করমচা আমাদের দেশের একটা ঐতিহ্যবাহী দেশজ ফল। এই ফলটি অনেকটা বিলুপ্ত হতে বসেছে। আকারে ছোট ও টকজাতীয় হলেও এটি মনোরম ফল এবং এর মধ্যে পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক বেশি। এটিকে আমাদের ছাদ বাগানের জন্য অনায়াসে পছন্দ করে লাগাতে পারি। করমচার ইংরেজি নাম Karanda এবং বৈজ্ঞানিক নাম Carissa carandas। ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে জমাট বাঁধা রক্তের মতো লাল হয়। কাঁটাযুক্ত গুল্মজাতীয় গাছে জন্মে থাকে ফলটি। বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল ধরে। পরবর্তীতে বর্ষায় ফল পাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম করমচায় শর্করা রয়েছে ১৪ গ্রাম, প্রোটিন-০.৫ গ্রাম, ভিটামিন-এ ৪০ আইইউ, ভিটামিন-সি ৩৮ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.২ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, কপার ০.২ মিলিগ্রাম ও পটাশিয়াম ২৬০ মিলিগ্রাম। যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে করমচা না খাওয়াই ভালো। এবার তাহলে করমচা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক: টকজাতীয় এই ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। নিয়মিত করমচা খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে। যারা খাবারে রুচি পান না তাদের জন্য করমচা প্রাকৃতিকভাবে সমাধানের উপায় হতে পারে।
এছাড়াও জ্বর, ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগীদের জন্য উপকারে আসে করমচা। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ এই ফল খাওয়ায় শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে তুলে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ করে। সেই সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। যাদের লিভার ও কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত করমচা খাওয়া উচিত। করমচায় থাকা কপার কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং এই উপাদানটি লিভার ও কিডনির ক্ষতকে সারিয়ে তুলে।
ভিটামিন-সি এবং পটাশিয়ামে ভরপুর এই ছোট্ট ফল শারীরিক ক্লান্তিভাব দূর করে এবং ভিটামিন-সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। করমচার পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে পান করলে কালাজ্বর নিরাময় হয়। করমচার শিকড়ের রস চুলকানি ও কৃমি দমনে খুব ভালো কাজ করে।
করমচার জাত : আমাদের দেশের করমচার কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরেফিরে লাল, সাদা ও বেগুনি বিভিন্ন জাতের করমচা পাওয়া যায়। সুতরাং, এসব জাতের মধ্যে আপনার ছাদ বাগানের জন্য যেটা পছন্দ সেটা লাগাতে পারেন।
ছাদে করমচার চাষ এবং পরিচর্যা :
ছাদে করমচার চারা/কলম চারা লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা তার থেকে খানিকটা ছোট টবেও লাগানো যেতে পারে, কারণ করমচা গাছের আকার আকৃতি খুব বড় হয় না এবং এই গাছের শিকড়ের বিস্তৃতিও খুব বেশি নয়। সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগেও করমচা লাগানো যেতে পারে। পট বা টব নির্বাচনের পরে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে করমচার কলম/কাটিং রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে।
তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতেও দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে।. সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অত্র পুস্তকের “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের “বিভিন্ন বয়সি ফল গাছের জন্য বছরভিত্তিক সার প্রয়োগের মাত্রা” অনুচ্ছেদে বর্ণিত নিয়মাবলি অনুসরণ করুন। অধিকন্তু অন্যান্য পরিচর্যার ব্যাপারেও “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের অপরাপর বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ ধরনের কোনো রোগ পোকামাকড়ের তেমন কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।
করমচাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের তেমন একটা নেই বললেই চলে। তবে সাদা মাছি, থ্রিপস, ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ, জাবপোকা দেখা দিলে অন্যান্য ফল চাষে যে ধরনের ব্যবস্থাপনার কথা অন্যান্য ফল চাষের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সেটা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
চারা/কলমের প্রাপ্তিস্থান : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো জাতের করমচার চারা/কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও এসব চারা/কলম সংগ্রহ করতে পারেন।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet