Nutritional value of fruits – পুষ্টিগুণ ও ছাদ বাগানে ফলচাষের যৌক্তিকতা

Nutritional value of fruits

ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা রক্তে মিশ্রিত হওয়ার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কও সজাগ হয়ে ওঠে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান দেহের ভিতরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাই, ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী। প্রতিটি মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেকোনো ধরনের একটি ফল অবশ্যই থাকা উচিত নিজের সুস্বাস্থ্যের জন্যেই।

মোটা দাগে ফল খাওয়ার দারুণ কিছু উপকারিতা

 ঘুম থেকে ওঠার পর ব্লাড সেল এবং ব্রেন সেলকে পুনরায় অ্যাকটিভ করতে শরীরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি বা শর্করার প্রয়োজন পড়ে। এ কারণেই খালি পেটে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে এমনটা করলে একদিকে যেমন শরীরে চিনির চাহিদা পূরণ হয়। ফলে ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

হার্ট ভালো রাখতে ফল:

দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে ব্রেকফাস্টের মেনুতে ফল রাখতেই হবে। কারণ নিয়মিত খালি পেটে ফল খেলে শরীরে উপকারী ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

পুষ্টি ভান্ডার ফল:

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল ব্রেকফাস্টের ১৫ মিনিট আগে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খেলে খাবারে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদানগুলো শরীরে বেশি মাত্রায় শোষিত হয়। ফলে দেহের অন্দরে পুষ্টি ভরপুর মাত্রায় প্রবেশ করে।

শরীরকে নির্বিষ করে ফল:

সকালের প্রথম অর্ধে শরীর নিজের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলো বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়। তাই তো এই সময় এক বাটি ফল খেলে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই টক্সিক উপাদানের প্রভাবে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাই শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে চান, তাহলে ফল খেতে ভুলবেন না যেন!

অম্ল বা এসিড দূরীকরণে ফল:

সকাল সকাল ফল খাওয়া মানেই চোরা ঢেকুর আর অ্যাসিডিটি হবে, এটা ভুল ধারণা। এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, ফল খেলে অ্যাসিড নয়, শরীরে অ্যাসিড এবং অ্যালকেলাইনের ভারসাম্য ঠিক হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাসিডিটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।

কর্মক্ষমতা বাড়াতে ফল:

 ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা রক্তে মিশ্রিত হওয়ার পর শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কও সজাগ হয়ে ওঠে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়।

 রোগ প্রতিরোধে ফল:

বেশিরভাগ ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান দেহের ভিতরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বাড়িয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবেই ছোট- বড় নানা রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়, সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ফল:

অতিরিক্ত ওজন যাঁদের মাথাব্যথার কারণ, তাঁরা নিয়মিত ব্রেকফাস্টে যদি ফল খাওয়া শুরু করুন, তাহলে কিন্তু দারুণ উপকার মেলে। ফলে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান

শরীরে মজুত টক্সিক উপাদানগুলো বের করে দিয়ে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তেমনই অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

পেটের পীড়া নিরাময়ে ফল

 ফলে থাকা ফাইবার, শরীরে প্রবেশ করার পর হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে একদিকে যেমন হজম ক্ষমতা বাড়ে, সতমনই কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগের প্রকোপ কমতেও সময় লাগে না। তাই যারা নানা রকম পেটের রোগে ভোগেন, তাঁরা নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ফল খাওয়া শুরু করুন, উপকার মিলবে।

মোদ্দাকথা, ফল মানব জাতির জন্য প্রকৃতির অমূল্য উপহার। বন্য পরিবেশ থেকে আদিম মানুষ যখন স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে, তখন তাদের পছন্দের প্রথম খাবার ছিল ফল। বাংলাদেশের গ্রীষ্ম ও অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া ফল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দেশের উৎপাদন বিবেচনায় গ্রীষ্মকাল হলো ফলের মৌসুম।

আমাদের দেশে ৭০-৮০ রকমের ফল জন্মে থাকে; যেসব আবাদি ফল উৎপাদিত হয় তার প্রায় ৫৪% বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ এ চার মাসেই পাওয়া যায়। এ সময় আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, আমলকী, আতা, করমচা, জামরুল, বেল, গাব, কাঁচা তালসহ আরো অনেক ফল পাওয়া যায়। বাকি ৪৬% ফল পাওয়া যায় অন্য ৮ মাসে। তখন ফলের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম থাকে। কলা সারা বছরই পাওয়া যায়। পেয়ারাও প্রায় সারা বছরের ফল হয়ে গেছে। ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং আঁশসমৃদ্ধ কিছু ফল বাংলাদেশে সহজেই উৎপাদন হয়, যেমন নারিকেল, আমড়া, কুল, বরই, মাল্টা, কমলা, আমলকী, কামরাঙা, জাম্বুরা, বিলিম্বি, ডালিম, তাল, লটকন, কদবেল, চুকুর, করমচা, কাউ, সফেদা, কাঠলিচু, সাতকরা, গন্ধরাজ লেবু, কাগজি লেবু, জারা লেবু, গোলাপজাম, চালতা, টিপা ফল, ডেওয়া, ডুমুর, ডেফল, নোনা, ফলসা, আঁশফল, বেতফল, বৈঁচি, পানিফল, লংগান, আতা, শরিফা ইত্যাদি।

শরীরে পুষ্টি উপাদান পাওয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে ফল খাওয়া। এজন্য প্রতিদিন এ দেশের প্রতিজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ফল খাওয়া দরকার ২০০-২৫০ গ্রাম। কিন্তু গড়ে খাওয়া হচ্ছে মাত্র ১০০ গ্রামের অনেক কম। অর্থাৎ, প্রয়োজনের তুলনায় ফল গ্রহণের পরিমাণ অনেক কম। এই কম খাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রকৃত কারণ পুষ্টি জ্ঞানের অভাব। দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রাম করে ফল খাবার মতো পর্যাপ্ততা দেশে আছে। শুধু পুষ্টি সম্পর্কে উদাসীনতার কারণে ফল গ্রহণের পরিমাণ কম। ফলশ্রুতিতে শুধু ভিটামিনের অভাবে দেশের মানুষ অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরিসংখ্যানে জানা যায়, যেমন ভিটামিন এ’র অভাবে ৮৮%, সি’র অভাবে ৮৭%, বি’র অভাবে ৯৬%, ক্যালসিয়ামের অভাবে ৯৩% লোক প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো এসব ভিটামিনের অভাবজনিত রোগে ভুগছে। দেশের ৭০% পুরুষ এবং ৭৫% মহিলা আয়রন স্বল্পতায় ভুগছে। মহিলাদের মধ্যে জিংক স্বল্পতা ৫৭.৩০% এবং পাঁচ

বছরের নিচে শিশুদের জিংক স্বল্পতা ৪৪%। এসব রোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকা যায় নিয়মিত ফল গ্রহণ করলে। তবে ফল খাওয়ারও নিয়ম আছে, যা মেনে চলতে পারলে দেহ বেশি পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে পারে। ড. স্টিফেন কার লিওন গবেষণা করে দেখেছেন যে, যেকোনো প্রধান আহারের আগে ফল খেলে বেশি পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়। আমাদের দেশে উৎপাদিত ফলগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমরা যদি পুষ্টি শিক্ষায় ভালোভাবে শিক্ষা পেতে পারি তবে যে পরিমাণ ফল আমাদের দেশে উৎপাদন হয় বা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে তা উৎপাদন করে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাত করতে পারলে জনপুষ্টি অনেকখানিই পূরণ হতে পারে। এর ফলে উপযুক্ত মেধাসহ পরিপূর্ণ কর্মক্ষম মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে সকলে এবং দেশ পাবে সবদিকে শক্তিশালী এক জাতি। তাই আমাদেরেকে নিয়মিত ফলাহার করবার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেই সাথে ছাদ বাগানে যথেষ্ট পরিমাণ হরেক রকমের ফল দ্বারা বিন্যস্ত করতে হবে।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *