ কম থাকলে এরূপ কাজ করে সহজে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কচি ফল ও গাছে টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে পাঁচ মিলিলিটার অথবা ডায়থেন এম৪৫ প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে আর এ রোগ কুল গাছে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গাছ ও বাগান পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এমনকি গাছের নিচে ঝরে পড়া মরা পাতা কিছুদিন পরপর পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
কলমের প্রাপ্তিস্থান:
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো জাতের কুলের কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও কুলের কলম সংগ্রহ করতে পারেন।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet