Cultivation of bananas on the roof – ছাদে কলা চাষ ।

Cultivation of bananas on the roof

ছাদে কলা চাষ

 কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। কলাকে প্রাচীন সাহিত্যে কদলি বলা হতো। কলাগাছ, কলাপাতা, কলাগাছের শিকড় ও কলা সবই উপকারী। কলাগাছ ও কলাপাতা শুধুমাত্র পশু খাদ্য নয়। এদের আছে আশ্চর্যজনক ভেষজগুণ। রোগ নিরাময়ে অদ্বিতীয়। কলার পুষ্টিগুণ প্রচুর। কলা উপাদেয় খাদ্য। কাঁচা পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়। কলায় রয়েছে জলীয় অংশ ৭০ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, খাদ্যশক্তি (কিলোক্যালরি) ১০৯, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৮ গ্রাম, শর্করা ২৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১.০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২৪ মিলিগ্রাম। নারিকেল ছাড়া আর কোনো খাদ্যেই কলার মতো খাদ্যশক্তি নেই। তাই যেকোনো সময় পরিশ্রান্তে অথবা শক্তিক্ষয়জনিত অবস্থায় কলা আহার করলে শরীর পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। নারিকেলে ৩৫.৫৭ গ্রাম চর্বি থাকে। যদিও নারিকেলের শর্করা মাত্র ১০.২২ গ্রাম। নারিকেলে খাদ্যশক্তি ৩৭৬ কিলোক্যালরি। যা প্রচলিত ফলের মধ্যে সর্বোচ্চ। দৈনিক খাদ্য তালিকায় সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের খাবারে অন্তত ৬০ গ্রাম ফলাদি থাকা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে খাবারে আপনার পছন্দের যেকোনো কলা থাকতে পারে।

 ক. রোগ নিরাময়ে কলার ব্যবহার

 শুষ্ক কাশিতে:  একটি পাকা কলা চটকে অল্প পানিতে মিশিয়ে হালকা গরম করে সেটাকে ছেঁকে নিয়ে সেই পানিটা সকাল ও বিকালে কয়েক দিন খেলে উপশম হবে। তবে প্রতিদিন নতুন করে তৈরি করতে হবে। সন্ধিযুক্ত গলক্ষতে:  গলায় ব্যথা, লাল দেখায়, কর্ণমূল পর্যন্ত ব্যথা, মনে হয় যেন গলায় ঘা হয়েছে, গলার স্বর ভাঙা ভাঙা; এক্ষেত্রে একটা পাকা কলা ১ কাপ পানি দিয়ে চটকে গরম করে ছেঁকে নিয়ে সকালে এবং নতুন করে তৈরি করে বিকালে খেতে হবে। মাসখানিক খেলেই উপশম হবে।

কৃমিতে:  ১ চা-চামচ কলাগাছের শিকড়ের রস সকালে খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ৩-৪ চা-চামচ, কিশোর বয়স্কদের ২ চা-চামচ আর শিশুদের ১ চা- চামচ খাওয়াতে হবে।

 প্রদর রোগে:  ১টা কাঁচাকলা চাকা চাকা করে কেটে রাত্রে ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালি পেটে সেই পানি খেলে মাসখানিকের মধ্যে প্রদর রোগ সেরে যাবে।

 ডায়রিয়াতে:  কাঁচাকলা দুই তিনটা খোসাসহ দুই টুকরো করে কেটে অল্প পানিতে সিদ্ধ করে কলার ভর্তা ৪-৫ বার খেলে দাস্ত বা বেশি পায়খানা বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইনও চলবে।

প্রসূতির কাঁচা নাড়ি শুকাতে :    প্রসবের পর শরীরকে ঝরঝরে করার জন্য কাঁচা কলা পুড়িয়ে ভর্তা করে ভাত খেতে দিতে হবে।

খ. রোগ নিরাময়ে কলাপাতার ব্যবহার:

 কলাগাছের সবুজ পাতার রস, মোচা, থোড় সবই প্রয়োজনীয়। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠবদ্ধতা, আমাশয়, রক্তদুষ্টি, অম্লগ্যাস, উচ্চরক্তচাপ, লিভারের দোষ হলে কলাপাতার রস উপকারী। ইউরোপ ও অন্যান্য উন্নত দেশে কলাপাতার সাহায্যে বহু রোগের চিকিৎসা করা হয়। ফরাসি ডাক্তাররা শোথ, যক্ষ্মা,, আন্ত্রিক, আমাশয় ও অতিসারে কলাপাতার রস খেতে বলেন। না-কচি, না-শক্ত বিবর্ণ পাতা অর্থাৎ সবুজ পাতা বেটে বা থ্যাঁতলে ছেঁকে সকালের দিকে আধা কাপ খেতে হবে। নুন, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে খাওয়া চলবে না। কলাপাতায় থাকে ক্লোরোফিল। ক্লোরোফিল পেটে গেলে অস্ত্রের ঘা, লিউকোমিয়া, চর্মরোগ হয় না। কলাপাতার সবুজ রস রক্ত পরিষ্কার করে। শরীরের কোথাও ক্ষত, চর্মরোগ হলে কলাপাতার রস ঘষে লাগালে উপকার হয়। ব্রঙ্কাইটিস, নেফ্রাইটিস, রক্তক্ষরণ, জমা সর্দিতে কলাপাতার রস খুবই কার্যকরী। পুরিশি, কাশি, ক্ষয়রোগ ও থুথুর সঙ্গে রক্ত পড়লে সবুজ কলাপাতার রস প্রতিদিন ভোরে আধাকাপ পরিমাণ খেলে ভীষণ উপকার হবে। কচি কলাপাতা বেটে প্রলেপ দিলে কীট দংশন, হুল ফোটা, কাটায় উপকার হবে। সর্বপ্রকার দাঁতের ব্যথায় ‘প্ল্যান্টাগো’ (যা কলাপতা থেকে তৈরি হয়) হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা সুনামের সঙ্গে ব্যবহার করে আসছেন। প্যান্টাগোর মাদার তুলার দ্বারা দাঁতের গোড়ায় বাহ্যিক ব্যবহারে দাঁত ব্যথা আরোগ্য হয়। দন্তশূল, কর্ণশূল, কাটা, পোড়া, আঘাতাদি, সর্পদংশন, ইরিসিপেলাস ইত্যাদি নানাবিধ রোগে প্যান্টাগো সার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। গলগণ্ড, ফুলে ওঠা, জ্বর, শিরপীড়া সারাতে প্যান্টাগো ব্যবহৃত হয়।

 কানের ব্যথায় :   কলাগাছের মাঝের গোল অর্থাৎ খুলে যায়নি, সেই পাতাকে খ্যাঁতো করতে হবে। রস নিংড়ে নিয়ে একটু গরম করতে হবে। ওই রস ২ ফোঁটা একবার কানে দিলেই বেদনা কমে যাবে। প্রয়োজনে আবার দিতে হবে।

 সাবধানতা :   কাঁচাকলা উপাদেয় ও সুস্বাদু তরকারি হলেও তরকারিতে খেলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দিতে পারে এবং পেটে বায়ু জমতে পারে। মোচা ও থোড়ের তরকারি সবসময় খেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এদের মধ্যে অক্সালিড এসিড বিদ্যমান। পাকা কলা বেলা ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে খাওয়া উচিত। যখন তখন পাকা কলা খেলে ক্ষতি হতে পারে। কলা ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে, গিলে খেতে নেই। পাকা কলা মুখের লালাতেই হজম হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বিচিকলা, চম্পাকলা অন্যতম। তবে ছাদের বাগানে হাফ ড্রামে বা এই জাতীয় সিমেন্টের পটে সব ধরনের কলার জাত চাষ করা সম্ভব। কলা যেহেতু এক মৌসুমের ফল, সুতরাং অনায়সে যেকোনো ধরনের কলা গাছ এক বা একাধিক চাহিদা অনুসারে ছাদ বাগানে লাগানো যায়।

ছাদে কলার চারা লাগানোর পদ্ধতি :   ছাদে কলার চারা লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে কলা গাছের চারা রোপণ করতে হবে। কলার দুই রকমের চারা পাওয়া যায়। একটা হলো অসি চারা, অপরটি হলো পানি চারা। তবে অসি চারা লাগানোই উত্তম। অসি চারা বা তেউরের পাতা সরু, সুচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুঁড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কাণ্ড ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল চারা বা তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এখানে বলে রাখা আবশ্যক কলার চারা সারা বছরই লাগানো যায়। তবে চাষি ভাইয়েরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে সময়ে কলার চারা রোপণ করেন, ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে সেই সেই সময়ে রোপণ করাটাই উত্তম। প্রথম রোপণ কাল: আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। দ্বিতীয় রোপণ কাল: মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। তৃতীয় রোপণ কাল: চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়। চারা মাটির একেবারে গভীরে অথবা মাটির ওপরে লাগানো যাবে না। কলা চারা লাগানোর আগে চারার গুণাগুণ এবং মাতৃ কলাগাছ রোগাক্রান্ত কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। কলা চারা রোপণের পর একটু বড় হলে পাশে একটা খুঁটি বেঁধে ঠেস দিতে হবে যেন চারাটি বাতাসে হেলে না পড়ে। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে।

 অন্যান্য পরিচর্যা :   কলা গাছের বিভিন্ন পরিচর্যার জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।

চারা রোপণের পরের পরিচর্যা :  চারা রোপণের পরে গাছের গোড়ায় যেন কোনো ধরনের আগাছা না জন্মাতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মরা ডাল বা পাতা সরিয়ে ফেলতে হবে। চারা রোপণের পরে চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম পটাশ সার একত্রে পানিতে ভালো করে মিশিয়ে হাফ ড্রামের কিনারায় চারদিকে ঘুরিয়ে প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি দুই মাস পরপর এই মাত্রায় এবং এই নিয়মে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। হাফ ড্রামে পরিমিত সেচ দিতে হবে, তবে কখনো যেন সেখানে পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। কলা গাছে মোচা আসার পর, পরবর্তী মৌসুমে রোপণের জন্য গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেওয়া ভালো।

কলা গাছের রোগবালাই ব্যবস্থাপনা :  কলা গাছে তেমন একটা পোকামাকড় দেখা যায় না। কখনো জাবপোকা ও থ্রিপস দেখা দেয়। তবে কলার বেশ কয়েকটি রোগ আছে। আসুন সে সম্পর্কে আমরা কিছুটা জেনে নিই।

কলার পানামা রোগ :  এই রোগ কলার চাষিদের জন্য মারাত্মক এক সমস্যা। কারণ এ রোগের কারণে কলার উৎপাদন শূন্যের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে। এ রোগ Esarium oxysporum cubense নামক এক প্রকার ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। পূর্বের ফসলে রোগ থাকলে বা রোগাক্রান্ত গাছ থেকে চারা সংগ্রহ করলে পরের বছর আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চারা রোপণের সময় বয়স কম হলে, নিম্নমানের নিষ্কাশিত মাটি হলে, গাছের গোড়ায় অধিক আগাছা ও ঘাস হলে এবং আন্তঃপরিচর্যার অভাব হলে। পানামা রোগে পুরাতন পাতায় হলুদ বর্ণের দাগ দেখা যায়। পুরাতন পাতা ক্রমান্বয়ে সমস্ত অংশ হলুদ হয়ে যায়। পাতার কিনারা ফেটে যায় ও বোঁটা ফেটে যায়। লিফব্লেট (পাতা) ঝুলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। দুই-তিন দিনের মধ্যে গাছের সমস্ত পাতা ঝুলে পড়ে (মধ্যের মাইজ বা হার্ট লিফ ছাড়া)। কলাগাছের গোড়া মাটির লেভেলের কাছাকাছি লম্বালম্বি ফেটে যায়। আক্রান্ত গাছ থেকে অস্বাভাবিক থোড় বের হয়। আক্রান্ত গাছ ও রাইজোম এর ভেতর কালচে বর্ণ দেখা যায়।

Banana Panama disease

চিত্র: কলার পানামা রোগ

দমন ব্যবস্থাপনা:

১. রোগমুক্ত মাঠ থেকে সাকার সংগ্রহ করতে হবে।

 ২. মাঠ থেকে রোগাক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

 ৩. রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।

 ৪. রোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয় এমন ফসল, যেমন- বেগুন, টমেটো, ঢ্যাঁড়স প্রভৃতির সাথে কলা       

     চাষ না করা।

৫. একই জমিতে ২-৩ বছর পর ফসল বদল করে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা।

কলার সিগাটোকা রোগ :  

এ রোগের কারণ হলো সারকোসপোরা মুছি (Cercospora musae) নামক এক প্রকার ছত্রাক।

 রোগের অনুকূল অবস্থা

ক. পূর্বের ফসলে রোগ থাকলে পরের বছর আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

খ. গাছে বেশি পাতা হলে এবং মাটি থেকে প্রথম পাতার দূরত্ব কম হলে।

গ. নিম্নমানের নিষ্কাশিত মাটি হলে।

ঘ. বাগানে অধিক আগাছা ও ঘাস হলে এ রোগ হয়ে থাকে।

 লক্ষণসমূহ :

১. সবচেয়ে নিচের পাতার কিনারায় সমান্তরালভাবে হালকা-বাদামি থেকে হলুদ বর্ণের দাগ দেখা যায় এবং দাগগুলো পানিতে ভেজা মনে হয়।

২. দাগগুলো আকারে বৃদ্ধি পায় এবং স্পিন্ডিল আকার ধারণ করে, যার কেন্দ্রস্থল ধূসর থেকে বাদামি বর্ণের হয়।

৩. রোগের অগ্রগতি অবস্থায় অনেকগুলো দাগ একত্রে বড় আকারে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং পাতার কিনারা শুকাতে শুরু করে।

৪. রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে গাছ ছোট ছোট সাকার উৎপাদন করে।

Sigatoka disease of banana

চিত্র: কলার সিগাটোকা রোগ

ব্যবস্থাপনা :

১. রোগাক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে।

২. বাগানের মাটি সুনিষ্কাশিত রাখতে হবে।

 ৩. যেসব শস্য রোগ বহন করে (যেমন- বেগুন, টমেটো প্রভৃতি) সেগুলো অপসারণ করা।

৪. শস্য পর্যায় অবলম্বন করা।

১০০

৫. মুড়ি ফসল চাষ না করা।

৬. রোগাক্রান্ত হলে ফসলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। যেমন- টিল্ট ০.২% হারে বর্ষার পূর্বে একবার এবং পরে দুই বার স্প্রে করতে হবে।

 কলার বানচিটপ রোগ :    বৃদ্ধির যেকোনো পর্যায়ে কলাগাছে এই ভাইরাস গাছের যেকোনো অংশকে সংক্রমিত করতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পাতার গোড়া, মধ্যশিরা ও কচি পাতার নিচের পাশের শিরায় ঘন সবুজ দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে, এ দাগগুলো পত্রফলকের শিরা বরাবর ছোট ছোট ঘন সবুজ বিন্দু ও ড্যাশ এর বিন্যাসে (যাকে মোর্স কোড প্যাটার্ন বলা হয়) আবির্ভূত হয়। আক্রান্ত পাতার বৃদ্ধি থমকে যায়, সরু ও খাড়া হয় এবং প্রান্ত কোঁকড়ানো ও হলুদ হয় যা বাদামি পচনে রূপান্তরিত হয়। সংক্রমণ বাড়লে কচি পাতায় এ লক্ষণগুলো আরও খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। শীর্ষে হালকা সবুজ পাতার সম্মিলন ঘটে, যার জন্য ‘ঝোপালো মাথা’ অবয়ব গড়ে ওঠে। সামগ্রিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছে কাঁদি বা ফল উৎপাদন হয় না। ফল যদি কিছু হয়ও, সেক্ষেত্রে কলাগুলো বিকৃত ও ছোট হয়।

Banana Bunchitop disease

 চিত্র: কলার বানচিটপ রোগ

দমন ব্যবস্থাপনা :   প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত হলে, সাবান পানি বা কীটনাশক ব্যবহারে জাবপোকার সংখ্যা দমন করতে হবে। কারণ জাবপোকা এই রোগ ছড়ানোর বাহক হিসেবে কাজ করে। সম্ভবমতো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার আওতায় জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বদা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিন। ভাইরাস ঘটিত রোগের সরাসরি রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। যাহোক, সাইপারমেথ্রিন, অ্যাসিটামিড, ক্লোরোপাইরিফস বা সংশ্লিষ্ট কীটনাশকের ব্যবহার জাবপোকার সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে

পারে। আক্রান্ত গাছ বা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কচি ডগা মেরে ফেলতে আগাছানাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। বাগান থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলার (রোগিং) ক্ষেত্রে সেগুলো কেরোসিনের গুঁড়া বা কীটনাশক দিয়ে শোধন করে জাবপোকা মেরে ফেলতে হবে। কলার জাবপোকার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করা এক প্রকার ভাইরাসের কারণে এসব লক্ষণ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেত্রে এক বাগান থেকে আরেক বাগানে সংক্রমিত রোপণ সামগ্রী পরিবহণের কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। অন্যান্য আবাসের মধ্যে রয়েছে আদা, হেলিকোনিয়া এবং কচু। কলার জাত তাদের সংবেদনশীলতা অনুসারে ভিন্ন হয়। এ ভিন্নতা মূলত লক্ষণ প্রকাশের জন্য গৃহীত সময়ের ওপর ভিত্তি করে হয়। একটি গাছ সংক্রমিত হলে তা থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করতে পারে না। জাবপোকার মাধ্যমে গৌণ আক্রমণের চাইতে সংক্রমিত চারার মাধ্যমে প্রাথমিক সংক্রমণ সাধারণত অনেক বেশি ক্ষতিকর। বসন্ত বা উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় লক্ষণগুলো আরও প্রকট হয়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

■ শুধুমাত্র ভালো উৎস থেকে নীরোগ চারা ব্যবহার করুন।

 ■ সহজলভ্য হলে অধিকতর সহনশীল জাতের চাষ করুন। রোগাক্রান্ত গাছ আছে কি না নিশ্চিত হতে ফসলের খেত নিয়মিত নিরীক্ষা করুন।

■ সংক্রমিত কলা গাছ দূর করুন, তারপর সেগুলো শুকিয়ে গেলে পুড়িয়ে ফেলুন।

 ■ সহযোগী গাছ বা আদা, হেলিকোনিয়া ও কচুর মতো বিকল্প আবাস দমন করুন। দুই খেতের মাঝে কলা চাষমুক্ত নিরপেক্ষ অঞ্চল সৃষ্টি করুন।

 ■ ভিন্ন অঞ্চলে কলা গাছ পরিবহণ করবেন না।

চারার প্রাপ্তিস্থান :  বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জাতের কলার চারা পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও কলার চারা সংগ্রহ করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *