Jamrul cultivation on the roof – ছাদে জামরুল চাষ।

Jamrul cultivation on the roof

হঠাৎ করে কিনে শাড়ি-জামা পরা যায়, গাছ লাগানো যায় না। লাগানোর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকে ভাবতে হয়, সে অনুযায়ী গর্ত করে গর্তে সার-মাটি ভরে রাখতে হয়। ছাদে বাগান এখন অনেকেই করছেন। ছাদে লাগানোর জন্য ফুল ও বাহারি গাছের চেয়ে ফল ও সবজি লাগানো ভালো। বাজার থেকে যেসব ফল কিনছেন তা নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো, যে সবজি কিনছেন তাতে ক্ষতিকর কীটনাশক দেওয়া। তাই ওতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া ফল ও সবজি গাছ থেকে তোলার পরই তার ভিটামিন কমতে থাকে। তাই বিষমুক্ত টাটকা ফল ও সবজি পেতে হলে নিজের আঙিনাতেই একটা ছোট্ট বাগান গড়ে তুলতে হবে। বাড়িতে কোথাও ফাঁকা জায়গা না থাকলে খোলা ছাদটাকে এ কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ছাদে তো অনেক ধরনের ফল ফুল ও সবজি চাষ করা যায়। হঠাৎ করেই না হয় ছাদে কয়েকটা সবজি লাগানোর পরিকল্পনা করে সেটা বাস্তবায়ন করে ফেলুন।

জামরুলের (Java apple) আদি বাসভূমি আন্দামান-নিকোবর হলেও এখন আমাদের দেশি ফলে পরিণত হয়েছে। কাঁচাপাকা সব অবস্থাতেই জামরুল খাওয়া যায়। মৌসুমে জামরুল গাছে কয়েক দফায় জামরুল ধরে। ফলের গড়ন অনেকটা নাশপাতির মতো, সাদা মোমের মতো। তবে আজকাল লাল, সবুজ নানা রঙের জামরুলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। দেশি ছোট জাতের পানসে জামরুলের পাশাপাশি এখন দেশে এসেছে মিষ্টি ও বড় বড় জাতের জামরুল। সম্প্রতি দেশে এসেছে নতুন কিছু জামরুলের জাত। যেগুলো আকারে বড়, স্বাদেও মিষ্টি। থাইল্যান্ড থেকে এসব জাতের জামরুল এসেছে বলে একে সবাই বলছে থাই জামরুল। আসুন আমরা বাজারে প্রচলিত জামরুলের জাত সম্পর্কে কিছুটা জেনে নিই।

জাত বাছাই দেশি জামরুল :    ফল আকারে ছোট, স্বাদে পানসে। তবে ফল ঝরে কম। দেশি জাতের জামরুলের বেশ কয়েক রঙের জামরুল দেখা যায়। লাল, গোলাপি, গোলাপি সবুজ ইত্যাদি রঙে দেখি জামরুলের কয়েকটি রকম আছে। গাছ বড় হওয়ায় ছাদে না লাগানোই ভালো।

থাই জামরুল:     থাই ভাষায় ছেম ফু পা, ফিলিপাইনে টামবিস, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় জামবু এয়ার নামের জামরুল বাংলাদেশে এসে হয়েছে থাই জামরুল। এ দেশে এখন কয়েক জাতের থাই জামরুল দেখা যাচ্ছে। এক জাতের থাই জামরুলের রং মোমের মতো সাদা, কিন্তু মুখের কাছে গোলাপি আভা। অন্য এক জাতের থাই জামরুলের রং সবুজাভ সাদা, অন্যটির রং দুধের মতো সাদা। আবার আরেক জাত আছে যেটার ফলের ওপর সাদা লম্বালম্বিভাবে গোলাপি আঁচড় আছে। আবার বড় লাল ফলও রয়েছে থাই জামরুলের। আছে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন আকার। লাল রঙের থাই জামরুলের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব জাতের সেরা বড় আকারে সাদা রঙের মিষ্টি থাই জামরুল। দশটিতে কেজি হয়। স্বাদে বেশ রসাল, নরম। গ্রীষ্মের প্রথম থেকে ফল ধরতে শুরু করে, বর্ষাতেও ফল ধরে। বছরে দু-তিন দফায় ফল ধরে। তবে বর্ষার জামরুলের স্বাদ কম হয়। ফল গাছে বেশি পাকলে স্বাদ কমে যায়, চেহারা নষ্ট হয়ে যায় ও পচতে শুরু করে। বেশি বৃষ্টিতেও থাই জামরুলের ক্ষতি হয়।

Thai Jamrul

চিত্র থাই জামরুল

রোজ অ্যাপেল:   থাই জামরুলের মধ্যে ‘রোজ আপেল’ সেরা। বছরে দু’বার ফল ধরে। ডিসেম্বর- জানুয়ারিতে একবার, এপ্রিল-মে মাসে আরেকবার। ফল আকারে খুব বড়। পাঁচ-ছয়টা জামরুলে এক কেজি হয়। ভেতরে পুরোটাই শাঁস। অত্যধিক মিষ্টি, শাঁসে চিনি বাসুগারের পরিমাণ প্রায় ২৫%। রং টকটকে লাল। অন্য জামরুল যেমন পাকার পরপরই গাছ থেকে ঝরে পড়ে, এটা তেমন নয়।

বারি জামরুল ১:

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ জাতটির গাছে নিয়মিত প্রতিবছর ফল ধরে। এ জাতের পাকা ফল দেখতে আকর্ষণীয়। ফলের রং মেরুন বলে অনেকে একে আপেল জামরুল নামেও ডাকেন। খেতে সুস্বাদু, মধ্যম রসালো। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং এপ্রিল-মে মাসে ফল পাকে। ফল বড়, প্রতিটি ফলের ওজন ৩৫ গ্রাম। এ জাতটি ছাদে ড্রামে লাগানোর জন্য বাছাই করতে পারেন।

বারি জামরুল-২:

নিয়মিত প্রচুর ফল উৎপাদনকারী জাত। গাছ মাঝারি, অত্যধিক ঝোপালো। বছরে তিন বার অর্থাৎ মধ্য ফাল্গুন, মধ্য বৈশাখ এবং আষাঢ়ের শেষ ভাগে ফল আহরণ করা যায়। ফল গোলাকৃতির, পাকা ফল আকর্ষণীয় হালকা মেরুন বর্ণের এবং খেতে সুস্বাদু (বিক্সমান বা মিষ্টতা ৬.-৭.১%)।

 অন্যান্য জামরুলের মতোই মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য শ্রাবণে (জুন-জুলাই) চাষ করা যায়। তবে পানি সেচ নিশ্চিত করা গেলে বৈশাখ থেকে মধ্য কার্তিক (এপ্রিল-অক্টোবর) মাস পর্যন্ত চারা/কলম রোপণ করা যায়। ফল পূর্ণতাপ্রাপ্তির পর সংগ্রহ করতে হবে। বারি জামরুল-১ এর ফল মধ্য বৈশাখ-মধ্য জ্যৈষ্ঠ মাসে আহরণ করা হয়। পরিপক্ব ফল গাঢ় তামাটে থেকে মেরুন বর্ণ ধারণ করে এবং পরিপুষ্ট ও টসটসে হয়। বারি

জামরুল-৩:

নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। পাকা ফলের গায়ের রং আকর্ষণীয় লালচে মেরুন, খাদ্যাংশ সাদা, কচকচে ও চামড়া পাতলা ফল ঘণ্টাকৃতি, ফলের শাঁস আঁশটে ও খেতে খুবই মিষ্টি। বিক্সমান বা মিষ্টতা ১২%। প্রতি ফলের গড় ওজন ৫৯ গ্রাম। গোটা দেশেই এটা চাষ করা যায়।

এফটিআইপি বাউ জামরুল-১ (নাশপাতি জামরুল) :   প্রতিটি ফলের ওজন ২০-৩০ গ্রাম। ফলের মিষ্টতা সাধারণত ৯-১৫%। ফল দেখতে গোলাপি রঙের লালচে আভা যুক্ত। এ ফল বছরে ২ বার একই পরিমাণ ফল ধারণ করে। একটি থোকায় ২-১৫টি ফল থাকে। প্রতি একক জমিতে দেশি জামরুলের তুলনায় তিন গুণের বেশি গাছ লাগানো যায়। ফল ধরার পর প্রতিবছরই ফল পাওয়া যায়। অর্ধড্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।

এফটিআইপি বাউ জামরুল-২ (আপেল) :   প্রতিটি ফলের ওজন ২০-৪০ গ্রাম। ফলের মিষ্টতা সাধারণত ১০-১৫%। ফল আপেলের মতো লাল রং ধারণ করে। এ ফল বছরে ২ বার একই পরিমাণ ফল ধারণ করে। একটি থোকায় ২-১০টি ফল থাকে। প্রতি একক জমিতে দেশি জামরুলের তুলনায় তিন গুণের বেশি গাছ লাগানো যায়। ফল ধরার পর প্রতিবছরই ফল পাওয়া যায়। অর্থ ড্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়।

ছাদে জামরুলের চাষ পদ্ধতি :    ছাদে জামরুলের কলম লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য ‘ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি

তৈরি করত সেখানে জামরুল গাছের কলম রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে জামরুল কলম রোপণ করলে কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য পরিচর্যা :    বিভিন্ন পরিচর্যা সহ প্রতিবছর দু’বার সার প্রয়োগের জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।

জামরুলের পোকামাকড় দমন :   অন্যান্য ফলের মতো জামরুলে বেশ কিছু পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দেয়। জামরুলের পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের ব্যাপারে কিছু তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো: জামরুলের খোসা পোকা: ছোট আকৃতির এ পোকা গাছের পাতা, পাতার বোঁটা, কচি ডগা এবং ফল হতে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে। এরা দু’ভাবে ক্ষতি করে থাকে। প্রথমত, রস চুষে খাওয়ার ফলে গাছের জীবনীশক্তি হ্রাস পায়। দ্বিতীয়ত, রস চুষে খাওয়ার সময় এরা গাছের রসের মধ্যে এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ অন্তঃক্ষেপ করে। ফলে আক্রান্ত পাতা, ডগা ও ফলের ওপর হলদে দাগ দেখা যায়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছের সমস্ত পাতা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে।

 ব্যবস্থাপনা :   বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোঁটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডালপালা ও অতি ঘন ডালপালা ছাঁটাই করে পরিষ্কার করে দিন। পরিষ্কার করার পর একটি ছত্রাক সাধারণ নাশক ও একটি সাধারণ কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালোভাবে স্প্রে করুন। নিয়মিত বাগান

পরিদর্শন করুন। আক্রমণের মাত্রা মারাত্মক হলে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে আক্রান্ত গাছে খায়ামেথোক্সাম ১৪.১%+ ল্যাম্বডাসাইহ্যালোথ্রিন ১০.৬% অথবা ক্লোরপাইরিফস ৫০% + সাইপারমেথ্রিন ৫% ফীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করুন।

জামরুলের ফল পচা রোগ :   এ রোগ হলে ফলের নিচের দিকের অংশে প্রথমে পচন ধরে এবং দ্রুত ফল পচে যায়। পচা অংশে তুলার মতো জীবাণুর অংশ দেখা যায়। এল

 দমন ব্যবস্থাপনা :   গাছ থেকে আক্রান্ত ফল অপসারণ করা। গাছ পরিষ্কার রাখা। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোঁটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডালপালা ও অতি ঘন ডালপালা ছাঁটাই করে পরিষ্কার করে দিন। পরিষ্কার করার পর একটি সাধারণ মানের ছত্রাকনাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালোভাবে স্প্রে করুন। নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

 জামরুলের শুটিমোল্ড রোগ :   

এ রোগের আক্রমণে পাতায়, ফলে ও কাণ্ডে কালো ময়লা জমে। খোসা পোকা, মিলিবাগ বা সাদা মাছির আক্রমণ এ রোগ ডেকে আনে।

ব্যবস্থাপনা :   আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করা। মিলিবাগ বা সাদা মাছির আক্রমণ এ রোগ ডেকে আনে। তাই এদের দমনের জন্য অ্যাডমায়ার ১ মি.লি / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা। বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোঁটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডালপালা ও অতি ঘন ডালপালা ছাঁটাই করে পরিষ্কার করে দিন।

জামরুলের পাতা পোড়া রোগ:   এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতা, কাণ্ড ও ফলে প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামি হয়। পাতার কিনারা শুকিয়ে যায়।

Jamrul leaf burn disease

 চিত্র: জামরুলের পাতা পোড়া রোগ

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা :   আক্রান্ত ডাল বা পাতা অপসারণ করা। ডাইথেন এম ৪৫ বা রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা। বাগান অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না। ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোঁটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডালপালা ও অতি ঘন ডালপালা ছাঁটাই করে পরিষ্কার করে দিন।

কলমের প্রাপ্তিস্থান :   বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো জাতের জামরুলের কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও জামরুলের কলম সংগ্রহ করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *