planting for roof gardens – ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ।

Soil preparation and planting for roof gardens.

 প্রিয় পাঠক, এই অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুতসহ চারা রোপণ বা বীজ বপন এবং পটে বা টবে সার প্রয়োগের সাধারণ নিয়মাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে চেষ্টা করব।

ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি:

 ছাদ বাগান করার জন্য দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। তবে বেলে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি হলেও কোনো সমস্যা নেই। যদি এঁটেল (শক্ত মাটি) হয়, তাতে বালি মাটি মিশাতে হবে। আর যদি বেলে মাটি হয়, তাতে এঁটেল মাটি মেশাতে হবে। মোট কথা যেকোনো প্রকার মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে হলেই সেটা দোআঁশ মাটি হয়েছে বলে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া যাবে। দোআঁশ মাটি হলে মোট মাটির ২ ভাগ মাটি রেখে ১ ভাগ জৈবসার মিশাতে হবে। অন্যান্য মাটি হলে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক জৈবসার দিতে হবে।

তবে জৈবসারের পরিমাণ বেশি হলে কোনো অসুবিধা নেই। জৈবসার বেশি হলে মাটিতে অবস্থিত অণুজীব সক্রিয় থাকে। জৈবসার হিসেবে ভার্মিকম্পোস্ট সবচেয়ে ভালো। বাড়িতে তৈরি আবর্জনা পচা সার বা পচা গোবর সারও দেওয়া যায়।

ছাদ বাগানের জন্য হাফ ড্রামে গাছ লাগানোর জন্য যে পরিমাণ মাটি লাগবে (হাফ ড্রামের জন্য গড়পড়তা ১৫০ কেজির মতো) সেই মাটির সাথে ৫০ কেজি জৈবসার, ১২০-১৫০ গ্রাম (৩-৪ মুঠ প্রায়) টিএসপি, ৮০-১০০ গ্রাম (২-৩ মুঠ প্রায়) পটাশ, ৪০-৫০ গ্রাম (১.০-১.৫ মুঠ প্রায়) জিপসাম, ১০-১৫ গ্রাম (১.৫-২.০ চা চামচ প্রায়) করে বোরন ও দস্তা সার ভালোভাবে মিশিয়ে ১৫ দিন ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর পুনরায় মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা খোলা রেখে চারা রোপণ বা বীজ বপন করতে হবে।

মাটি তৈরির সময় মাটি শোধনের কাজটি সেরে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য উপযুক্ত পরিমাণ মাটির সাথে ১০ গ্রাম (১.০-১.৫ চা চামচ) করে দানাদার কীটনাশক এবং কার্বেন্ডাজিম বা ম্যানকোজেব বা কার্বেন্ডাজিম এবং ম্যানকোজেব গ্রুপের মিশ্রিত ছত্রাকনাশক মিশিয়ে নিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে নেমাটোড/কৃমি এবং বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক দমন করা সম্ভব হবে। এভাবে ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করা যেতে পারে। সময় হাতে থাকলে এভাবে যে পরিমাণ মাটি দরকার, অনুপাত ঠিক রেখে সেই পরিমাণ মাটি প্রস্তুত করে নেওয়া যেতে পারে।

মিশ্র সার ব্যবহার করে মাটি তৈরি:

 উপর্যুক্ত মিশ্রণ ব্যতীত এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ছাদ বাগান করার ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার মাটিতে না দিয়ে বরং পাতায় কেমিক্যাল সার প্রয়োগ করলে সেখান থেকে ভালো রেজাল্ট আসে। তবে মাটির মিশ্রণ তৈরির সময় হাফ ড্রামের মিশ্রণের সাথে ৫০-১০০ গ্রাম মিশ্র সার (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ এবং সালফারের সমন্বয়ে তৈরি) প্রয়োগ করে কেউ কেউ ভালো ফলাফল পেয়েছেন। তবে মিশ্র সার প্রয়োগ করলে সেক্ষেত্রেও অবশ্যই ৭-১০ দিন পরে চারা রোপণ করতে হবে।

শুধু দোআঁশ মাটিতে চারা রোপণ:

অধিকন্তু, যারা শুধুমাত্র দোআঁশ মাটি ব্যবহার করে টবে চারা রোপণ করেছেন, তারা রোপিত চারায় রাসায়নিক সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মটি অনুসরণ করতে পারেন।

 প্রথমবার:

সাধারণত চারা রোপণের পর গাছ মাটির সাথে লেগে গেলে রাসায়নিক সার প্রয়োগ শুরু করতে হয়। সেটা ১৫ থেকে ২০ দিন হতে পারে। এক লিটার পানি নিন। উক্ত পানিতে হাফ চা চামচ করে ইউরিয়া (সাদা সার) এমওপি/পটাশ (লাল সার) + টিএসপি (মেটে সার) এবং এক চিমটি করে সালফার অথবা বোরন দুটোর যেকোনো একটি দিতে হবে। সকল সার গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার ভালোভাবে পানির সাথে মিশিয়ে প্রয়োজনমতো গাছের গোড়ায় ঢেলে দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে শুকানোর পর গোড়ায় দিবেন।

 দশ দিন পর:

 দ্বিতীয়বার: এক লিটার পানি নিন। উক্ত পানিতে হাফ চা চামচ ইউরিয়া এক চিমটি দস্তা সার দিতে হবে। সকল সার গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার ভালোভাবে পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমতো গোড়ায় ঢেলে দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে শুকানোর পর সার দিতে হবে।

দশ দিন পর: তৃতীয়বার:

এক লিটার পানি নিন। উক্ত পানিতে হাফ চা চামচ ইউরিয়া সালফার অথবা বোরণ দুটোর মধ্যে প্রথমবার যেটি নিয়েছেন সেটি বাদে অন্যটি নিতে হবে। সকল সার গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার ভালোভাবে পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমতো গোড়ায় ঢেলে দিতে হবে। মাটি ভেজা থাকলে শুকানোর পর সার দিতে হবে। প্রথম ও তৃতীয়বারের বেলায় একবার সালফার দিলে আরেকবার বোরন এভাবে বদলিয়ে নিতে হবে।

 টবে রাসায়নিক সার প্রয়োগে সাবধানতা:

 টবের চারা লাগানোর জন্য মাটি ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ তৈরি বা চারা লাগানোর পরে রাসায়নিক সার স্প্রে করার আগে প্রচণ্ড রকমের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মিশ্রণে রাসায়নিক সারের পরিমাণ বেশি হলে অথবা চারা লাগানোর পরে রাসায়নিক স্প্রে করার সময় সঠিক নিয়মের ব্যতিক্রম হলে বা সারের মাত্রা বেশি হলে টবের গাছ মারা যেতে পারে নতুবা রাসায়নিক সার স্প্রে করার ফলে টবের গাছের পাতা সারের বিষক্রিয়ায় পুড়ে গিয়ে মারা যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধাবনতা অবলম্বন সবিশেষ জরুরি। ছাদ বাগানের কোনো টবে তথাকথিত ‘বিশেষজ্ঞের’ কথায় প্রলুব্ধ হয়ে কখনোই বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করবেন না। আবার টবে রোপিত গাছে কখনো কাঁচা বা আধা পচা গোবর বা জৈবসার, চায়ের পাতি, শুকনা খইল এগুলো প্রয়োগ করবেন না। এগুলো প্রয়োগ করার আগে ভালো করে পচিয়ে নিতে হবে।

টবে রোপিত গাছে অণুখাদ্য প্রয়োগ:

 অণুখাদ্য বোঝার আগে আমাদেরকে একটু জেনে নেওয়া দরকার, গাছের খাদ্য উপাদান সম্পর্কে। যেকোনো গাছ বা উদ্ভিদ তার বাড়বাড়তি ও ফুল ফল ধারণের জন্য যে সকল খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে, তারমধ্যে ১৬টি উপাদানকে অত্যাবশ্যকীয় মনে করা হয়। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ব্যতীত অন্যান্য ১৩টি উপাদান গাছ মাটি হতে সংগ্রহ করে থাকে এবং এই ১৩টি উপাদানকে বলা হয় খনিজ পুষ্টি (Mineral Nutrients)। গাছ কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে বাতাস এবং পানি হতে। গাছের পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণের ওপরে নির্ভর করে এ সকল পুষ্টি উপাদানকে মোট ২ ভাগে ভাগ করা যায়। (১) মুখ্য উপাদান (Macro nutrient):  কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফার।

 (২) গৌণ উপাদান (Micro nutrient):  আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার, মলিবডেনাম, বোরন ও ক্লোরিন। এক সময় আমাদের মাটিতে প্রাকৃতিকভাবেই উদ্ভিদ বা গাছপালা জন্মানোর উপযোগী সার বিদ্যমান ছিল। কিন্তু একই জমিতে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের ফল ফসল ফলানোর কারণে এখন গাছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। অণুখাদ্য খুব বেশি পরিমাণে দরকার হয় না কিন্তু কখনো কখনো এটার অভাব হেতু রোপিত গাছ হতে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাই টবে সব ধরনের সার প্রয়োগের ফলেও যদি গাছের বাড়বাড়তি কম হয় এবং গাছে কোনো রোগ বা পোকামাকড় না থাকে, তাহলে টবে লাগানো গাছে বাজারে (দেশি এবং ভারতীয়) পাওয়া যায় এমন কিছু অণুখাদ্য অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পারতপক্ষে এটা না ব্যবহার করাই উত্তম। প্রিয় পাঠক, পরবর্তী “উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান” শীর্ষক অধ্যায়ে আমরা এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানব।

টবে মাটি ভর্তি চারা রোপণ:

 ছোট আকারের টবে বা পটের নিচে একটা ছিদ্র রাখতে হবে আর হাফ ড্রাম বা সেই ধরনের বড় আকৃতির টবে ৫/৬টি ছিদ্র রাখলে ভালো। ছিদ্রগুলোর ওপরে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাটির টবের ভাঙা অংশ বা ইটের খোয়া বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর পটের ওপর থেকে ৩-৪ ইঞ্চি খালি রেখে মাটি দিয়ে ভর্তি করে নিতে হবে। টবে মাটির মিশ্রণ ভর্তির পরে টবের ঠিক মাঝ বরাবর একটা গর্ত করে চারা বা কলম প্যাকেট থেকে কেটে বের করে এনে চারা যে প্যাকেটের মধ্যে যে অবস্থানে ছিল, সেভাবেই চারা রাখতে হবে। চারা মাটির একেবারে গভীরে অথবা মাটির ওপরে লাগানো যাবে না। চারা লাগানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে চারার সাথে যে মাটি ছিল সেই মাটি যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ফলদ গাছের চারা হলে গাছ রোপণের পরপরই পাশে একটা খুঁটি বেঁধে ঠেস দিতে হবে যেন চারাটি বাতাসে হেলে না পড়ে।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *