সাম্প্রতিককালে “ধান চাষে ইউরিয়া সাশ্রয়ী স্প্রে প্রযুক্তি” শিরোনামে ফেসবুকে একাধিক লেখা ও মন্তব্য ব্রি’র নজরে এসেছে। এতে বলা হয়েছে যে, শতকরা ৩৫ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করেও ধানের উৎপাদন শতকরা ১০ ভাগ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ বিষয়ে ব্রি’র মতামত নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. বিগত ১৯৭৪-৭৫ সালে ব্রি-তে প্রথম ইউরিয়া স্প্রে নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়। এ গবেষণায় দেখা যায় বোরো মৌসুমে বিআর৩ জাতে হেক্টর প্রতি ৩০ কেজি নাইট্রোজেন শেষ চাষে এবং ৩০ কেজি স্প্রে আকারে ব্যবহার করে ধান ফলানো সম্ভব। তবে হেক্টর প্রতি ৪০ কেজি নাইট্রোজেন মাটিতে প্রয়োগ এবং ৪০ কেজি স্প্রে করলে পাতা পুড়ে যায়। সুতরাং স্প্রে করে ইউরিয়া প্রয়োগ সুপারিশ করা হয়নি (BRRI Annual Report, 1974-75) 1
২. পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তরল ইউরিয়া ব্যান্ড প্লেসমেন্ট করে ধান ফলানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। তবে তিনবার উপরি প্রয়োগের মতো ভালো ফলন পাওয়া যায়নি (BRRI Annual Report, 1977) ।
৩. ১৯৭৮ সালে ব্রি বিজ্ঞানী ড. নিলুফার হাই করিম আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পিএইচ.ডি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, পাতায় বা মাটিতে ইউরিয়া দিলে ইউরিয়েজ অ্যানজাইমের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং ইউরিয়া সার NH₁/NO; আকারে রূপান্তরের মাধ্যমে গাছ গ্রহণ করে। কাজেই ধান গাছ পাতার মাধ্যমে ইউরিয়া সার গ্রহণ করতে পারে তা অনেক আগেই ব্রি’র বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে জানা গেছে, এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। (N.H. Karim, 1978. Photosynthesis and growth of rice influenced by potasssium nitrate and Urea fertilization, University of Florida, USA) |
৪. এরপর ১৯৯৭ সালে বরিশালের জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে তিনবার শতকরা ১.৫ ভাগ ইউরিয়া দ্রবণ স্প্রে করা হয়। এতে হেক্টর প্রতি আধা টন ফলন কমে যায় (BRRI Annual Report, 1998) ।
৫. বিগত ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ব্রি’তে ধারাবাহিকভাবে (ব্রি ধান৪৯) ও বোরো মৌসুমে (ব্রি ধান২৯ ও ব্রি ধান৪৫) ইউরিয়া স্প্রে নিয়ে বিস্তারিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। দুইবার উপরি প্রয়োগ করার পর ৩.৫% হারে ইউরিয়া স্প্রে করে আদর্শ ব্যবস্থাপনার প্রায় সমান ফলন পাওয়া সম্ভব, সেক্ষেত্রে আমন মৌসুমে শতকরা ৪ ভাগ এবং বোরো মৌসুমে ১৭ ভাগ ৭৪
ইউরিয়া সাশ্রয় হয়। এ বিষয়ক প্রকাশনায় লেখকবৃন্দ গবেষণা ফলাফল পুনঃ পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন (MIM Akhand et.al.2013.Eco-friendly Agril. J.6 (09)। টেকসই মাটির উর্বরতা, প্রয়োগ পদ্ধতি, সঠিক সময় নির্ধারণ এবং দ্রবণের ঘনত্ব সঠিকভাবে নির্ণয় করা মাঠে সহজ নয় বিধায় ব্রি থেকে পাতায় ইউরিয়া সার স্প্রে করার সুপারিশ করা হয়নি (BRRI Annual Report, 2010-2012) ।
৬. বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ২০০৮ সালে ইউরিয়া স্প্রে নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ব্রি ধান-২৯ এ মাটিতে দুইবার উপরি প্রয়োগ এবং ১-৩% ইউরিয়া দ্রবণ পাতায় স্প্রে করে হেক্টর প্রতি ৪.৭৭-৫.১৮ টন ফলন পান। পক্ষান্তরে মাটিতে তিনবার উপরি প্রয়োগ করে ফলন পান ৫.৩৪ টন/হে.। প্রান্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাবে ইউরিয়া স্প্রে’র প্রযুক্তি খরচ প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে এ গবেষকগণ তাদের ফলাফল পুনঃপরীক্ষার জন্য সুপারিশ করেন (Alam et al. 2010; J. Bangladesh Agril. Univ.8(2):199-202)
৭. শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালিত হয় ২০০৮-০৯ সালে। তারা দুইবার দ্রবণের ঘনত্ব ০.৫% এবং ১.০% হারে ইউরিয়া স্প্রে করে (যথাক্রমে ২০ এবং ৪০ কেজি/হে, হারে) যে ফলন পান তা মাটিতে প্রয়োগের (ব্রি অনুমোদিত) চেয়ে হেক্টর প্রতি প্রায় দুই টন কম (Hasanuzzaman et.al,2009; Intl.J.Sustain Agric, 1(1):01-05)।
৮. আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে ধান উৎপাদনে ইউরিয়া স্প্রে’র গবেষণা ফলাফলের ওপরে De Datta (1978) এর মন্তব্য “Foliar application of urea in split doses did not give favorable results over conventional methods of application” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “All-India Coordinated Rice Improvement Project” এর আওতায় ইউরিয়া স্প্রে’র ওপরে অনেক গবেষণা হয়েছে যার ফলাফলে মাটিতে ইউরিয়া প্রয়োগ স্প্রে করার চেয়ে ভালো ফল দিয়েছে (De Datta, 1981)। ৯. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ধান চাষে ইউরিয়া সারের ব্যবহার নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ- Central Rice Research Instititue (CRRI), India এর সুপারিশ হলো ধান চাষে তিনবার মাটিতে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।)
১০. ইরি (IRRI, Philippines) ধান চাষে ২-৪ বার মাটিতে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সুপারিশ এক টন ধান ও খড় উৎপাদন করতে ১৫-২০ কেজি নাইট্রোজেন ধান গাছকে আহরণ করতে হয়। অর্থাৎ বোরো মৌসুমে হেক্টর প্রতি ছয় টন ফলন পেতে হলে ধান গাছকে ৯০-১২০ কেজি নাইট্রোজেন আহরণ করতে হবে। এ হিসাবে ইউরিয়ার পরিমাণ হবে ১৯৫-২০০ কেজি। কিন্তু এদেশে ধান চাষে ইউরিয়ার ব্যবহার সক্ষমতা শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ মাত্র। ফলে ছয় টন ধান উৎপাদন করতে প্রায় ৬০০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু মাটি, পানি ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৩০০ কেজি এবং আমাদেরকে প্রয়োগ করতে হয় প্রায় ৩০০ কেজি। এই বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া সার ৩.৫% হারে স্প্রে করতে হলে ধান গাছের পুরো বৃদ্ধির সময়ের (Whole growth period) জন্য ১৭ (সতের) বার স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া কেবলমাত্র শেষ কিস্তির ইউরিয়া সার ৩.৫% হারে স্প্রে করতে হলে প্রায় ৬ বার স্প্রে করতে হবে। সর্বোপরি টেকসই মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ, উৎপাদন খরচ ও দ্রবণের ঘনত্ব কৃষক পর্যায়ে সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে না পারার বিবেচনায় ব্রি মাঠ পর্যায়ে ধান গাছে ইউরিয়া স্প্রে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের সুপারিশ করেনি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
পরিশেষে আমরা মনে করি বিএডিসি’র পদস্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরিফ হোসেন এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ব্রি:BRRI) বিজ্ঞানীগণ যৌথভাবে এ ধরনের একটা ফলপ্রসূ গবেষণার ফল যদি আমাদেরকে যৌথভাবে উপহার দিতে পারেন, তাহলে ধান চাষে একটা যুগান্তকারী বিপ্লব আসতে পারে। আমরা জনাব আরিফের গবেষণা প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই, পাশাপাশি যেহেতু তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নন, সুতরাং তাঁর গবেষণা ফলাফলকে পরিশীলিত করার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের (ব্রি: BRRI) সাথে যৌথ ফলাফলের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায়!!
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে = Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 HIGH QUALITY GARDENING SEEDS
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 HIGH QUALITY GARDENING TOOLS
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 ORGANIC FERTILIZERS AND PESTICIDES
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet