Egg Shell Powder Fertilizer । গাছে ডিমের খোসার গুড়া ব্যবহার
ডিমের খোসার গুঁড়া (Egg Shell Powder) হলো প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জৈব সার, যা গাছের শিকড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে, পাতা ও ফলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মাটির pH নিয়ন্ত্রণ করে। এটি অকাল ঝরা (ফুল-ফল ঝরে যাওয়া), ল্যাদা পোকা, শামুক ও স্লাগ দমনে বিশেষ কার্যকরী।
🥚 ডিমের খোসার গুঁড়ার উপাদানসমূহ
📌 ডিমের খোসায় যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO₃) – ৯৫% 🏗
✅ গাছের শিকড় ও কান্ড শক্তিশালী করে
✅ মাটির pH নিয়ন্ত্রণ করে
✅ ফল গাছে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করেম্যাগনেসিয়াম (Mg) – ০.৩% 🧪
✅ ক্লোরোফিল তৈরি করতে সাহায্য করে
✅ সবুজ পাতার বৃদ্ধি বাড়ায়ফসফরাস (P) – ০.৪% 🌱
✅ গাছের শিকড় ও ফুলের গঠনে সহায়ক
✅ ফলন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেপটাশিয়াম (K) – ০.২% 🍂
✅ গাছের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
✅ পানি শোষণের কার্যক্ষমতা বাড়ায়জিঙ্ক (Zn), আয়রন (Fe), সালফার (S) ও অন্যান্য খনিজ 🔬
✅ গাছের বৃদ্ধি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
✅ নতুন কুঁড়ি গজাতে সাহায্য করে
🛠️ ডিমের খোসার গুঁড়ার ব্যবহার পদ্ধতি
✅ ১. সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ
📌 পরিমাণ:
- ছোট গাছে – প্রতি টবে ১-২ চা চামচ
- ফুল ও সবজি গাছে – প্রতি গাছে ২-৩ চা চামচ
- ফল গাছে – প্রতি গাছে ৪-৫ চা চামচ
📌 প্রয়োগের নিয়ম:
1️⃣ ডিমের খোসা ভালোভাবে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন।
2️⃣ গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে দিন এবং মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন।
3️⃣ প্রয়োগের পর হালকা পানি দিন।
✅ কেন এটি কার্যকর?
- গাছের জন্য ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে।
- ফুল ও ফলের ঝরে পড়া কমায়।
- মাটির pH নিয়ন্ত্রণ করে।
✅ ২. তরল ডিমের খোসার সার তৈরি (Liquid Eggshell Fertilizer)
📌 তৈরির নিয়ম:
1️⃣ ১ লিটার পানিতে ৪-৫টি ডিমের খোসা ভিজিয়ে রাখুন।
2️⃣ ৩-৫ দিন রেখে দিন এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিন।
3️⃣ এই মিশ্রণ গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করুন।
📌 এর উপকারিতা:
✅ দ্রুত ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।
✅ ফুল ও ফল গাছের জন্য বিশেষ কার্যকর।
✅ ৩. ল্যাদা পোকা, শামুক ও স্লাগ দমনে ব্যবহার
📌 প্রয়োগের নিয়ম:
1️⃣ গাছের গোড়ায় গুঁড়ো ডিমের খোসা ছড়িয়ে দিন।
2️⃣ এটি শামুক ও ল্যাদা পোকার চলাফেরা বাধাগ্রস্ত করে এবং তাদের দূরে রাখে।
3️⃣ প্রতি ৭-১০ দিন পর পুনরায় প্রয়োগ করুন।
📌 এর উপকারিতা:
✅ ল্যাদা পোকা, শামুক ও স্লাগ দূর করে।
✅ মাটির পুষ্টি যোগায় এবং গাছের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
✅ ৪. বীজতলায় (Seed Starting) ডিমের খোসার ব্যবহার
📌 কিভাবে করবেন?
1️⃣ ডিমের খোসার ভিতরে সামান্য মাটি দিয়ে বীজ বপন করুন।
2️⃣ চারা বড় হলে, ডিমের খোসাসহ পুরোটা মাটিতে লাগিয়ে দিন।
3️⃣ ডিমের খোসা ধীরে ধীরে পচে মাটিতে পুষ্টি সরবরাহ করবে।
📌 এর উপকারিতা:
✅ বীজতলায় অতি সহজে চারা উৎপাদন সম্ভব।
✅ চারা স্থানান্তরের সময় ক্ষতি হয় না।
🔥 ডিমের খোসার সার ব্যবহারের সুবিধা
✅ প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ – মাটির পুষ্টি বাড়ায়।
✅ ফুল, ফল ও সবজি গাছের জন্য কার্যকর।
✅ মাটির pH নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফসলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
✅ শামুক ও ল্যাদা পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করে।
✅ সহজে পাওয়া যায় ও খরচ কম।
📌 ⚠️ সতর্কতা:
❌ পিঁপড়া ও অন্যান্য পোকা এড়াতে নিম খৈল ( Neem Cake ) মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
❌ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে মাটির pH বেশি বেড়ে যেতে পারে।
📌 সারসংক্ষেপ (Best Practice)
ব্যবহারের ধরন | পরিমাণ | প্রয়োগের সময় |
---|---|---|
টবের গাছ | ১-২ চা চামচ | প্রতি ১৫ দিন পর |
ফুলগাছ | ২-৩ চা চামচ | প্রতি ১৫ দিন পর |
সবজি গাছ | ২-৩ চা চামচ | প্রতি ৭-১০ দিন পর |
ফলগাছ (বড় গাছ) | ৪-৫ চা চামচ | প্রতি ১ মাস পর |
তরল সার (লিকুইড ফার্টিলাইজার) | ১ লিটার পানি + ৪-৫টি ডিমের খোসা | প্রতি ৭-১০ দিন পর |
বীজতলা তৈরি | খালি ডিমের খোসা | চারা তৈরির জন্য |
🎯 চূড়ান্ত পরামর্শ
🔥 ডিমের খোসার গুঁড়া গাছের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে এবং পাতা ও ফলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
🔥 শামুক, স্লাগ ও ল্যাদা পোকা প্রতিরোধে কার্যকরী।
🔥 বীজতলায় ডিমের খোসা ব্যবহার করলে চারা শক্তিশালী হয়।
🔥 নিম খৈলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে গাছের ক্ষতিকর পোকা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
🐚 ঝিনুক গুঁড়া বনাম 🥚 ডিমের খোসার গুঁড়া – উপাদানের তুলনা
✅ উভয়ই উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জৈব সার, তবে এগুলোর রাসায়নিক গঠন ও ব্যবহার কিছুটা ভিন্ন।
🔬 ঝিনুক গুঁড়া ও ডিমের খোসার গুঁড়ার উপাদানসমূহের তুলনা
উপাদান | ঝিনুক গুঁড়া (Oyster Powder) | ডিমের খোসার গুঁড়া (Eggshell Powder) |
---|---|---|
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO₃) | ৯০-৯৫% | ৯৫% |
ফসফরাস (P) | ০.৫ – ২% | ০.৪% |
পটাশিয়াম (K) | নেই | ০.২% |
বোরন (B) | ০.১ – ০.৫% | নেই |
জিঙ্ক (Zn) | ০.২ – ০.৬% | ০.১ – ০.২% |
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) | ০.৫ – ১% | ০.৩% |
সালফার (S) | ০.৩ – ০.৮% | ০.২% |
অন্যান্য খনিজ (Minerals) | উচ্চমাত্রায় | স্বল্প পরিমাণে |
মাটির pH নিয়ন্ত্রণ | ✅ (অম্লীয় মাটি কমায়) | ✅ (pH সামান্য নিয়ন্ত্রণ করে) |
🛠️ ঝিনুক গুঁড়া ও ডিমের খোসার গুঁড়ার পার্থক্য ও ব্যবহার
বৈশিষ্ট্য | ঝিনুক গুঁড়া | ডিমের খোসার গুঁড়া |
---|---|---|
মূল কাজ | মাটির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ, ক্যালসিয়াম সরবরাহ | ক্যালসিয়াম ও মিনারেল সরবরাহ, পোকা প্রতিরোধ |
কোন মাটিতে ভালো কাজ করে? | বেশি অম্লীয় মাটিতে (pH কম হলে) | সাধারণ মাটিতে |
কোথায় বেশি কার্যকর? | কৃষি জমি, বড় গাছ, সবজি ও ফল গাছে | ছোট টব, বীজতলা, সবজি গাছে |
পোকা দমনে ভূমিকা | নেই | ✅ (ল্যাদা পোকা, শামুক প্রতিরোধে কার্যকর) |
সার তৈরির সাথে মিশ্রিত করা যায়? | ✅ (কম্পোস্টের কার্যকারিতা বাড়ায়) | ✅ (কম্পোস্ট ও নিম খৈলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো) |
🎯পরামর্শ
- আপনার মাটির pH যদি বেশি অম্লীয় হয় (pH ৫-৬), তাহলে ঝিনুক গুঁড়া ব্যবহার করুন।
- যদি শুধু ক্যালসিয়াম ও মিনারেল সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান, তাহলে ডিমের খোসার গুঁড়া উপযুক্ত।
- পোকামাকড় দমনের জন্য ডিমের খোসার গুঁড়া ভালো কাজ করে, তবে ঝিনুক গুঁড়ার এই ক্ষমতা নেই।
- ফসলের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করতে চাইলে ঝিনুক গুঁড়া উপযুক্ত।
- গাছের শিকড় ও ফুল-ফল বৃদ্ধির জন্য দুইটিই কার্যকর, তবে ঝিনুক গুঁড়া দীর্ঘস্থায়ী কাজ করে।
Reviews
There are no reviews yet.