পেঁপে এমন একটি ফল যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাল অবস্থায় ফল হিসেবে খায়। পেঁপের পুষ্টিমান যেমন বেশি তেমনি পেঁপেতে রয়েছে অনেক ভেষজ গুণাগুণ।
পেঁপের পুষ্টিমান: পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও আয়রন বিদ্যমান। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য পাকা পেঁপেতে ৮৮.৪ ভাগ জলীয় অংল ০.৭ গ্রাম খনিজ, ০.৮গ্রাম আঁশ, ১.৯ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ৮.৩ গ্রাম শর্করা ৩১.০ মি.গ্রা.লৌহ, ০.০৮ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ০.০৩ মি.গ্রা. বি-২, ৫৭.০ মিগ্রা ভিটামিন সি, ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪২ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি রয়েছে।
পেঁপের ঔষধিগুণ: অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন ব্যবহার করা হয়। পেঁপের আঠা ও বীজ কৃমিনাশক প্লীহা যকৃতের জন্য উপকারী। পেঁপের এসব পুষ্টি ঔষধি গুণাগুণের জন্য বলা হয়ে থাকে “প্রতিদিন পেঁপে খাও বাড়ি বাইরে ডাক্তার তাড়াও (A papaya a day keeps the Doctor away)”।
পেঁপের জাতসমূহ: ছাদ বাগানে রোপণের জন্য পেঁপের জাত নির্বাচন বেশ জরুরি। দেশি পেঁপে অপেক্ষা হাইব্রীড জাতের পেঁপে নির্বাচন করা ভালো। হাইব্রীড জাতের পেঁপে গাছে বেশ ছোট অবস্থায় ফল আসে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) হতে ১৯৯২ সালে শাহী নামের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে। জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো- এটি একটি একলিঙ্গী জাত। গাছের উচ্চতা ১.৬ থেকে ২.০ মিটার। কাণ্ডের খুব নিচু থেকে ফল ধরে। ফল ডিম্বাকৃতি এবং ওজন ৮০০-১০০০ গ্রাম। ফলপ্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০- ৫৫০টি। রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। ফল বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। গাছপ্রতি ফলের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০টি। জাতটি দেশের সব জায়গায় চাষ উপযোগী। এটি ছাদ বাগানে টবে লাগানোর জন্য বেশ উপযোগী। হাইব্রীড জাতের বেশ জনপ্রিয় জাত হলো:
(১) রেডলেডি: ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি। মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সে. মি. হওয়ার পরে ফল ধরা শুরু হয়। ৯০-১২০ দিনে ফুল ও ফল আসে।
(২) সুইট লেডি: ৯০-১২০ দিনে ফুল ও ফল আসে ১২০-১৫০ দিনে ফল সংগ্রহ করা যায়। বছরে প্রতিটি গাছে ৮০-১০০ কেজির বেশি পেঁপে পাওয়া যায়। এছাড়া ওয়াশিংটন, হানিডিউ, রাঁচি, ইত্যাদি জাতেরও চাষ হয়ে থাকে। পুষাজায়েন্ট, পুষা ম্যাজেস্টি, সলো ইত্যাদি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য। সারা বিশ্বে পেঁপের বংশবিস্তার বীজ দ্বারাই হয়।
চারা তৈরি বা চারা সংগ্রহ: পেঁপের চারা বীজতলা ও পলিথিন ব্যাগে তৈরি করা যায়। বীজতলায় চারা তৈরির ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ সে.মি. সারি করে প্রতি সারিতে ৩ থেকে ৪ সে.মি. গভীরে বীজ বপন করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৫×১০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগে সমপরিমাণ পলি মাটি, বালি ও পচা গোবরের মিশ্রণ দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভর্তি করতে হবে। পলিব্যাগের তলায় ২ থেকে ৩টি ছিদ্র করতে হবে এবং প্রতিটি ব্যাগে ২ থেকে ৩টি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের পর ২ থেকে ৩ দিন অন্তর পানি দিতে হবে। বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা বের হয় এবং ৪০-৫০ দিন পর সেই চারা রোপণের উপযোগী হয়। এছাড়া বিশ্বস্ত নার্সারী থেকে পলিব্যাগে বা কোকোপিট দিয়ে তৈরি প্লাস্টিক ক্রেটে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
বীজ বপন বা চারা রোপণের উত্তম সময়: আশ্বিন থেকে পৌষ মাস হলো পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময় এবং বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর (মাঘ-ফাল্গুন মাসে) অর্থাৎ শীত শেষে বসন্তের আবহাওয়া শুরু হলেই চারা রোপণের উপযোগী হয়।
ছাদে পেঁপের চারা লাগানোর পদ্ধতি: ছাদে পেঁপের চারা লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে পেঁপে চারা রোপণ করতে হবে। সাধারণ মানের পেঁপে লাগালে একটা টবে তিনটা করে চারা লাগাতে হবে। কারণ পেঁপে গাছে ফল আসার জন্য পুরুষ এবং স্ত্রী গাছ থাকা দরকার। ১০টি স্ত্রী পেঁপে গাছের জন্য একটা পুরুষ গাছ থাকলেই যথেষ্ট। তবে একটা পেঁপে গাছের জন্যও আরেকটা পুরুষ গাছ থাকা দরকার নইলে পেঁপে ধরবে না। তবে হাইব্রীড পেঁপে চারা লাগালে প্রতিটি গাছেই পেঁপে ধরবে। সেক্ষেত্রে প্রতি টবে একটা করে চারা লাগালেই চলবে। ছাদ বাগানের জন্য হাইব্রীড চারা লাগানোই উত্তম। আপনার ছাদ বাগানের ড্রামে পেঁপে লাগালে চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতেও দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজন মতো গাছে সেচ দিতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যা: বিভিন্ন পরিচর্যার ব্যাপারে “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন। যেকোনো পেঁপে গাছ থেকে দুই বছরের বেশি ফল
না নেওয়াই ভালো। ফলে ছাদ বাগান হতে নিয়মিত পেঁপে পাবার জন্য প্রতিবছর নতুন করে ১/২টা গাছ লাগানো ভালো।
পেঁপের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা: চারা রোপণের পরে গাছের গোড়ায় যেন কোনো ধরনের আগাছা না জন্মাতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মরা ডাল বা পাতা সরিয়ে ফেলতে হবে। চারা রোপণের পরে চারায় নতুন পাতা গজালে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ও ২৫ গ্রাম পটাশ সার একত্রে পানিতে ভালো করে মিশিয়ে হাফ ড্রামের কিনারায় চারদিকে ঘুরিয়ে প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতি দুই মাস পরপর এই মাত্রায় এবং এই নিয়মে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ফল ধরার পরে বেশি করে ফল ধরলে কিছু পাতলা করে দেওয়া যেতে পারে। হাফ ড্রামে পরিমিত সেচ দিতে হবে, তবে কখনো যেন সেখানে পানি জমে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।
পেঁপের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন: পেঁপের রোগবালাইয়ের মধ্যে অ্যানথ্রাকনোজ, মোজাইক ও পাতা কোঁকড়ানো রোগ অন্যতম। আর পোকার মধ্যে মিলিবাগ উল্লেখযোগ্য। কোনো ধরনের পোকামাকড় বা রোগবালাই দমনের জন্য আগেই বালাইনাশক ব্যবহার করবার দরকার নেই। প্রথমত, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার অনুসরণ করতে হবে; সেটাতেও কোনো কাজ না হলে জৈব বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত এই বইয়ের পূর্ববর্তী “ছাদ বাগানের বালাই ব্যবস্থাপনা” অনুচ্ছেদে আলোচিত বিষয়াবলি অনুসরণ করুন। সুনির্দিষ্ট কিছু বালাই ব্যবস্থাপনার কথা নিচে উল্লেখ করা হলো।
অ্যানথ্রাকনোজ: এ রোগের কারণে ফলের গায়ে বাদামি পচন রোগ দেখা দেয়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ছত্রাকজাতীয় রোগের জন্য বাজারে প্রচলিত ভালো প্রতিষ্ঠানের ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ১০ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে।

চিত্র: পেঁপের অ্যানথ্রাকনোজ রোগ
পেঁপের মোজাইক: এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতায় হলুদ রং এর ছোপ ছোপ দাগ পড়ে, পাতার বোঁটা বেঁকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। জাবপোকার আক্রমণে এ রোগ ছড়ায়। এই রোগের কোনো প্রতিকার নেই, একমাত্র গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলা।

চিত্র: পেঁপের মোজাইক ভাইরাস
মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা: সাম্প্রতিক সময়ে মিলিবাগ পেঁপের একটি ক্ষতিকর পোকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আক্রান্ত পাতায় সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ফলে শুটিমোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা বা কাণ্ড সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে জৈব বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে হাফ ড্রামে লাগানো পেঁপে গাছে মিলিবাগ লাগলে সেটা হাত দিয়েই মেরে ফেলা সম্ভব।

চিত্র: পেঁপের মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা
চারার প্রাপ্তিস্থান: বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের পেঁপের চারা পাওয়া যায়।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet