Soil and Fertilizer Management – মাটি ও সার ব্যবস্থাপনা।

Soil and Fertilizer Management

 মাটি:

 Soil and Fertilizer Management – পৃথিবীর একভাগ স্থল ও তিনভাগ পানি। স্থলভাগের যে অংশ কঠিন অথচ নরম এবং উপযোগী অবস্থায় উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তাকে কৃষি বিজ্ঞানের ভাষায় মৃত্তিকা বলে। ভূপৃষ্ঠের শক্ত আবরণকে শিলা বলে। বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক কারণে শীলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। চূর্ণিত অংশের সাথে জৈব পদার্থ মিশে মাটি তৈরি হয়। মাটি গাছের একমাত্র আশ্রয়। গাছ মাটিতেই জন্মায় এবং মাটি থেকেই তার খাদ্য সংগ্রহ করে, তাই তাকে নির্দিষ্ট জায়গার মাটিতে সঞ্চিত খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয় সেই কারণেই চাষের জন্য মাটি তৈরি ও তার পরিচর্যার বিশেষ প্রয়োজন।

 মাটির দুইটি স্তর

যেমন- ওপরের স্তর ও নিচের স্তর।

ওপরের স্তর

 ওপরের স্তরের মাটি রোদের তাপে ও ঝড়-বৃষ্টিতে অনবরত ক্ষয় হয়। তার ফলে এই স্তরের মাটির কণাগুলি নিচের স্তরের মাটির চেয়ে বেশি সূক্ষ্ম হয়ে যায়। গাছপালা ওর ওপরে পড়ে পচে। জীবজন্তুর মৃতদেহও এর সঙ্গে মিশে একে উর্বর করে তোলে। এইভাবে জৈব পদার্থ মেশার ফলে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার মাটির এই স্তরে থাকে।

 নিচের স্তর

মাটির নিচের সার সয়েল স্তর আদিম মাটির মতো। এর মধ্যে কোন জৈব পদার্থ থাকে না। এজন্য যেসব গাছের শিকড় মাটির এই নিচের স্তরে নেমে যায় তাদের জন্য গভীরভাবে চাষ করে এই স্তরের মাটির সঙ্গে গাছের খাবার বা সার মিশিয়ে দেয়া দরকার। মাটি কাঁদা ও বালির অনুপাতে তৈরি। সেই অনুপাত অনুসারে মাটির বিভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে।

যেমন-   বেঁলে মাটি,  এঁটেল বা কাঁদা মাটি, দোআঁশ মাটি,  জৈব মাটি ও  পলি মাটি।‎

বেলে মাটি

  • বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকায় পানি ধরে রাখতে পারে না।
  • এই রকম মাটি অল্প সময়ের মধ্যে শুকিয়ে যায়।
  • বেলে মাটিতে খাদ্যের পরিমাণও থাকে খুব কম, তাই বেলে মাটি সবজি চাষের জন্য অনুপযোগী।

এঁটেল বা কাঁদা মাটি

* এঁটেল মাটির মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভাগই কাঁদা, বালির পরিমাণ খুব কম।

* বৃষ্টির পর এঁটেল মাটি অনেকক্ষণ ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে ও সহজে শুকাতে চায় না। এই রকম জমিতে প্রায়ই পানি দাঁড়ায়।

 * এঁটেল মাটি যখন শুকিয়ে যায় তখন এমন শক্ত হয়ে ওঠে যে, তাতে লাঙ্গল দেয়া কঠিন হয়।

* এই মাটিতে নানা ধরণের সবজি চাষ করা যায়।

দোআঁশ মাটি

 * এই মাটিতে কাঁদা, বালি ও পলির কণা সমান পরিমাণে থাকে। তাই দোআঁশ মাটিতে সহজে চাষ করা যায়। * মাটির ভেতরে রস অনেকদিন থাকে, অথচ স্যাঁতস্যাঁতে হয় না।

* দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন ফসলের উপাদান সবচেয়ে বেশি।

জৈব মাটি:

 * এই মাটিতে ফসল ফলতে জৈব পদার্থ দরকার।

* গাছাপালা ও জীবজন্তুর মৃতদেহ মাটিতে মিশে পঁচে গিয়ে মাটিতে জৈব পদার্থের যোগান দেয় এবং মাটির পানিশোষণ ও পানিধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

 * জৈব পদার্থ মিশিয়ে অনুর্বর মাটিকে উর্বর করা যায়।

* যে মাটিতে জৈব পদার্থ যত বেশি থাকে তাতে গাছপালা জন্মায় ভালো এবং ফসলও ফলে বেশি এবং অনেকদিন পর্যন্ত মাটিকে উর্বর করে রাখে।

পলি মাটি:

 * নদী পাহাড় থেকে নেমে আসার সময়ে তার স্রোতে মাটিও নেমে আসে। সেগুলি থিতিয়ে নদীর তলায় জমতে থাকে। এইভাবে সঞ্চিত মাটিকে পলি মাটি বলে। এই মাটির মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁক থাকায় এর পানিধারণের শক্তি বেশি হয়। তাই পলি মাটি সহজে শুকিয়ে যায় না এবং ভিজে থাকে।

 *  পলি মাটি অত্যন্ত উর্বর, তাই এতে সব ধরণের ফসল লাগানো যায়।

মৃত্তিকার প্রকারভেদ:

 মৃত্তিকার উপাদানের তারতম্য অনুসারে মৃত্তিকা মোটামুটি দশটি বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা-

বেলে মাটি:

*   বালি বা বেলে মাটিতে শতকরা ৮০ ভাগ বালিকণা অল্পধিক ১০ ভাগ কর্দমকণা থাকে।

*  এই মাটির পানিধারণ ও উদ্ভিদের খাদ্য ধারণের ক্ষমতা খুবই অল্প।

*   বালির কণা সংযুক্ত থাকে না যার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও এই মাটিতে পানি জমে।

*   এই মাটিতে বাতাস চলাচল ও পানি চলাচলের কাজ সুষ্ঠুভাবে ঘটে।

*  বেলে মাটি সহজে পানিশোষণ করে থাকে এবং রৌদ্রের তাপে সহজে গরম হয়ে যায়।

*   বেলে মাটি চাষ-আবাদের পক্ষে বিশেষ অনুপযোগী না।

*  বেলে মাটিতে পটল, তরমুজ, কাঁকুড়, শসা ইত্যাদি ফসল জন্মায়।

 পলি মাটি:

* ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাটিকণার তলানি পড়ে নদী বিধৌত অঞ্চলে পলি মাটির সৃষ্টি হয়।

* এই মাটিতে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ পলি, ১৫-২০ ভাগ বালি-কাঁদা, ২০-৩০ ভাগ কর্দম কণা থাকে।

* পলি মাটি অত্যন্ত নরম। পলি মাটিতে পানি দিলে নরম ও আঁঠাল হয় এবং শুকিয়ে গেলে শক্ত হয়।

* পলি মাটিতে প্রায় সকল প্রকার ফসল জন্মে।

 এঁটেল বা কাঁদা মাটি:

* এই মাটিতে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ কর্দম কণা, ১০-২০ ভাগ সূক্ষ বালি কথা ও মোটামুটি ৩০ ভাগ পলি-কণা ও জৈব পদার্থ থাকে।

* এই মাটির পানিধারণ ক্ষমতা, সংসক্তি ক্ষমতা, নমনীয়তা, কৈশিকতা ও পানিশোষণ ক্ষমতা অত্যাধিক।

 * মাটির মধ্য দিয়ে পানি ও বাতাস চলাচল ভাল হয় না, কাঁদা মাটি ভিজে নরম ও আঠার মত চাটচটে হয়।

 * মাটি শুকিয়ে শক্ত হয় ও মাঝে ফাটল সৃষ্টি হয়।

* এঁটেল মাটিতে আমন ধান, উচ্চ ফলনশীল ধান ও গম জন্মায়।

দোআঁশ মাটি:

* এই মাটিতে পলি, কাঁদা ও বালি প্রায় সম পরিমাণে থাকে।

*  এই মাটির প্রকৃতি বেলে ও কাঁদামাটি মাঝামাঝি, মৃত্তিকা কণার অনুপাত অনুসারে এই মাটিকে বেলে দোআঁশ, পলি দোআঁশ, ও এঁটেল দোআঁশ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়।

 * এই মাটিতে প্রায় সকল প্রকার ফসল জন্মায়।

চুনা মাটিঃ

* এই মাটিতে শতকরা ১০ ভাগ চুন এবং অবশিষ্ট অংশে বালি ও কাঁদামাটি সমপরিমাণে মিশ্রিত থাকে।

 * এই মাটি ক্ষারীয় ধর্ম বিশিষ্ট।

* এই মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বেশি।

* জৈব সার প্রয়োগ করলে এই মাটি চাষযোগ্য হয়।

লোনা মাটি:

সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলের মাটি প্রধানতঃ লবণাক্ত হয়।

এই মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে।

 * উদ্ভিদ মূল দ্বারা এই মাটি হতে প্রযোজনীয় পানি শোষণ করতে পারে না।

 * সুন্দরবন অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত।

* এই মাটিতে নারিকেল, তুলা ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মায়।

 * অল্প লবণাক্ত মাটিতে আমন ধান, তুলা, ইক্ষু ও পাট চাষ করা যায়।

 লাল মাটি:

*  এই মাটিতে অধিক পরিমাণে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়াম ঘটিত ধাতব লবণ থাকায় দেখতে লাল দেখায়।

* এই মাটি অল্প অম্লভাবাপন্ন এবং এই মাটিতে জৈব পদার্থ অল্প থাকে।

* তুলা ও চীনাবাদাম এই মাটিতে ভাল জন্মায়।

কালো মাটি:

 * দক্ষিণাত্যের কালো ব্রাসাল্ট নামক লাভা প্রস্তর হতে এই মাটির উৎপত্তি।

* এই মাটিতে জৈব পদার্থ অধিক থাকে।

* এই মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বেশি।

 * এই মাটিতে তুলা ভাল জন্মায়।

 কাঁকর মাটি:

* এই মাটিতে কাঁকরের পরিমাণ বেশি থাকে।

* এই মাটির পানিধারণ ক্ষমতা নাই বললেই চলে।

* এই মাটি শীঘ্র শুষ্ক হয় এবং অল্প সময়েই রোদে গরম হয়ে যায়।

বোদ বা পীট মাটি:

* ভূ-ত্বকের উপর জৈব পদার্থ পতিত হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়।

* এই মাটিতে জৈব পদার্থ অধিক পরিমাণে থাকে।

*  এই মাটিতে চা ভাল জন্মে।

মৃত্তিকা সৃষ্টির বিভিন্ন কারণ সমূহ

প্রাকৃতিক কারণ:

* উত্তপ্ত, শৈত্য, পানি, বায়ু, তুষার, হিমবাহ প্রভৃতির সাহায্যে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়।

* তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য শিলাস্তর প্রসারিত ও সঙ্কুচিত হয়।

*  দিনে শিলাস্তর প্রসারিত হয় ও রাতে শিলাস্তর সংকুচিত হয়।

* বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে শিলা গঠিত হয় এবং এর প্রসারণ ক্ষমতাও বিভিন্ন।

 * শিলার উপরিভাগ যেমন দ্রুত উত্তপ্ত হয়, আবার তেমনি দ্রুত শীতল হয়ে থাকে। কিন্তু শিলার  অভ্যন্তরভাগ এমন হয় না। এই কারণে, একই তাপমাত্রায় শিলার অসম প্রসারণ ও সঙ্কোচণ ঘটে।

* কালক্রমে এই প্রকার অসম প্রসারণ ও সঙ্কোচণের ফলে শিলাস্তরে ফাটল ধরে।

*  শিলার ফাটলের মধ্যে পানি প্রবেশ করে ঠাণ্ডায় পানি জমে বরফে পরিণত হয়।

* পানি বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে ও ফাটলের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে।

ফলে ফাটল ক্রমশঃ বেড়ে যায় ও বরফ গলা পানি হলে এর আয়তন হ্রাস পায়। এইভাবে অসম প্রসারণ ও সঙ্কোচণের ফলে শিলা ভেঙ্গে চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়।

 * বৃষ্টির পানি বা নদীর পানি চূর্ণিত শিলাখণ্ডকে স্থানান্তরে নিয়ে যায়। ফলে, শিলাখণ্ডের মধ্যে ঘর্ষণ হয় ও ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। এই শিলাচূর্ণ নদীর স্রোতে একস্থান হতে অন্যস্থানে বাহিত হয়। এইভাবে নদীর তীরে ও মোহনা অঞ্চলে শিলাচূর্ণ জমা হয়ে মাটি সৃষ্টি করে।

 * বায়ু ও শিলাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে ও একস্থান হতে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

 * ক্ষয়িত অংশ কোন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তারপর কোন এক স্থানে জমা হয়ে মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

 রাসায়নিক কারণ:

 * রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা শিলাস্থিত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটে এক নতুন পদার্থ সৃষ্টি হয়।

* পানি, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি শিলার রূপান্তর ঘটাতে অংশগ্রহণ করে।

* রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য পানির উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন।

* পানিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য জৈব অম্ল দ্রবীভূত থাকলে পানির দ্রবণীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

*  শিলাস্থিত বিভিন্ন খনিজ পদার্থ পানিতে অম্লাধিক দ্রবীভূত হয়। এর ফলে শিলা মৃত্তিকায় পরিণত হয়। জৈবিক কারণ :

* প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দ্বারা চূর্ণিত শিলার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত হলে তা প্রকৃত মৃত্তিকায় রূপান্তরিত হয়।

* ছোট বড় উদ্ভিদ ও প্রাণি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খনিজ পদার্থের ক্ষয়সাধন করে মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

 * জৈব পদার্থের পচনের ফলে বিভিন্নপ্রকার জৈব অম্ল উৎপন্ন হয় ও খনিজ পদার্থের রূপান্তরে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

* উদ্ভিদের মূল শিলার ফাটলের মধ্যে প্রবেশের ফলে ফাটল বৃদ্ধি হয় ও শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।

* শিলা বা খনিজ পাদার্থের উপর শ্যাওলা, ছত্রাক ইত্যাদি নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ জন্মালে শিলা বা খনিজ পদার্থ ঠাণ্ডা ও আলগা হয়ে মৃত্তিকায় পরিণত হয়।

*  প্রাণিও মৃত্তিকা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

* কেঁচো, ইদুর, উই, পিপীলিকা ইত্যাদি প্রাণি ও মাটি উল্টা-পাল্টা করে দেয়।

* মৃত্তিকার জীবাণুর দেহাবশেষ পঁচে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন প্রকার মৃত্তিকা কণার বাহ্যিক গুণাবলী

বালি-কণা:

কণার আকৃতি অনুসারে বালিকণা চার ভাগে বিভক্ত। যথা- * মোটা বালি। * মাঝারি বালি। * সরু বালি ও  * খুব মিহি বালি।

বালি কণা সাধারণত খুব ঝুরঝুরে ও হালকা। বালি কণার সংশক্তি ক্ষমতা, নমনীয়তা, পানিধারণ ক্ষমতা, কৈশিকতা ও উদ্ভিদ খাদ্য ধারণের ক্ষমতা নেই বললেই চলে। কিন্তু বালি কণার মধ্য দিয়ে পানি ও বায়ু চলাচল বেশ ভাল হয়। বালি-কণাতে রাসায়নিক বিক্রিয়া কম হয়।

পলি-কণা:

* নদীবিধৌত অঞ্চলে এই মাটির প্রাধান্য বেশি। পলি-কণা অত্যন্ত মোলায়েম ও সূক্ষ্ণ গ্রন্থণযুক্ত হয়। সিক্ত পলি কণা আঁঠাল ও নমনীয় হয় এবং আয়তানেও বাড়ে। শুষ্ক হলে শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয়। কণার পানি-ধারণ ক্ষমতা, উদ্ভিদ-খাদ্য ধারণের ক্ষমতা ও সংশক্তি-ক্ষমতা বেশি। এই কণার পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা খুব কম। পলি মাটিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া বেশি হয়।

মৃত্তিকার সংস্কার সাধনঃ

* ভাল ফলনের জন্য যথাসময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে সার প্রয়োগ করা দরকার। আর সেই সারের স্বল্পতা মৃত্তিকার ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের উপর নির্ভর করে। মৃত্তিকার পিএইচ ৬.৫-৭.৫ এর মধ্যে থাকলে উদ্ভিদের খাদ্যেপাদান সহজলভ্য অবস্থায় থাকে। পিএইচ ৬.০ অপেক্ষা অল্প ও ৮.৫ -এর অধিক হলে সেই মাটিকে যথাক্রমে অম্ল ও ক্ষার মটি বলা হয়।

 

* (পিএইচ এর অর্থ- “হাইড্রোজেন” ক্যাটায়নের ওজন সুতরাং যে স্কেল বা মাপের দ্বারা কোন দ্রবণের হাইড্রোজেন পরমাণুর (H+) পরিমাণ প্রকাশ করা হয়, তাকে পিএইচ বলে।)

*  মাটি অম্ল হলে উদ্ভিদ খাদ্যের উপাদানের সহজ লভ্যতা হ্রাস পায়।

 * অম্লমাটিতে ফসফরাস ঘটিত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হলে, উত্ত খাদ্যের উপাদান লৌহ ও এ্যালুমিনিয়াম ফসফেটে রূপান্তরিত হয়। ফলে ফসফরাস উদ্ভিদের অগ্রহণযোগ্য হয়ে যায়।

 * অম্ল মাটিতে কতিপয় অপ্রধান খাদ্যোপাদানের দ্রবণীয়তা বৃদ্ধি পায় ও সেই খাদ্যগুলি উদ্ভিদের কাছে বিষাক্ত হয়ে যায়।

* আর্দ্র অঞ্চলে মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পায় ও শুষ্ক অঞ্চলে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকার উৎপাদিকা শক্তি অব্যাহত রাখতে হলে মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব সংশোধন করা দরকার।

 অম্ল মাটির সৃষ্টিঃ

* মাটির দ্রবণের মধ্যে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ হাইড্রোক্সিল আয়ন অপেক্ষা বেশি হলে মাটি অম্ল হয়।

 আর্দ্র অঞ্চলে কতিপয় কারণে মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পায়। যথা

* কতিপয় খাদ্যাপাদান (ক্যালিসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম)- এর নিঃস্বরণ।

*  অম্ল শিলা হতে সৃষ্ট মাটি স্বভাবতই অম্ল হয়।

*  অম্ল সৃষ্টকারী রাসায়নিক সার (যেমন-অ্যামোনিয়াম সালফেট) বারবার প্রয়োগ।

* জৈব পদার্থের পচনের ফলে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উভয়ে যুক্ত হতো অম্লতা সৃষ্টি করে।

অম্ল মাটির প্রভাব:

মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পেলে দস্তা, তামা, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি অগ্রাধান খাদ্য উপাদানের দ্রবণীয়তা বৃদ্ধি পায়। এই সকল খাদ্য উপাদানো দ্রবণীয়তা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যোপাদানগুলি উদ্ভিদের উপর বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। অপরপক্ষে, মলিবডেনাম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রকৃত খাদ্যোপাদানের সহজলভ্যতা হ্রাস পায়।

 * অম্লমাটিতে জৈব পদার্থ বিয়োজনকারী জীবাণু ও নাইট্রোজেন বন্ধনকারী জীবাণুদের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।

* এ ছাড়া শস্যের মূলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

* পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ ফসল অল্প অম্ল ক্ষার মাটিতে ভাল হয়।

অম্লমাটির সংস্কারসাধন:

* মাটির ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আয়রনের অপচয় হলেই মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং মৃত্তিকায় উক্ত আয়নের পুনরুদ্ধার সাধন হলেই মৃত্তিকার অম্লতা হ্রাস পায়। এই উদ্দেশ্যে অম্ল মাটিতে চুন প্রয়োগ করা হয়।

* অম্ল মাটিতে চুন প্রয়োগ করে, মৃত্তিকার অম্লতা হ্রাস পায় এবং কতিপয় অপ্রধান খাদ্যোপাদান যেগুলি অম্ল মাটিতে বিষাক্ত অবস্থায় ছিল সেগুলির (যেমন- লৌহ ম্যাঙ্গানিজ, তামা, দস্তা ইত্যাদি) ঘনত্ব হ্রাস পায়। ফলে মৃত্তিকাস্থ জীবাণুদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও মৃত্তিকার গঠন উন্নত হয়।

* মৃত্তিকার অম্লতা সংশোধনের জন্য কি পরিমাণ চুন প্রয়োগ করতে হবে, তা মৃত্তিকার অম্লত্বের পরিমাণ, মৃত্তিকার প্রকৃতি, কোন ফসল জমিতে চাষ করা হবে ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

* মৃত্তিকার পিএইচ যত কম হবে, চুনের পরিমাণও তত বেশি লাগবে।

 * ভারী মাটি অপেক্ষা হাল্কা মাটিতে চুন কম লাগবে।

* মাটি পরীক্ষা করে চুন প্রয়োগ করাই লাভজনক।

*  সাধারণভাবে বলা যায় যে, দোআঁশ মাটির পিএইচ যদি ৫.০ হয়, তাহলে অম্লতা সংশোধনের জন্য হেক্টর প্রতি ১,৬৮৭ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে (এক হেক্টর-২.৪৭ একর)।

* অল্প সময়ে অম্লতা দূরিকরণের জন্য একবারে চুন প্রয়োগ করা যাবে না। কারণ, অধিক পরিমাণে চুন প্রয়োগ করলে, কতিপয় উদ্ভিদ খাদ্যের সহজলভ্যতা (যেমন-লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা ইত্যাদি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া অনেক সময় বাড়তি ক্যালসিয়াম উদ্ভিদ কর্তৃক গৃহীত পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের গ্রহণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সাধারণ চুন, চুনাপাথর (খড়ি মাটি) ও ডলোমাইট (যার মধ্যে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম আছে) অম্লতা সংশোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

* চুন ছাড়াও কতিপয় রাসায়নিক সার প্রয়োগ (যেমন ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম সায়ানামাইড ইত্যাদি) করলেও মৃত্তিকার অম্লতা হ্রাস পায়। চুন প্রয়োগের সময়:

*  বীজ বপন বা ফসল রোপণের অন্তত একমাস পূর্বে জমিতে চুন প্রয়োগ করে লাঙ্গল দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

* চুন ও অ্যামোনিয়াম ঘটিত নাইট্রোজেন সার ও পানিতে দ্রবীভূত ফসফরাস একত্রে প্রয়োগ করা চলবে না বা চুন প্রয়োগে অব্যবহৃত সার পরে প্রয়োগ করা যাবে না।

 কারণ চুন ও সার একত্রে প্রয়োগ করলে সারের নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়া আকারে বায়ুতে মিশে যায় ও ফসফরাসের সহজলভ্যতা হ্রাস পায়।

লবণাক্ত ক্ষার মাটি:

* শুষ্ক বা অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে অর্থাৎ যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয় ও তাপমাত্রা বেশি থাকে, সেই সব অঞ্চলে লবণাক্ত ও ক্ষার মাটির অধিক্য দেখা যায়।

* এই সব অঞ্চলের মৃত্তিকার নিম্নস্তরে দ্রবণীয় লবণ থাকে এবং সেই সকল লবণ মাটির উপরে উঠে আসে এবং মৃত্তিকার উপরি স্তরের সাদা আস্তরণ পড়ে বর্ষাকালে এই পানির সাহায্যে মৃত্তিকার নিম্নস্তরে চলে যায় এবং বাষ্পীভবনের ফলে পুনরায় লবণ মৃত্তিকার উপরিস্তরে চলে আসে।

লবণাক্ত মাটি:

* এই মাটিতে দ্রবণীয় লবণ অধিক পরিমাণে থাকে।

* বিনিময়যোগ্য সোডিয়ামের শতকরা হার ১৫ ও মৃত্তিকার পিএইচ ৮.৫ হয়।

* এই মাটিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়ামঘটিত ক্লোরাইড, সালফেট ও কার্বোনেট লবণের প্রাচুর্য্য দেখা যায়।

 * ইগনিয়াস শিলা বিয়োজন হয়ে এই সব লবণ তৈরি হয় ও মৃত্তিকা প্রোফাইলে অবস্থান করে।

* মৃত্তিকায় অধিক পরিমাণে লবণ থাকায়, উদ্ভিদ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করতে পারে না।

* লবণাক্ত মাটিতে উৎপন্ন শস্য খর্বাকৃতির হয়, সব গাছ সমান হয় না।

* পাতার বর্ণ গাঢ় বাদামী বর্ণের হয় অনেক ক্ষেত্রে পাতা পুড়ে যায় বা শুকিয়ে যায় বা পাণ্ডরোগগ্রস্ত (ক্লোরোসিস) হয়ে পড়ে ফলে শস্যের ফলন কম হয়।

 ক্ষার মাটি:

* এই মাটিতে বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম শতকরা ১৫ ভাগের বেশি থাকে ও এই মাটির পিএইচ ৮.৫ এর বেশি হয়।

* এই মাটির অ্যানায়নসগুলি যথাক্রমে ক্লোরাইড, সালফেট, বাই-কার্বনেট ও অল্প পরিমাণে কার্বনেট।

* অধিক পরিমাণে সোডিয়াম থাকায় এই মাটিতে কণা ও জৈব পদার্থ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকার ফলে মৃত্তিকা কণা সংঘবদ্ধ অবস্থায় থাকে।

 * ফলে এই মাটিতে বাতাস ও পানি ভালভাবে চলাচল করতে পারে না।

* এই মাটিতে বাতাস চলাচল না হওয়ায় অধিক সোডিয়াম (যা প্রায়ই বিষাক্ত) থাকায় ফসল উৎপাদন করা কষ্টকর।

*ক্ষার মাটিতে প্রদত্ত ফসফরাস ক্যালসিয়াম ফসফেটে রূপান্তরিত হয়। এটা উদ্ভিদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়। লবণাক্ত ক্ষার মাটি: * যে মাটিতে অধিক পরিমাণে লবণ ও বিনিময়যোগ্য সোডিয়াম থাকে তাকে লবণাক্ত ক্ষার মাটি বলে। এটির পিএইচ ৮.৫-এর মধ্যে থাকে।

* এই মাটির সংস্কারসাধন করতে হলে ক্যালসিয়াম মিশিয়ে (যেমন-জিপসাম) সোডিয়ামকে প্রতিস্থাপন করতে হবে বা সালফার প্রয়োগ করে পানি সেচ দিয়ে সোডিয়াম সালফেট এই মাটিতে তৈরি হয় ও দ্রবণীয় লবণ দূর করতে হবে।

লবণাক্ত ক্ষার মাটি সংস্কার:

 নিম্নলিখিত উপায়ে এইসব মাটির সংস্কার করা যায়। যথা:

যান্ত্রিক উপায়েঃ

* মৃত্তিকার উপরিস্তরের লবণাক্ত স্তরকে চেঁচে ফেলা, মাটির নিচে পয়ঃপ্রণালী খনন, নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত লবণ অপসারণ, মাটিকে গভীরভাবে কর্ষণ প্রভৃতি পদ্ধতিতে কঠিন লবণযুক্ত স্তর ভেঙ্গে পানিসেচ দিয়ে লবণ অপসারণ প্রভৃতি প্রক্রিয়ায় লবণাক্ত ও ক্ষার মাটি সংস্কার করা যায়।

রাসায়নিক বা পরিবর্তন পদ্ধতিতে

 * রাসায়নিক দ্রব্য (যেমন-জিপসাম, সালফার ইত্যাদি) প্রয়োগ করে ক্ষার মাটি সংস্কার করা যায়। * মাটি পরীক্ষা করে রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ ঠিক করতে হবে। রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের ফলে উৎপন্ন দ্রব্য পানিসেচ দিয়ে নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় দূর করতে হবে।

* জৈব পদার্থ যেমন খামারের সার, আবর্জনা সার প্রয়োগ করে ক্ষার মাটির সংস্কার সাধন করা যায়। তবে এটা প্রয়োগ করা বিপদজনক ও ব্যয়বহুল।

* মাটি পরীক্ষা করে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করাই ভাল।

দমন পদ্ধতিতে:

* জমির মান স্থায়ীভাবে উন্নতি করতে হলে, জমিতে যেন পুনরায় লবণ সঞ্চিত হতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এর জন্য মালচিং করে বাষ্পীভবন রোধ করতে হবে। একবারে কিন্তু বেশি পরিমাণে পানিসেচ করা চলবে না।

লবণ সহনশীল শস্যের চাষ:

* লবণাক্ত মাটিতে সকল শস্য চাষ করা যায় না। সেইজন্য যে সমস্ত শস্য লবণাক্ত মাটিতে ভাল জন্মায় সে সব শস্য চাষ করতে হবে।

 * বারি তুলা, বীট পালং প্রভৃতি অধিক পরিমাণ লবণ। সহ্য করতে পারে এমন পরিমাণ।

* লবণ সহনশীল শশ্যগুলি হল-ধান, গম, ভুট্টা টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেটুস, গাজর, পিয়াজ, মটর, কুমড়া, সূর্যমুখী, রেড়ী, সীম, লুসার্ন প্রভৃতি।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে = Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 HIGH QUALITY GARDENING SEEDS

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 HIGH QUALITY GARDENING TOOLS

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 ORGANIC FERTILIZERS AND PESTICIDES

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *