Dos of vegetable cultivation – শাক সবজি চাষের করণীয়।

Dos of vegetable cultivation

শাক সবজি চাষের গোড়ার কথা

 গাছ:

 গাছ মানুষের পরম বন্ধু জগতের সমস্ত প্রাণি কোন না কোনভাবে গাছ থেকে উপকৃত হয় এবং পৃথিবীতে গাছ না থাকলে পৃথিবী একটি শুষ্ক মরুগ্রহে পরিণত হত। প্রকৃতি অকৃপণভাবে গাছ লতাপাতা, ফুল-ফলে পৃথিবীকে ভরিয়ে রেখেছে। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর ক্ষেত্রেই গাছের দান অনস্বীকার্য। আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য যা কিছু দরকার তার সবকিছুই আমরা পাই গাছ থেকে। এমনকি সমস্ত রোগ নিবারণের ঔষধও গাছ থেকেই পাওয়া যায়। সুতরাং গাছকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নিত্যনতুন গাছ রোপণের মাধ্যমে পৃথিবীর বনভূমিকে রক্ষা করা সব মানুষেরই একান্ত কর্তব্য। সভ্যতার আদিকালে মানুষ গাছের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল। বুঝেছিল গাছকে সন্তানস্নেহে লালন করলেই তার মঙ্গল, সেইসঙ্গে শিখেছিল বিভিন্ন ধরণের ফসল ও শাকসবজির ব্যবহার ও তাদের বীজ ও চারা রক্ষার পদ্ধতি। সেই শিক্ষায় আজও মানুষকে তার আহার যুগিয়ে চলেছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের প্রয়োজনও বেড়েছে। তাই শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে কৃষি বিপ্লব। সাধারণ মানুষ থেকে কৃষি বিজ্ঞানী পর্যন্ত প্রায় সকলেই কি করে আরও বেশি ফসল ফলানো যায়, কি করে জমির উর্বরতা বাড়ানো যায় তা নিয়ে আজও চিন্তা-ভাবনা করে চলেছে। কৃষিকাজ এখন আর শুধুমাত্র শৌখিন কাজ বলে বিবেচিত হয় না। কৃষি এখন পৃথিবীর এক অন্যতম বৃহৎ ও প্রয়োজনীয় শিল্পকর্ম।

 বীজতলা চারা তৈরি

 প্রায় সব রকম সবজিই সরাসরি জমিতে বপন না করে প্রথমে চারা তৈরি করতে প্রয়োজন ফসলের উপযুক্ত বীজতলা।

 বীজতলার জমি:

  • বীজতলার জমি উঁচু বা মাঝারি এবং সমতল হওয়া অবশ্যই দরকার।
  • আলো বাতাসযুক্ত, পানি দাঁড়ায় না এমন জমি অর্থাৎ জমি চারদিক যেন ঢালু হয়।
  • সেচের সুবিধা আছে এমন জায়গা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  • খুব বেশি ছায়া আছে এমন জায়গায় কখনই বীজতলা তৈরি করা উচিত নয়।
  • সাধারণ জমি থেকে বীজতলা অবশ্যই ১৫-২০ সে.মি উঁচু হওয়া দরকার।

বীজতলার মাটিঃ

  • বীজতলার মাটি ফসল অনুযায়ী দোআঁশ, এঁটেল দোআঁশ জাতীয় হালকা ও শুকনো হওয়া দরকার।
  • প্রথমে বীজতলার মাটি অন্ততঃ ৬ ইঞ্চির মত গভীর করে ভালভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • মাটি বেশি শক্ত বা ভারী হলে গোবর সার বা কম্পোস্ট সার ও ২৫ ভাগ বালি মিশিয়ে নিতে হবে।
  • মাটির সঙ্গে যেসব পাথর, কাঁকড়, নুড়ি ইত্যাদি থাকে তা অবশ্যই ভাল করে বাছাই করে ফেলে দিতে হবে।
  • বর্ষার সময় হলে বীজতলা এমনভাবে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বৃষ্টিতে বীজ ধুয়ে না যায় বা চারাগাছ পানিতে ডুবে না যায় অথবা হেলে না পড়ে।

বীজতলার আয়তন

  • কতটা জমি চাষ করা হবে তার ওপর বীজতলার আয়তন নির্ভর করে।
  • পরিচর্যার সুবিধার জন্য ৫ ফুট চওড়া ও ১০ ফুট লম্বা আয়তনের বীজতলা করা উচিত।

 সার প্রয়োগ:

  • বীজতলার মাটিতে ৫ সে.মি গভীর পর্যন্ত গোবর সার ও সুপার ফসফেট জাতীয় সার ভালভাবে মেশাতে হবে।
  • প্রতি বর্গমিটারে ৫ থেকে ১০ লিটার গোবর সার ও ১০০ গ্রামের মতো সুপার ফসফেট সার দেয়া প্রয়োজন।

* বীজ বোনার ১৫ দিন আগে সার বীজতলার উপরের মাটিতে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।

 বীজ বপন:

  • বীজ বোনার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে যাতে বীজের কোন রোগ না থাকে।
  • বীজ এমনভাবে বীজতলায় ছড়াতে হবে যাতে সমস্ত জায়গায় সমানভাবে বীজ বপন হয়।
  • ছড়ানো বীজের ওপর ঝুরঝুরে মিহি গোবর সার বা বেলে মাটি ছড়িয়ে পাতলা আস্তরণ দিয়ে ছড়ানো বীজকে ঢেকে দিতে হবে।
  • যতদিন না চারা বের হয় ততদিন হালকাভাবে নিয়মিত পানির ছিটা দিতে হবে।
  • পানি ছিটানোর জন্য ঝাঁঝরি ব্যবহার করলে ভাল হয়। ১০

 

বীজতলা গাছের পরিচর্যাঃ

  • কড়া রোদ্দুর ও বৃষ্টি থেকে বীজতলা রক্ষা করতে হলে পলিথিন বা হোগলার ডাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • শীতকাল এলে বীজ বোনার পর খড় বা চটের বস্তা দিয়ে ২/৩ দিন বীজতলা ঢেকে রাখলে তাড়াতাড়ি অঙ্কুর বের হবে।
  • চারা গাছ বের হওয়ার পর তা যদি খুব সরু ও লম্বাটে ধরণের হয় তাহলে ঝুরো মাটি গাছের গোড়ায় দিতে হবে, এতে চারাগাছ হেলে পড়বে না।
  • গাছের চারা খুব বেশি ঘন হলে লোনা ধরা রোগে চারার গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • পানি সেচ বন্ধ করে কিছু চারা তুলে ফেলে পাতলা করে দিতে হবে যাতে অন্য চারাগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস পায়।
  • স্যাঁতস্যাঁতে রোগের জন্য বীজতলার চারার পাশের আগাছা তুলে বীজতলার মাটি শোধন করা ও জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক।
  • বীজতলায় পিঁপড়ের আক্রমণ দেখা দিলে ঔষধ ছড়িয়ে দিলে পিঁপড়ে থেকে বীজ ও চারাগাছকে রক্ষা করা যায়।

চারা বসানো:  

  • বীজতলা থেকে মূল জমিতে চারা গাছ তুলে বসানোর সময় আগে হাল্কা সেচ দিয়ে নিতে হয় এতে মাটি নরম হয়।
  • শক্তকাঠি দিয়ে চারা তুলতে হবে যাতে চারাগাছের নরম শিকড়ে আঘাত না লাগে।
  • চারাগাছ গর্তে বসানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গর্তের ভিতর চারার শিকড় কুঁচকে বা বিকৃত না হয়ে যায়।
  • চারাগাছ বিকেলের দিকে হাল্কা রোদ থাকতে বসানো ভাল। বেশি বৃষ্টির পর কাঁদা জমিতে চারা কখনই বসানো উচিত নয়।
  • চারা বসানোর পর তিন চারদিন উপরে পাতলা আবরণ দিয়ে রাখতে হবে যাতে রোদের তাপ বা বৃষ্টির তীব্রতা সয়ে যায়।
  • চারা গাছ যেমন বাড়তে থাকবে তেমনি ফসলের প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে।

চাষের জমি

 চাষের জন্য জমি তৈরি করতে পরপর কতকগুলি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। যেমন-

  • জমিতে ভাল করে চাষ দেয়া।
  • মই দিয়ে শক্ত ঢেলা ভেঙে মাটিকে সমান করা।
  • সেচ বা পানি নিষ্কাশনের জন্য নালী তৈরি করা।
  • দুই নালীর মধ্যে মাদা ও ভেলি তৈরি করা।
  • নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা।
  • মাটি বেশি শক্ত হলে গাছ মাটির ভিতরে সহজে শিকড় গাড়তে পারে না। এ জন্য মাটিকে ভাল করে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করতে হয় এবং প্রয়োজনে সার মিশিয়ে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে তুলতে হয়।
  • মাটির রস থাকাকালীন চাষ দেয়াই ভাল।
  • মাটি বেশি শক্ত হলে ঢেলা থেকে যায়। সেই ঢেলা বীজ বপনের আগে ভেঙে ফেলতে হয়।
  • শেষ চাষ দেয়ার আগে জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে সার ছিটিয়ে মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।
  • পানিসেচ বা পানি নিষ্কাশনের জন্য মোটামুটি তিন মিটার দূরত্বে ২৫ সে. মি গভীর নালা কাটা দরকার। এই ধরণের দুই নালার মাঝে আড়াআড়িভাবে সমান দূরত্বে ভেলি, খুবি ইত্যাদি তৈরি করে বীজ বা চারা বপন করতে হয়।

ভেলি:

দুটি হলরেখার মধ্যবর্তী অংশকে ভেলি বলে। ভেলি দুইভাবে করা হয়।

 যথা:

  • প্রথমে ভেলি তৈরি করে নিয়ে তার উপর বীজ বোনা বা চারা লাগানো হয়।
  • মাটি সমান করার পর সারিবদ্ধভাবে চারা লাগিয়ে বা বীজ বুনে, পরে চারা বড় হলে পাশের মাটি তুলে ভেলি তৈরি করা হয়।

খুবি:

  • জমিতে বীজ বপন করা বা চারা রোপণের জন্য ছোট গর্ত করাকে খুবি তৈরি করা বলে।
  • দুটি খুবির মধ্যে দূরত্ব সাধারণতঃ ৩০ সে.মি. এর মতো হয় এবং খুবির গভীরতা ১৫ থেকে ২০ সে.মি হয়। •আলু জাতীয় ফসল খুবি করে লাগানো হয়।

 বীজতলা বা মাদা:

  • অনেক দূরত্ব রেখে বড় বড় গর্ত করে সারযুক্ত মাটি ভরে বীজ বপন বা চারা রোপণের উপযোগী করে তোলাকে মাদা তৈরি করা বলে।
  • ফসল অনুযায়ী মাদার আকৃতি, সারের পরিমাণ ও মাটির প্রকারভেদ হয়।
  • লাউ, কুমড়ো, পেঁপে ইত্যাদি মাদা তৈরি করে লাগানো হয়।

 সবজির চারা তৈরির পদ্ধতি

 বীজতলার মাটি শোধন:

বীজতলার মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, পোকা, নেমাটেড ও আগাছা দমনের প্রয়োজন। বিশেষ করে যে মাটিতে প্রতিবছর বীজ বোনার পর চারা মরে    ১২

বা পঁচে কিংবা ভালো জন্মায় না। এজন্য বীজ বোনার ৩ সপ্তাহ আগে বীজতলার মাটি শোধন করা হয়। মাটি শোধনের জন্য ৬০ মি.লি. ফরমালিন ১০ লিটার পানিতে গুলে ১ বর্গমিটার জমির মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে ১ সপ্তাহ পলিথিন চাপা দিয়ে রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে কিন্তু নেমাটোড দমন হয় না। এ ছাড়া ফরমালিন শোধিত পাটিতে কপি জাতীয় ফসলের চারা তৈরি না করা ভালো।

 বীজ সংগ্রহ:

সবসময় বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে এলাকার উপযোগী জাতের সবজি বীজ সংগ্রহ করা উচিত। নতুন জাত প্রথমেই বেশি জমিতে চাষ করা ঠিক হবে না। হাইব্রিড সবজি বীজ প্রতিবছর কিনতে হবে।

বীজশোধন:

 বীজবাহিত রোগ দমনের জন্য বীজশোধন জরুরি। অন্যথায় চারা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। শুকনো বীজ শোধনের জন্য ম্যানকোজেব ৭৫% (ডায়খেন এম- ৪৫) ৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে মিশিয়ে ঢাকনাযুক্ত কোনো পাত্রে ভরে ঝাঁকাতে হবে। আবার বীজ ভিজিয়ে শোধনের জন্য কার্বেনডাজিম-৫০% (ব্যাভিস্টিন) ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখতে হবে।

 বীজতলা তৈরি:

সবজির চারা, বিশেষ করে হাইব্রিডের চারা তৈরিতে বিশেষ পরিচর্যার দরকার হয়।

বীজতলার আকার:

এক বিঘা (৩৩ শতক) চাষের জন্য ৫ মিটার x ১ মিটার আকারের দুটি বীজতলার দরকার হয়।

 সারের পরিমান:

সারের নাম

পরিমান (প্রতি বীজতলায়)

গোবর সার

২০ কেজি

সিঙ্গল সুপার ফসফেট

৫০০ গ্রাম

মিউরিয়েট অব পটাশ

২৫০ গ্রাম

কার্বোফুরান

৩ জিঃ ৭৫ গ্রাম

 

উপরোক্ত সারগুলো মিশিয়ে ১৫ সে.মি উঁচু করে জমি তৈরি করা হয়। এবার শোধন করা বীজের সঙ্গে ছাই বা গুড়ো মাটি মিশিয়ে ১০ সে.মি অন্তর সারিতে কিংবা ছিটিয়ে ২ সে. মি গভীরতায় বোনা দরকার। বড়ো আকৃতির বীজ বেশি গভীরতায় এবং ছোটো আকৃতির বীজ কম গভীরতায় বোনা হয়। কলাপাতা, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বা খড় দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া হয়। এবার কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলিয়ে ওই ঢেকে দেওয়া বীজতলার উপর এমনভাবে        

স্প্রে করতে হবে, যাতে ঢেকে থাকা বস্তু ভেদ করে বীজতলার মাটি ভিজে যায়। এইভাবে মাটি, বীজ ও ঢেকে থাকা বস্তু জীবাণুমুক্ত হয়। ফলে গজানো চারায় সহজে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে না। বর্ষাকালে বৃষ্টির ছাট বা তীব্র রোদ থেকে চারা বাঁচাতে বীজতলার উপর পলিথিনের ছাউনি দেওয়া হয়। ছাউনির প্রান্ত মাটি থেকে ২ ফুটের বেশি উচ্চতার হবে না। ছাউনির ঢাল পূর্ব পশ্চিম বরাবর হবে। সকালে পূর্বদিকের ছাউনি গুটিয়ে উপরে বেঁধে রাখতে হবে এবং পশ্চিমদিকের ছাউনি নামানো থাকবে। বিকেলে বিপরিতভাবে ছাউনি গোটানো ও নামানো থাকবে। রোদ বা বৃষ্টির হাত থেকে চারা বাঁচাতে দুই পাশের ছাউনি মেলে দেওয়া দরকার। এ ছাড়া রোদ বা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে গ্রীন হাউস বা স্থায়ী ছাউনির নিচে চারা তৈরি করা হয়। চারার বয়স ১৫ দিন হলে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া চাপান দেওয়া হয়। চারায় পচন রোগ দেখা দিলে ম্যানকোজেব-৭৫% (ডায়থেন- এম-২.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে) বা কপার অক্সিরে। রাইড (৪গ্রাম/লিটার পানিতে) স্প্রে করা হয়। টমেটো, বেগুন, লঙ্কা প্রভৃতি সবজিতে ভাইরাসঘটিত কোঁকড়ানো রোগ খুবই হয়। বীজতলার চারা থেকে রস চুষে খাওয়ার সময় পোকার গুঁড়ে লেগে থাকা ভাইরাস চারার শরীরের মধ্যে ঢুকে যায়। ফুল আসার সময় ওই ভাইরাস দ্বারা কোঁকড়ানো রোগের লক্ষণ ফুটে বের হয়। ভাইরাস বাহকপোকা দমনের জন্য বীজতলায় কার্বোফুরান দেওয়া হয়। এ সত্ত্বেও ভাইরাসঘটিত কোঁকড়ানো রোগ দেখা দিতে পারে। কার্বোফুরান দেওয়া বীজতলায় বাহকপোকা রস খেতে গিয়ে মারা যায়। কিন্তু মরার আগে চারা গাছের শরীরে ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়। এজন্য নাইলনের মশারি দিয়ে বিশেষ করে রাতে বীজতলা ঢেকে পোকার সংস্পর্শ তথা ভাইরাস রোগ সংক্রমণ কমানো যায়। এমনকি খেজুরের ডাল দুই ফুট সাইজের কেটে বীজতলার চারদিকে গায়ে গায়ে গেঁথে দিলে বাহকপোকার আক্রমণ কিছুটা কমানো যায়। বাহকপোকার সরাসরি আগমন বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। বর্ষাকালে ১০ সে.মি উঁচু কানাযুক্ত কাঠের ট্রেতে চারা তৈরি করা যায়। ট্রেতে বালি মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ভর্তি করে উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ বোনা হয়। কাঠের ট্রের সুবিধা হলো ইচ্ছামতো রোদে দেওয়া যায়। আবার চড়া রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে আচ্ছাদনযুক্ত স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। চারা রোপণের সময় ট্রেগুলোকে সরাসরি মাঠে নিয়ে যাওয়া যায়।

বিভিন্ন ফসল চাষের সময়

আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। সব ফসল সব ঋতুতে সব আবহাওয়ায় হয় না।                       

নিচে সময় অনুযায়ী বিভিন্ন ফসল চাষের বিষয়ে বিবরণ দেয়া হল-

ফসলের নাম

চাষের সময়

ঢেঁড়স, লঙ্কা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ওল, চাল কুমড়ো, মিষ্টি কুমড়ো, মুলো, শসা, জিঙা, বেগুন, উচ্ছে, করলা, ধুন্দল, লাউ, কুদরি, আদা, প্রভৃতি সবজি। আদা, ডাঁটা, নটে, পালং, পুই, লাল ডাঁটা ও বিভিন্ন ধরণের বর্ষার শাক।

বৈশাখ মাস (এপ্রিল থেকে মে)

বেগুন, ঢেঁড়স, উচ্ছে, করলা, সীম, লাউ, মাচার ঝিঙা, মাচার শসা, বর্ষাতি মুলো, মানকচু, হলুদ, আদা, মিষ্টিকুমড়ো, চালকুমড়ো, পোয়াল ছাতু, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পেঁপে, বরবটি জাতীয় সবজি। কলমি, হিঞ্চে, পালং কাটোয়া ডাঁটা, সাদা পুঁই লাল ডেঙোডাটা, নটে, গিমে ও বর্ষার শাক।

জ্যৈষ্ঠ মাস (মে থেকে জুন)

উচ্ছে, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, মাচার শসা, মিষ্টি আলু, পোয়াল ছাতু, সীম, বীন, জলদি ফুলকপি, টমেটো, গাজর, শালগম, বাঁধাকপি, বেগুন, লঙ্কা, মিষ্টি কুমড়ো, চালকুমড়ো, বেগুন, বরবটি প্রভৃতি সবজি। লালশাক, পালং সাদাপুঁই, নটে জাতীয় শাক।

আষাঢ় মাস (জুন থেকে জুলাই)

জলদি বাঁধাকপি, জলদি ফুলকপি, গাজর, টমেটো, বীট, ওলকপি, লঙ্কা, বর্ষাতি মুলো, শালগম প্রভৃতি সবজি। লালশাক, ধনেপাতা, লেটুস, কাটোয়া ডাটা, চাঁপানটে, হিঞ্চে, পালং ইত্যাদি শাক।

শ্রাবণ মাস (জুলাই থেকে আগস্ট)

আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, মুলো, লঙ্কা, পটল, লাউ, ঢেঁড়স, কুমড়ো, বীট, শালগম, গাজর। পালং, ধনেপাতা, কাটোয়া ডাঁটা, নটে, পুঁই, বিলাতি ধনেপাতা ইত্যাদি।

ভাদ্র মাস (আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর)

শসা, কুমড়ো, সীম, বীট, গাজর, লাউ, মূলো, পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কা, বেগুন, ওলকপি, উচ্ছে, করলা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়ো প্রভৃতি সবজি। লেটুস, ধনেপাতা, পালং, নটে ইত্যাদি শাক।

অগ্রহায়ন মাস (নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর)

 

আলু, মিষ্টি আলু, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়ো, মাচার পটল, টমেটো ইত্যাদি সবজি। লেটুস, পালং, ধনে, বেথুয়া,              মেথি, পুঁই, ইত্যাদি শাক।                                                                                              

 

 

আশ্বিন মাস (সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর) 

বেগুন, শসা, উচ্ছে, করলা, বরবটি, মুলো, ধুন্দল, ঝিঙে, লাউ, মিষ্টি কুমড়ো ঢেঁড়স, ইত্যাদি সবজি। নটে, পুঁই, লেটুস, মেথি, কাটোয়া ডাঁটা, পালং প্রভৃতি শাক।

 

পৌষ মাস (ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি)

চৈতী মুলো, শসা, ঝিঙে, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, উচ্ছে, ধুন্দল, বরবটি, বীন, মিষ্টি কুমড়ো, মিষ্টি আলু, লাউ, লঙ্কা, চিচিঙ্গা প্রভৃতি সবজি। মেথি, চাপানটে, পুঁই, পালং, লালডাঁটা প্রভৃতি শাক।

মাঘ মাস (জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি)

সাদা মুলো, ধুন্দল, চালকুমড়ো, লাউ, চিচিঙ্গা, ওল, হলুদ, আদা, শসা, ঢেঁড়স, করলা, বেগুন, বরবটি, লঙ্কা, কুমড়ো প্রভৃতি সবজি। লাল ডেঙ্গো ডাটা, চাঁপানটে, মেথি, কাটোয়া ডাঁটা, পালং প্রভৃতি শাক।

ফাল্গুন মাস (ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ)

ঢেঁড়স, বেগুন, লঙ্কা, সাদামুলো, উচ্ছে, করলা, ওল, হলুদ, আদা, লাউ, চিচিঙ্গা, চালকুমড়ো, মিষ্টি কুমড়ো, ধুন্দল, শসা বরবটি প্রভৃতি সবজি। লাল ডাঁটা, পুঁই, কাটোয়া ডাঁটা, চাঁপানটে প্রভৃতি শাক।

চৈত্র মাস (মার্চ থেকে এপ্রিল)

বাড়ির সংলগ্ন জমিতে টবে কিচেন গার্ডেন

  • বড় বড় শহরে সবজি বাগান করার মতো জমি সহজে পাওয়া যায় না। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব বাড়ির সামনেই লাগোয়া দুই এক কাঠা জমি থাকে যদি তাহলে সেই জমিতে সবজি চাষ করলে বাড়ির সৌন্দর্য্য যেমন বেড়ে যায় তেমনি নিজের বাগানের টাটকা সবজি খাওয়ার আনন্দও উপভোগ করা যায়। তার উপর এই দূর্মূল্যের বাজারে বেশ কিছু আর্থিক খরচও কমানো যায়।
  • বড় শহরের ক্ষেত্রে ছাদে বা জমিতে বা বারান্দায় টবে বিশেষ পদ্ধতিতে কিচেন গার্ডেন তৈরি করা যায়। বাড়ির সংলগ্ন জমিতে সবজি চাষের পদ্ধতি:

*  বিভিন্ন ঋতুতে নানান রকমের সবজি হয়। প্রত্যেক ঋতুর উপযোগী বিভিন্ন সবজি বিভিন্ন পটে লাগালে সারাবছর সবজি পাওয়া যায়।

  • একই পটে এক এক ঋতুতে সেই ঋতুর ফসল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লাগালে সারাবছর ছোট ছোট পটে যখনকার যে সবজি সেই সবজি পাওয়া যায়।
  • যে কোন সবজি চাষ করতে গেলে পানির দরকার হয়।
  • পানির যোগানের উপর ফসল কেমন হবে তা নির্ভর করবে।
  • যদি পানির অভাব থাকে তাহলে যেসব ফসলে বেশি পানি লাগে না তাদের আলাদা করে ফেলতে হবে।
  • বাগানে এঁটেল মাটি হলে সেচ কম লাগে কিন্তু বেলে মাটিতে সবচেয়ে বেশি সেচ লাগে।
  • এই ধরণের সবজি বাগানে কোন এক প্রকারের সবিজ বেশি লাগানো উচিৎ নয়। বিভিন্ন প্রকারের সবজির পরিমাণের মধ্যে সমতা বজায় রাখা উচিৎ।
  • বাড়ির বাগানে জমি কম থাকায় যত কম জায়গা থেকে যত বেশি ফসল তোলা যাবে সেটাই হবে লক্ষ্য।
  • কম জায়গায় বেশি ফসল ফলাতে হলে যেসব ফসল বেশি এবং বেশি দিন জমি দখল করে রাখে না সেই গুলিকে চাষ করতে হবে।
  • যদি জায়গা বেশি থাকে তাহলে কিছু ফল জাতীয় সবজি যেগুলির গাছ বেশ বড় ও বেশি জায়গা নেয় তেমন গাছ লাগানো যেতে পারে। যেমন-সজিনা, কাঁচকলা, পেঁপে ইত্যাদি।
  • লাউ, কুমড়ো, চ্যাপটা সীম প্রভৃতি গাছ বেশি জায়গা নেয়। কারণ তাদের জন্য বেশ বড়সড় মাচা দরকার হয়।
  • বেগুন, লঙ্কা, টমেটো, সব রকম কপি, মুলো, গাজর, ওল প্রভৃতি সবজির জন্য জায়গা দরকার হয় না।
  • ছায়ায় সবজি হয় না বললেই চলে।
  • পটের এক একটি জায়গায় এক এক রকম সবজি লাগানো সুবিধাজনক। যেমন-জমির মাঝখানে বেগুন, টমেটো, লঙ্কা এবং নালির দুইপাশে উঁচু দাঁড়ায় মুলো, বীট, গাজর ও শালগম ইত্যাদি।
  • লাতানো সবজির গাছগুলিকে বাগানের বেড়ার দেওয়ালের কাছে লাগানো সুবিধাজনক।
  • শীতকালে একদিকে বেড়ার গায়ে মটরশুঁটি ও অন্যদিকে বীন লাগানো যেতে পারে। গ্রীষ্ম বর্ষায় ঐ একইভাবে শসা ও ঝিঙ্গে চাষ করা যেতে পারে।
  • একসঙ্গে অন্যরকম সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন প্রভৃতি তৈরি হতে অনেকদিন সময় লাগে।
  • এইগুলির ফাঁকে ফাঁকে জলদি জাতের ফসল যেমন মুলো, শাক প্রভৃতি সাথী ফসল হিসাবে লাগালে একই সঙ্গে অন্য ধরণের সবজি পাওয়া যাবে।
  • বাগানের যে দিকটায় বেশি ছায়া সেদিকের জন্য সবজির প্রজাতি সঠিকভাবে বাছাই করতে হবে। বারান্দার গ্রিল-এ করলা লতিয়ে যথেষ্ট ফল দিতে পারে।
  • লাউ, কুমড়ো, সীম প্রভৃতি বড় বড় লতার গোড়া ছায়ায় এলে কোন অসুবিধা হবে না যদি লতাকে উপর বা পাশের দিকে এনে রোদের জায়গায় মাচা করে দেয়া হয়।
  • কিচেন গার্ডেনের ছায়াযুক্ত অংশকে বীজ উৎপাদনের কাজে ভালভাবে লাগানো যায়।
  • গোসল ও মুখ ধোয়ার জায়গা সব বাড়িতেই থাকে সেখান থেকে একটি নালা কেটে জমিতে পানি দেয়া যায়।
  • সবজি চাষে জমির মাটি এমন ঝুরঝুরে হওয়া দরকার যাতে শিকড় মাটির নিচে সহজে প্রবেশ করে খাদ্য ও রস গ্রহণ করতে পারে।
  • কোঁদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে তারপর ঢেলাগুলি ভেঙে গুঁড়ো করতে হবে ও জমি থেকে আগাছা নষ্ট করতে হবে।
  • ভালো ফসল পেতে হলে দরকার ভালো বীজ তাই বীজ প্রয়োজন মতো প্রতিবছর কেনা উচিত, কারণ বেশিদিন রেখে দিলে খারাপ হয়ে যাবে।
  • জমি তৈরির সময় প্রতি ১০০০ বর্গফুট জমিতে ১৫ কেজি হিসেবে কম্পোস্ট সার কিংবা গোবরপঁচা সার মাটির সঙ্গে ভালো করে মেশাতে হবে।
  • বীজ বোনার বা চারা বসানোর আগে জমিতে রাসায়নিক সার দেয়া দরকার। প্রতি ১০০০ বর্গফুট পটের জন্য সার প্রয়োজন- অ্যামোনিয়াম সালফেট-১৮০ গাম। সুপার ফসফেট -১৮০ গ্রাম।
  • কিছু সবজির বীজ আছে যা সরাসরি জমিতে বোনা হয়।

* ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও বেগুন সবজির বীজ বীজতলায় পুঁতে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয় তারপর ঐ চারাগুলিকে তুলে জমিতে বসাতে হয়।

  • চারাগাছ বসানোর পর যতিদন সেগুলি বাগানে থাকবে ততদিন তাদের পরিচর্যা করতে হয়- জমিতে নিয়মমতো পানি দেয়া দরকার।
  • মাঝে মাঝে মাটি খুঁড়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গাছে যাতে রোগ পোকার আক্রমণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • চারা গাছগুলি মাটি থেকে সার শোষণ করে তাই চারা লাগানোর ৪ সপ্তাহ পর পর চাপান সার দেয়া দরকার। প্রতি ১,০০০ বর্গফুট জমিতে ১০০ গ্রাম অ্যামোনিয়াম সালফেট মিশিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে।

আদর্শ কিচেন গার্ডেনের ফসলচক্র

 প্লট

শ্রাবণ-কার্তিক: ফুলকপি ও মধ্যে পালং অগ্রহায়ন-ফাল্গুন: আলু ও মধ্যে বীট, গাজর। চৈত্র-আষাঢ়: শাক-নটে, পুঁই ইত্যাদি।

 প্লট

 ভাদ্র-অগ্রহায়ন: বাঁধাকপি, লেটুস। কার্তিক-ফাল্গুন: আগের কপির মধ্যে বাঁধা। চৈত্র-শ্রাবণ: উচ্ছে, করলা।

প্লট

কার্তিক-মাঘ: মটরশুঁটি, ফ্রেঞ্চবীন ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ: লাউ আষাঢ়-আশ্বিন: শাক-ডাঁটা নটে, পুঁই।

প্লট

 ফাল্গুন-শ্রাবণ: ঢেঁড়স ভাদ্র-মাঘ: টমেটো। প্লট-৭ আশ্বিন-মাঘ: ফুলকপি ও মধ্যে ওলকপি ফাল্গুন-ভাদ্র: টমেটো। ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ: মিষ্টি কুমড়ো আষাঢ়-আশ্বিন: শাক-কচু, কলমি, পুঁই। কার্তিক-মাঘ: পালং, মেথী।

প্লট

শ্রাবণ-ফাল্গুন: বেগুন, লঙ্কা, পালং চৈত্র-আষাঢ়: ঝিঙে

 প্লটআষাঢ়-আশ্বিন: মুলো কার্তিক-জ্যৈষ্ঠ: পেঁয়াজ।

 

বাড়ির ছাদে কিচেন গার্ডেনঃ

  • বাড়ির ছাদে বাগান করতে হলে গাছ পুঁততে হবে টবে বা বাক্সে।
  • টবগুলো ছাদের মেঝেতে না বসিয়ে ইটের পায়ার ওপর বসালে ছাদে পানি বসার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
  • ছাদে পানি বের হবার ব্যবস্থা থাকা দরকার।
  • শহর অঞ্চলে যেসব বাড়ির ছাদে পানির ট্যাঙ্ক আছে সেখানে একটি কল করে নিলে পানি পাওয়ার সুবিধা হবে।
  • ছাদে মাটির টবে সবজি গাছ লাগানো সবজি বাগানের জন্য সুবিধাজনক।
  • সবজি চাষের জন্য বড় আকারের টব প্রয়োজন।
  • ছোট ছোট গাছ ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি টবে পোতা যায়।
  • টবের তলায় পানি বের হওয়ার জন্য ছিদ্র থাকা দরকার।
  • বীজ বোনার জন্য খাবার থালার মতো চ্যাপ্টা টব হওয়া দরকার।
  • লম্বা কাঠের বাক্সে বা কংক্রিটের আধারে সারি দিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বীট, মুলো প্রভৃতি চাষ করা যায়। • ছাদে যদি বড় পাঁচিল বা ঘরের দেওয়াল থাকে সেখানে লতানো সবজির গাছ লাগানো যেতে পারে।
  • সবজি বাগানে যে ঋতুর যে সবজি লাগালে সারাবছর নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝে টাটকা সবজির আস্বাদনের সুযোগ মিলবে, সেই সব সবজি লাগানো ভাল।
  • বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স ও লঙ্কা গাছ অনেক দিন ধরে ফল দেয়।
  • শীতকাল ও বর্ষায় দুইবার বোনা যায় এ রকম গাছ টবে পুঁতলে অন্তত ৩/৪ মাস ফল পাওয়া যাবে।
  • লাউ ও কুমড়োর প্রতি গাছে ৪/৫টি ফল হয়।
  • শসাও খুব মুখরোচক এবং প্রচুর ফলেও।
  • পুরনো টবে চাষ করলে আগে সেগুলিকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপর গাছ পোঁতা উচিৎ।
  • নতুন টব পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা উচিৎ।
  • টবের তলায় যেখানে ছিদ্র আছে তার ওপরে একটি খুরি উল্টো করে রাখতে হবে। টবের নিচের অংশ কিছু ছোট খোয়ার টুকরো ও মোটা দানাবালির একটি স্তর সাজাতে হবে। ফলে বাড়তি পানি মাটির নিচে না জমে তলার ছিদ্র দিয়ে সহজে বেরিয়ে যেতে পারবে।
  • টবের গাছ জমির মতো মাটি থেকে বেশি খাবার পায় না।
  • টবের গাছ বসানোর আগে যেমন সার দিতে হয় তেমনি চারা রোপণের ১৫ দিন ও তারপর এক মাস পরে আবার সার দেয়া প্রয়োজন।
  • উচ্ছে, করলা, শসা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ইত্যাদি লতানো গাছ টবে পুঁতলে, টবের চারপাশে খুঁটি দিয়ে মাচা করে দিতে হয়। এ জাতীয় ফসল ভাল ফলে এবং দেখতেও ভাল লাগে।

 পরিচর্যা:

  • ছাদের বাগানে টবে সবজি চাষ করতে হলে পরিচর্যা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা অবশ্যই দরকার।
  • ফসল অনুযায়ী নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে।
  • টবে পানি দেয়ার জন্য ঝাঁঝরি ব্যবহার করাই ভাল।
  • টবের মাটি যদি শক্তি হয়ে জমাট বেঁধে যায় তাহলে কোঁদাল দিয়ে সাবধানে খুঁড়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
  • বাড়ির ছাদে বাগান করলে একদিকে যেমন বাড়ির শোভা বাড়বে তেমনি নিজের হাতে ফসল তৈরি করার আনন্দ উপভোগ করা যায়।

* অবসর সময় কাটানোর পক্ষে বাগান করার মতো আনন্দদায়ক কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই।

ঘরোয়া সবজি বাগান বা কিচেন গার্ডেন

 শুধুমাত্র বাজারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে পরিবারের সকল সদস্যের অবসর সময়ে বসতবাড়ি সংলগ্ন জায়গায় সুপরিকল্পিতভাবে সারাবছর ধরে রুচি ও প্রয়োজনমতো কৃষিবিষবিহীন শাকসবজি তৈরির বাগানকে ঘরোয়া সবজি বাগান বা কিচেন গার্ডেন বলা হয়। এই সবজি বাগান তৈরির মুখ্য উদ্দেশ্য হলো-

  • সারাবছর ধরে সুপরিকল্পিতভাবে নানা প্রকার শাকসবজি ফলানো।
  • পরিবারের সবার চাহিদা অনেকাংশে মেটানো ও অপুষ্টি থেকে রক্ষা করা।
  • পরিবারের সকল সদস্য, বিশেষ করে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।
  • কৃষি-বিষবিহীন ও স্বাস্থ্যসম্মত শাকসবজি উৎপাদন করা।
  • টাকা পয়সার কিছুটা সাশ্রয় ও অবসর সময়ের সুপরিকল্পিত ব্যবহার করা।
  • বাড়ির আশেপাশের খালি জমি কাজে লাগানো।
  • সবজির পাশাপাশি কিছু ঔষুধি গাছ চাষ করে ঘরোয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা।
  • পরিবারের সবার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

একজন লোকের সবজির জোগান পেতে ১ শতক (৪৩৫.৬ বর্গফুট) জমি দরকার। এই হিসেবে ৫ জনের একটি পরিবারের জন্য ৫ শতক বা ৩ কাঠা জমি দরকার। ফলগাছ লাগাতে হলে ৬-৭ কাঠা জমি হলে ভালো হয়। এছাড়া প্রয়োজনমতো না হলেও টবে কিছু সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু, খোলামেলা ও রোদ লাগা জমি সবজি চাষের উপযোগী। জমিতে পানি জমার সম্ভাবনা থাকবে না এবং পানি নিকাশি ব্যবস্থা থাকবে। জমিটি পুকুর, নলকুপ বা কুয়োর কাছাকাছি হলে সেচ দেওয়ার সুবিধা হয়। জমির মাটি দোআঁশ হলে খুব ভালো, অন্যথায় জৈবসার মিশিয়ে সবজি চাষের উপযোগী করো তোলা হয়। প্রথমে সবজি চাষের জায়াগাটিকে দুই ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। একটি ভাগ থাকে দক্ষিণ দিকে অন্যটি উত্তরদিকে। দক্ষিণ দিকের ভাগটি মোট জমির চার ভাগের তিন ভাগ যুক্ত হয়। উত্তরদিকের ছোটো ভাগে ফলগাছ লাগানো হয়। এজন্য ফলগাছের ছায়া দক্ষিণ দিকের অংশে পড়ে না। জমি তিন কাঠার কম হলে দুই একটি ফলগাছ লাগিয়ে বাকি জায়গায় সবজি চাষ করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ ভাগের মাঝখানে একটি ৩ ফুট চওড়া রাস্তা থাকে এবং সমস্ত জমির চারদিকে ২ ফুট চওড়া রাস্তা করা হয়। এতে বাগানে চলাচল ও পরিচর্যায় সুবিধা হয়। সবজি লাগানো ভাগের চারদিকে এবং ফলগাছ লাগানোর ভাগের একদিকে ১ ফুট চওড়া সেচনালা করা হয়। এবার সবজি লাগানো অংশটি কাঁচা মাটির সরু আইল তুলে ৮ টি পটে ভাগ করে নেওয়া হয়। একপাশের একটি পটের কিছু অংশ বীজতলা তৈরির জন্য ছেড়ে রাখা হয়। ফলগাছ লাগানোর জায়গার দুই কোণে দুটি গর্ত খুঁড়ে বাগানের প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার করা হয়। এতে সমস্ত বাগানটির চারদিকে গাছের বেড়া হয়।                             

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *