Mustard Cake – সরিষার খৈল
সরিষার খৈল (Mustard Cake) হলো প্রাকৃতিক জৈব সার, যা ফল, ফুল ও সবজি গাছের জন্য একটি উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদান। এটি গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং পোকামাকড় প্রতিরোধে সহায়তা করে। সরিষার খৈল মাটিতে খাদ্য তৈরি করার জন্য অনুঘটকের (Catalyst) ভূমিকা পালন করে এবং রাসায়নিক সার ছাড়াই গাছের সঠিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
🔬 সরিষার খৈলের পুষ্টি উপাদানসমূহ
📌 সরিষার খৈলে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
নাইট্রোজেন (N) – ৪-৬% 🌱
✅ গাছের সবুজ পাতা, কান্ড ও ডালপালার বৃদ্ধি বাড়ায়।
✅ সবজি ও লতাগাছের জন্য উপকারী।ফসফরাস (P) – ১-২% 🌾
✅ শিকড় গঠনে সহায়ক।
✅ ফুল ও ফলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।পটাশিয়াম (K) – ১-১.৫% 🍂
✅ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
✅ ফল ও ফুলের গুণগত মান উন্নত করে।ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), সালফার (S), আয়রন (Fe), জিঙ্ক (Zn) 🔬
✅ মাটির pH নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
✅ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
📌 সরিষার খৈল দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ধীরে ধীরে মাটির সাথে মিশে গিয়ে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যোগায়।
🛠️ সরিষার খৈলের ব্যবহার পদ্ধতি
✅ ১. সরাসরি মাটিতে প্রয়োগ (Dry Application)
📌 পরিমাণ:
- ছোট গাছে (টবে বা ছোট বাগানে) – ১ চামচ সরিষার খৈল গুঁড়া।
- ফুল ও সবজি গাছে – ২-৩ চামচ সরিষার খৈল গুঁড়া।
- ফল গাছে – ৩-৫ চামচ সরিষার খৈল গুঁড়া।
- বড় গাছে – প্রতি গাছে ১০০-২০০ গ্রাম।
- কৃষি জমিতে – প্রতি বিঘায় ১০০-১৫০ কেজি।
📌 প্রয়োগের নিয়ম:
1️⃣ সরিষার খৈল গুঁড়া করে নিন।
2️⃣ গাছের গোড়ার চারপাশের মাটি হালকা করে খুঁচিয়ে নিন (Ring Method)।
3️⃣ ছোট গাছে গোঁড়ার ৩০ সেমি দূরে, বড় গাছে ৬০ সেমি দূরে সরিষার খৈল ছড়িয়ে দিন।
4️⃣ এরপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে পানি দিন।
✅ এর উপকারিতা:
- মাটির নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়াবে।
- গাছের সবুজ বৃদ্ধি ও ফুল-ফল বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
- মাটির ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় করে উর্বরতা বাড়াবে।

✅ ২. সরিষার খৈল ভিজিয়ে পচিয়ে তরল সার তৈরি (Liquid Fertilizer)
📌 তৈরির নিয়ম:
1️⃣ ১ কেজি সরিষার খৈল নিন এবং ১০ লিটার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
2️⃣ প্রতিদিন কাঠি দিয়ে নাড়িয়ে দিন, যাতে নিচের অংশ ভালোভাবে মিশে যায়।
3️⃣ ৭-১০ দিন পর খৈল সম্পূর্ণ পচে যাবে এবং তরল সরিষার সার প্রস্তুত হবে।
4️⃣ ১ লিটার পচন সার + ১০ লিটার পানি মিশিয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করুন।
📌 পরিমাণ:
- ছোট গাছে প্রতি ১৫ দিনে ২৫০ মি.লি. তরল সার।
- ফুল ও সবজি গাছে প্রতি ১৫ দিনে ৫০০ মি.লি. তরল সার।
- ফল গাছে প্রতি ১৫ দিনে ১ লিটার তরল সার।
✅ এর উপকারিতা:
- গাছের শিকড়ে দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করে।
- শিকড় দ্রুত গজাতে সাহায্য করে ও ফুল-ফল বৃদ্ধি করে।
- মাটির ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় করে মাটিকে উর্বর রাখে।
✅ ৩. গাছের পাতায় স্প্রে করা (Foliar Spray)
📌 তৈরির নিয়ম:
1️⃣ ১০ লিটার পানিতে ১ লিটার তরল সরিষার খৈল সার মিশিয়ে নিন।
2️⃣ পাতা ও ফুলের ওপর স্প্রে করুন।
3️⃣ প্রতি ১৫-২০ দিনে ১ বার প্রয়োগ করুন।
✅ এর উপকারিতা:
- গাছের পাতা ও ফুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ফলন বাড়ায় ও গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
⚠️ সরিষার খৈল ব্যবহারের সতর্কতা
❌ কাঁচা সরিষার খৈল ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি শিকড় পুড়িয়ে ফেলতে পারে।
❌ অতিরিক্ত ব্যবহার করলে গাছের পাতা বেশি গজাবে, কিন্তু ফুল-ফল কম হবে।
❌ সরিষার খৈল প্রয়োগের পর ১-২ দিন গাছের চারপাশে পানি না দেওয়াই ভালো, যাতে এটি ধীরে ধীরে মাটিতে মেশে।

🔥 সরিষার খৈল ব্যবহারের সুবিধা
✅ উচ্চ নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ – গাছের সবুজ বৃদ্ধি বাড়ায়।
✅ শিকড়ের বৃদ্ধি ও ফুল-ফলের উৎপাদন বাড়ায়।
✅ মাটির উর্বরতা বাড়ায় ও দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টি সরবরাহ করে।
✅ প্রাকৃতিক ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক হিসেবে কাজ করে।
✅ রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে নিরাপদ।
📌 সারসংক্ষেপ (Best Practice)
ব্যবহারের ধরন | পরিমাণ | প্রয়োগের সময় |
---|---|---|
টবের গাছ (শুকনো খৈল) | ১-৩ চামচ | প্রতি ৩০ দিনে ১ বার |
ফুল ও সবজি গাছ (শুকনো খৈল) | ২-৩ চামচ | প্রতি ৩০ দিনে ১ বার |
ফল গাছ (শুকনো খৈল) | ৩-৫ চামচ | প্রতি ৩ মাস পর |
তরল সার (পচন খৈল) | ১ লিটার + ১০ লিটার পানি | প্রতি ১৫ দিনে ১ বার |
পাতায় স্প্রে (Foliar Spray) | ১ লিটার তরল সার + ১০ লিটার পানি | প্রতি ১৫ দিনে ১ বার |
কৃষি জমি (১ বিঘা) | ১০০-১৫০ কেজি | জমি তৈরির সময় |
🎯 চূড়ান্ত পরামর্শ
🔥 গাছের সবুজ বৃদ্ধি ও ফলন বাড়াতে সরিষার খৈল একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার।
🔥 তরল সার তৈরি করে ব্যবহার করলে দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করা সম্ভব।
🔥 ফুল ও ফল বেশি পেতে চাইলে সরিষার খৈলের সঙ্গে নিম খৈল মিশিয়ে ব্যবহার করা ভালো।
Reviews
There are no reviews yet.