Roof Garden – ছাদ বাগানে ডালিম/আনার/বেদানার চাষ।

Roof Garden

ডালিমের উন্নত জাতই হলো আনার বা বেদানা। ডালিম খুবই আকর্ষণীয়, মিষ্টি, সুস্বাদু এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। বাংলাদেশের মাটি ডালিম চাষের জন্য উপযোগী বিধায় আমাদের দেশের বসতবাড়ির আঙিনায় ডালিমের চাষ দেখা যায়। ডালিমের অনেক ঔষধিগুণও রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা করলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যাবে। ছাদ বাগানে টবে বা ড্রামে খুব সহজেই ডালিমের তথা আনার বা বেদানার চাষ করা যায়। বাংলাদেশে ডালিমের জাত প্রকরণ নিয়ে কোনো কাজ হয়নি। এর কোনো উন্নত জাতও বাংলাদেশে নাই। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে স্প্যানিশ রুবি, পেপার সেল, ওয়ান্ডারফুল, মাসকেট রেড, ঢোল্কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, বেদানা ও কান্ধারী প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য।

ছাদে ডালিমের চাষ পদ্ধতি  ছাদে ডালিম তথা আনার বা বেদানার চারা লাগানোর জন্য হাফ ড্রাম অথবা সিমেন্টের পট বা জিও ব্যাগ নিয়ে তাতে এই বইয়ের “ছাদ বাগানের জন্য মাটি প্রস্তুত ও চারা রোপণ” অধ্যায়ে ছাদ বাগানের জন্য “ছাদ বাগানের জন্য আদর্শ মাটি তৈরি করত সেখানে ডালিম গাছের কলম রোপণ করতে হবে। চারা গাছটিকে সোজা করে সঠিকভাবে রোপণ করতে হবে। তারপর গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উঁচু করে হাত দিয়ে মাটি চেপে চেপে দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়া দিয়ে পানি বেশি ঢুকতে পারবে না। একটি সোজা চিকন লাঠি দিয়ে গাছটিকে বেঁধে দিতে হবে। চারা রোপণের শুরুর দিকে পানি অল্প দিলেই চলবে। পরে ধীরে ধীরে পানি দেওয়া বাড়াতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমতেও দেওয়া যাবে না। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে প্রয়োজনমতো গাছে সেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে ডালিম কলম রোপণ করলে কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

অন্যান্য পরিচর্যা :    বিভিন্ন পরিচর্যা সহ প্রতিবছর দু’বার সার প্রয়োগের জন্য “ছাদ বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা” অধ্যায়ের খুঁটিনাটি অনুসরণ করুন।

ডালিম গাছের বিশেষ পরিচর্যা :   ছাদের ডালিম তথা আনার গাছের ডাল নিয়মিত ছাঁটাই করতে হবে। ডালিম গাছের পুরাতন ডালের নতুন শাখায় ফুল আসে। পুরাতন ডালে নতুন শাখা বের করার জন্যই ডালপালা ছাঁটাই করা প্রয়োজন। এছাড়াও আনার গাছের শিকড় থেকে বের হওয়া লকলকে ও তরতাজা সাকারও (যাকে অফশুট বলে) ছেঁটে দিতে হবে। ডালিম গাছে সারা বছরই অল্প অল্প করে ফুল আসতে থাকে। তবে সবসময়ের ফুল থেকে কিন্তু ফল উৎপন্ন হয় না। বসন্তকালে ডালিম গাছে যে ফুল হয় সেই ফুল থেকে গ্রীষ্মকালে ফল হয়। তবে এক্ষেত্রে এই ফলের গুণগত মান খুব একটা ভালো হয় না। বর্ষার শুরুতে যে ফুল আসে এবং সেই ফুল থেকে যে ফল হয় তা কার্তিক-অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এই সময়ের ফলের মান বেশ ভালো হয়। তাই বর্ষার শুরুতে ফুল আনার জন্য পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত গাছের বিশেষ পরিচর্যা নিতে হবে। এই সময়ে গাছে সেচ প্রদান বন্ধ রাখতে হয়, ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে। চৈত্র মাসে গাছে সেচ দিতে হয় এবং কোদাল দিয়ে কুপিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। চৈত্র মাসে গাছের পাতা ঝরে যায় ও বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত গাছ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে ১-২ বার সেচ দিলে ভালো হয়। বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাছের বৃদ্ধি ও ফুল ফল ধারণ শুরু হয়। পরবর্তীতে কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এই ফল সংগ্রহ করা যায়।

 ডালিমের রোগবালাই প্রতিকার :   

ডালিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা:  ডালিম ফলের মারাত্মক শত্রু পোকা হচ্ছে ডালিমের প্রজাপতি বা ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই প্রজাতির শূককীট ফলের ক্ষতি করে থাকে। স্ত্রী প্রজাপতি ফুল ও ছোট ফলের ওপর ডিম পাড়ে। সেই ডিম থেকে শূককীট বের হয়ে বর্ধনশীল ফলে ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ফলের বীজ ও অন্যান্য অংশ খেয়ে ফেলে। পরবর্তীতে শূককীট থেকে মূককীটে পরিণত হওয়ার পূর্বে ফলের ত্বকে গোলাকার ছিদ্র করে ফল থেকে বের হয়ে আসে। এই পোকা দ্বারা আক্রান্ত ফলে মাধ্যমিক সংক্রমণ (Secondary Infection) হিসেবে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।

Pomegranate fruit borer

 চিত্র: ডালিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা

প্রতিকার :

 ক. আক্রান্ত ফল গাছ থেকে পেড়ে বা মাটিতে পড়ে থাকা আক্রান্ত ফল কুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।

খ. গাছে ফল ধরার পর ফলের বৃদ্ধি শুরু হলে কাপড় বা পলিথিন বা কাগজ দিয়ে ফল ব্যাগিং করে দিলে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

গ. এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে কার্বারিল (এসিকার্ব) বা ফস্ ফামিডন গ্রুপের কীটনাশক ১২-১৫ দিন পরপর গাছে ও ফলে স্প্রে করতে হবে।

কাও ছিদ্রকারী পোকা : কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ সাধারণত পরিচর্যাবিহীন গাছে দেখা যায়। এই পোকার শূককীট রাতের বেলা কাণ্ড ও শাখার ছাল ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরের অংশ খেতে থাকে। দিনের বেলা ডালের গর্তের মধ্যে এই শূককীট লুকিয়ে থাকে ও বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে। কাণ্ড বা শাখায় ছোট ছোট ছিদ্র বা বর্জ্য পদার্থ দেখে এ পোকার আক্রমণ লক্ষ করা যায়।

প্রতিকার:

 ক. গর্তের মধ্যে সরু তার ঢুকিয়ে পোকার কীড়াকে খুঁচিয়ে মারার ব্যবস্থা করতে হবে।

 খ. গর্ত থেকে এ পোকার কীড়ার বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে গর্তে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা তুলার সাহায্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢুকিয়ে কাদা দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিলে পোকা মারা যাবে।

রস শোষণকারী পোকা :   ছাতরা পোকা, সাদা মাছি, শুল্ক বা আঁশ পোকা, থ্রিপস, জাবপোকা ও মাকড় ডালিমের রস শোষণকারী পোকা হিসেবে বিবেচিত। এসব পোকার আক্রমণে পাতা, মুকুল, ফুল ও ছোট ফল ঝরে পড়ে। সাদা মাছি ও জাবপোকা পাতা ও কচি ডগার রস চুষে খায়। ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত অংশ বিবর্ণ ও বিকৃত হয়ে

যায়। এছাড়া এসব পোকার দেহ থেকে এক ধরনের মধু নিঃসৃত হয়, যা পাতায় লেগে থাকে। পরবর্তীতে পাতার গায়ে এই নিঃসৃত মধুর ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। ফলে গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মাকড় ও থ্রিপস পোকা পাতা, ফুলের বোঁটা, বৃতি ও দলমণ্ডলের অংশ ক্ষত করে এবং ক্ষত থেকে বের হওয়া কোষরস খায়। ফলে পাতার আগা কুঁকড়ে যায় এবং ফুল ঝরে যাওয়ায় ফলধারণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

প্রতিকার:

 ক. ছাতরা পোকা ও শুল্ক পোকার কীট দমনের জন্য আক্রমণের প্রথম দিকে আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপর প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে ডায়াজিনন দলীয় কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

 খ. জাবপোকা বা সাদামাছি বা ছাতরা পোকা (মিলিবাগ) দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউজি অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড ২০ এসএল অথবা অ্যাসিটামিপ্রিড ২০ এসপি অথবা বুপ্রোফেজিন ৪০ এসসি অথবা অথবা আইসো প্রোকার্ব+বুপ্রোফেজিন ২৫ ডব্লিউপি অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড+এমামেকটিন ৩৮ ডব্লিউ ডি জি অনুমোদিত মাত্রায় (বোতল বা প্যাকেটের গায়ে লিখিত) স্প্রে করতে হবে।

 গ. মাকড় দমনের জন্য ওমাইট/থিয়োভিট/ভার্টিমেক/ সানমেষ্টিন অনুমোদিত মাত্রায় (বোতল বা প্যাকেটের গায়ে লিখিত) স্প্রে করতে হবে।

 ডালিমের রোগবালাই দমন:

 ডালিমের দাগ রোগ: এই রোগ ছত্রাকজনিত কারণে হয়ে থাকে। ফল গাছ এ রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ফলের ওপর অনেক ছোট ও অনিয়মিত দাগ পড়ে। এই দাগগুলোর চারিদিকে সবুজ হলদে দাগ থাকে। পরবর্তীতে দাগগুলো লম্বা দাগে পরিণত হয়। ফলের খোসার নিচের বীজগুলো বাদামি বর্ণের হয়ে যায়। আক্রান্ত ফলের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারমূল্য কমে যায়।

ডালিমের দাগ রোগ

চিত্র: ডালিমের দাগ রোগ

প্রতিকার :   রোগাক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মেনকোজেব (ইন্ডোফিল এম ৪৫/ ডায়থেন এম ৪৫) বা ১ গ্রাম হারে কার্বান্ডাজিম (নোইন/ অটোস্টিন/এমকোজিম) ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় (বোতল বা প্যাকেটের গায়ে লিখিত) স্প্রে করতে হবে।

 ফল পচা রোগ :   ছত্রাকজনিত এই রোগটি সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। এ রোগের জীবাণু দিয়ে ফুল আক্রান্ত হলে ফলধারণ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কচি ফল ঝরে যায়। ফলের গায়ে, বিশেষ করে বোঁটায় হলদে বা কালো দাগ দেখে এ রোগের আক্রমণ বোঝা যায়। এই রোগের আক্রমণে ফলের খোসা কুঁচকে যায় ও ফলের ওজন কমে যায়। আক্রান্ত ফল কাঁচা থাকে, আকার ছোট হয় এবং ফলের উজ্জ্বল ভাব নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ফল নরম হয়ে পচে যায়।

 প্রতিকার :   ফল পচা রোগের প্রতিকার ফলের দাগ রোগের প্রতিকারের অনুরূপ।

 ফল ফেটে যাওয়া :   ডালিমের ফল ফেটে যাওয়া একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি কোনো ছত্রাকজনিত রোগ নয়। এটি সাধারণত পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত কারণে বা মাটিতে রসের তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে। ফলের বৃদ্ধির সময় শুকনো আবহাওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এজন্য ফলের ত্বক শক্ত হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ বৃষ্টি হলে মাটিতে রসের আধিক্য ঘটলে ফলের ভেতরের অংশ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। যার কারণে ভেতরের চাপ সহ্য করতে না পেরে ফলের খোসা ফেটে যায়।

ডালিম ফল ফেটে যাওয়া

চিত্র: ফল ফেটে যাওয়া

 প্রতিকার :

 ক. ডালিম গাছে ফল ধরার পর থেকে গাছে ঘনঘন পানি সেচ দিতে হবে।

খ. মাটিতে বোরনজনিত সার যেমন বোরিক এসিড প্রতি গাছে ৪০ গ্রাম হারে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। গ. ফলের বৃদ্ধির সময় সলুবর বোরন ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ফলে ও গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

ফল সংগ্রহ :   আনারের কলমের গাছে ২-৪ বছর থেকেই ফলন দেওয়া শুরু হয়। ফুল আসার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৬ মাস সময় লাগে। পরিপুষ্ট ফলের খোসার রং হলদে বাদামি হয়ে এলেই ফল পাড়াতে হবে। গাছে ফল বেশি দিন রেখে দিলে ফল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেসব গাছে ফল ফেটে যাওয়ার প্রবণতা থাকে সেসব গাছের ফল পুষ্ট হওয়ার কিছু আগেই পেড়ে নেওয়াই উত্তম। তবে অপুষ্ট ফলের স্বাদ ও গুণাগুণ খুব একটা ভালো হয় না। ডালিমের খোসা বেশ শক্ত, এজন্য পাকা ফল অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায় এবং বাজারজাত করার সময় পরিবহনকালেও ফল সহজে নষ্ট হয় না।

চারা/কলমের প্রাপ্তিস্থান :   বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারসমূহ, বিএডিসি’র এগ্রো সার্ভিস সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে ভালো জাতের ডালিমের চারা/কলম পাওয়া যায়। আবার বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকেও ডালিমের চারা/কলম সংগ্রহ করতে পারেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook

ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds

ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools

গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides

নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet

Our Product Categories

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *