পেয়ারাকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আপেল বলা যায়। পেয়ারা স্বাদে ভালো, ভিটামিন সি ও শর্করাতে পরিপূর্ণ এবং ঔষধিগুণসম্পন্ন ফল। পেয়ারাতে পেকটিন থাকায় এটা দিয়ে জ্যাম জেলি তৈরি করা যায়। কৃষি ও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন আমাদের দেশি পেয়ারার পুষ্টিমান, বিদেশি আপেল অপেক্ষা অনেক বেশি। পেয়ারাকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আপেল বলা হলেও আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর হলো এই ফলটি এখন সারা বছরই আমাদের বাগানে বা ছাদে চাষ করা সম্ভব। পেয়ারা বেশ কষ্টসহিষ্ণু ফল গাছ, তাই পেয়ারা সব ধরনের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে। বিভিন্ন জঙ্গল ও পাহাড়ের ঢালে পেয়ারা ভালো জন্মে। যে সমস্ত পেয়ারা জাত ছাদ বাগানে হাফ ড্রাম বা এই জাতীয় টবে বা পটে চাষ করা যায় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম জাতসমূহ হলো:
- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) হতে উদ্ভাবিত জাতসমূহ। কাজি, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩।
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে উদ্ভাবিত জাতসমূহ: বাউ পেয়ারা-১ (মিষ্টি), বাউ পেয়ারা-২ (রাঙা), বাউ পেয়ারা-৩ (চৌধুরী), বাউ পেয়ারা-৪ (আপেল)
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে উদ্ভাবিত জাতসমূহ: ইপসা পেয়ারা-১ ও ইপসা পেয়ারা-২
- অন্যান্য জাতসমূহ: থাই পেয়ারা, পলি পেয়ারা, আঙুর পেয়ারা ইত্যাদি।
ছাদে পেয়ারার কলম লাগানোর পদ্ধতি:
ছাদে পেয়ারার চারা/কলম লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে পেয়ারা গাছের কলম রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে
১২৮
পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। মাটিভে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে পেয়ারা চারা/কলম রোপণ করলে কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য পরিচর্যা: পেয়ারার বিভিন্ন পরিচর্যা সহ প্রতিবছর দু’বার সার প্রয়োগের জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।
রোগবালাই দমন:
এই পর্বে আমরা পেয়ারার রোগ ও পোকামাকড়ের বালাই ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে রাসায়নিক পদ্ধতির কথা বললেও সবচেয়ে ভালো হলো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ পোকামাকড় দমন করা। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোগ পোকামাকড় দমন করা সম্ভব না হলেই কেবলই রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত “ছাদ বাগানের বালাই ব্যবস্থাপনা” অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। অধিকন্তু পেয়ারাতে বিশেষ বিশেষ যেসব পোকামাকড় ও রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয় সে সম্পর্কে খানিকটা ধারণা নিচে দেওয়া হলো।
পেয়ারার সাদা মাছি:
সাদা মাছি পেয়ার সহ অনেক ফলের জন্য একটা বড় ধরনের সমস্যা। এই পোকা পাতার রস চুষে খায়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে খুব দ্রুত। পাতায় অসংখ্য সাদা বা হলদেটে দাগ দেখা যায়। সাদা তুলার মতো বস্তু ও সাদা পাখাযুক্ত মাছি দেখা যায়।
চিত্র: পেয়ারার সাদা মাছি
প্রতিকার: সাদা আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন বা আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে পোকা ধরা যায়। আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। ৫০ গ্রাম সাবানের গুঁড়া ১০ লিটার
পানিতে গুলে পাতার নিচে সপ্তাহে ২/৩ বার ভালো করে স্প্রে করতে হবে এবং সাথে ৫ কৌটা গুল (তামাক গুঁড়া) পানিতে মিশিয়ে দিলে ফল ভালো পাওয়া যায়। অনুমোদিত বালাইনাশক ব্যবহার করা পোকা দমনে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়। যেমন: অ্যাডমায়ার ০.৫ মিলি বা ০.২৫ মিলি ইমিটাফ বা ২ মিলি টাফগর/রগব/সানগর প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা : শীতে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়। পাতার উল্টোদিকে সাদা তুলার মতো পোকাই হলো ছাতরা পোকা। পেয়ারার মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে নেয়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। পোকার আক্রমণে পাতা, ফল ও ডালে সাদা সাদা তুলার মতো দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়া দেখা যায়। এর আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়। অনেকেই মিলিবাগের সাথে সাদা মাছিকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেন। এ ব্যাপারে একটু লক্ষ রাখতে হবে।
প্রতিকার : আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি থেকে ১৫-২০ সেমি উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দ্বারা মুড়ে দিতে হবে, যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম বা বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। জৈব বালাইনাশক নিমবিসিডিন (০.৪%) ব্যবহার করে পোকা ধ্বংস করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি রগর টাফগর, সাইপারমেথ্রিন ২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পেয়ারার মাছি পোকা:
মাছি পোকা ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় ফলে অভিপজিটর ঢুকিয়ে তাতে ডিম পেড়ে রাখে। এ ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে ফলের মাংসল অংশ খেতে থাকে এবং ফল ভেতরে পচে যায়।
চিত্র : পেয়ারার মাছি পোকা
প্রতিকার : ফল ব্যাগিং করা বা পলিথিন দিয়ে প্যাঁচিয়ে রাখলে আক্রমণ কমে। ইদানীং কৃষক ভাইয়েরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশ ভালো ফল পাচ্ছেন। সুতরাং, ছাদ বাগানীরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। নষ্ট ফল বাগান থেকে যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। বিষটোপ ব্যবহার করে (১০০ গ্রাম নরম করে থ্যাঁতলানো পেয়ারা + ৫ গ্রাম ভিটাব্রিল ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করতে হবে) পোকা ধ্বংস করা যায়। বেইট ট্র্যাপ স্থাপন করা ও ফেরোমন ফাঁদ (ব্যাকট্রো- ডি হেক্টর প্রতি ৮০টি লিউর) ব্যবহার করেও বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে অন্য কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করাই উত্তম।
পেয়ারার স্কেল/খোসা পোকা : ২-৩ মি.মি. ডিম্বাকৃতির বাদামি থেকে ধূসর রঙের পোকা বাচ্চাসহ দলবেঁধে গাছের ডালে শক্ত করে লেগে থাকে। খোলস আঁশের মতো। পোকা পাতা ও ডালের রস চুষে খেয়ে ফেলে, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। পোকা সাধারণত পাতা, ফল ও ডালে আক্রমণ করে এবং সাদা সাদা তুলার মতো দেখা যায়। অনেক সময় পিঁপড়া দেখা যায় গাছে। পোকার আক্রমণে অনেক সময় পাতা ঝরে যায় এবং ডাল মরে যায়।
প্রতিকার : আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে দ্রুত সম্ভব ধ্বংস করে ফেলতে হবে। অল্প আক্রমণের ক্ষেত্রে তুলায় সামান্য অ্যালকোহল লাগিয়ে সেটি দিয়ে ঘষে গাছ পরিষ্কার করলে আক্রমণ কমানো সম্ভব। সম্ভব হলে হাত দিয়ে ডিম বা বাচ্চার গাদা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। জৈব বালাইনাশক নিমবিসিডিন (০.৪%) ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করলে পোকা মরে যায়।
পেয়ারার জাবপোকা : শুধু পেয়ারার জন্য নয়, বিভিন্ন ধরনের ফল সবজি ও ফুলে এই পোকার আক্রমণ হয়। জাবপোকা গাছের পাতা ও আগার রস খেয়ে ফেলে এবং এক ধরনের মিষ্টি রস নিঃসরণ করতে থাকে। এর আক্রমণ বেশি হলে শুটিমোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে এবং পাতায় কালো আবরণ দেখা যায়। জাবপোকা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করে।
চিত্র: পেয়ারার জাবপোকা
প্রতিকার : অল্প আক্রমণের ক্ষেত্রে হাত দিয়ে তুলে পোকা পিষে মেরে ফেলতে হবে। আক্রান্ত পাতা ও ডাল যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে হবে। পরভোজী পোকা যেমন: লেডিবার্ড বিটল খেতে ছেড়ে দিলে এরা জাবপোকা খেয়ে আক্রমণের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ডিটারজেন্ট পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। মুষলধারে বৃষ্টি হলে জাবপোকা এমনিতেই চলে যায়। প্রতি গাছে ৫০টির বেশি পোকার আক্রমণ হলে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক যেমন: অ্যাডমেয়ার ০.৫ মি.লি. লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
শুটিমোল্ড : এ রোগে পাতা ও কাণ্ডে কালো রঙের দাগ পড়ে।
অ্যানথ্রাকনোজ : পাতা ও ফলের গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত ডাল ও পাতা কুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
উইল্ট বা নেতিয়ে পড়া রোগ : এটি পেয়ারার একটা মারাত্মক রোগ। এ রোগের প্রথমে পাতা শুকিয়ে হলুদ হয়ে যায়, তারপর ডালপালা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। এ রোগের প্রতিকার নেই বললেই চলে। প্রতিষেধক হিসেবে বাগানে কখনো পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
কলমের প্রাপ্তিস্থান : বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো জাতের পেয়ারার কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও পেয়ারার কলম সংগ্রহ করতে পারেন।
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet