পূর্বকথা
যখন ফুলবাগানীদের বা ফুলবাগানের মালিদের কাছে যাই, প্রায়শঃই তাঁরা প্রশ্ন করেন, বাগান তো ভালো হয়েছিল, কিন্তু গাছের তো বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে পোকারা। জবা আর পয়েনসেটিয়া গাছটার ডগা-কুঁড়ির বোঁটায় কী যেন সাদা দলা দলা মতো লেগে আছে, দিন দিন বাড়ছে। গোলাপের পাতাগুলো কালো কালো দাগে ভরে গেছে, আরু কুঁড়িগুলো এক ধরনের লেদা পেকায় ফুটো করে দিচ্ছে। এরকম গাছে গোলাপ ফুল ফুটবে কী করে? যখন তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ ক্লাসে যাই, সেখানেও তাঁদের প্রায় একই রকম প্রশ্ন থাকে- চন্দ্রমল্লিকার ফুল ফুটবে কী করে? ওর ডগাগুলো তো কুঁকড়ে ছোট হয়ে বসে আছে, ডগায় খুব ছোট ছোট কালচে সবুজ রঙের অনেক পোকা। আর পাতাগুলোতেও কালচে বাদামি দাগ ধরেছে। জিনিয়ার পাতাগুলোও অসংখ্য গোল গোল বাদামি ড়াগে ভরে গেছে, দাগের ভেতরটা সাদা, দেখতে ব্যাঙের চোখের মতো লাগছে। শখ করে ডালিয়া লাগিয়েছিলাম টবে, ওমা- একদিন দেখি পাতার উপরে কেউ যেন ময়দার গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়েছে। হাতের আঙুল দিয়ে ডললে সে গুঁড়ো আবার আঙুলে লেগেও যাচ্ছে। একদিন দেখলাম সেসব পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ডালিয়ার ফুল আসার আগে কেল্লা ফতে, মরে গেল গাছটা। তাঁদের বেশিরভাগই রোগ-পোকা চেনেন না, নামগুলো বলার তো প্রশ্নই আসে না। সমস্যাগুলো কিন্তু ঠিকই বলতে পারেন।
ফুলবাগান নিয়ে অনেকের কাছ থেকে এরকম অনেক সমস্যার কথা শোনার পর চেষ্টা করেছি তাঁদের সদুত্তর দেওয়ার, রোগব্যাধি আর পোকাগুলোর নিদান দেওয়ার। একদিন ভাবলাম, এভাবে আর কয়জনকে পরামর্শ দেওয়া যাবে? সঠিক পরামর্শ দিতে গেলে নিজের জানাশোনাও তো দরকার। তাই ঘোরাফেরার সময় ফুলবাগানের সমস্যাগুলোকে একটু দেখার ও চেনার চেষ্টা করলাম, বইপত্র পড়তে লাগলাম। কিছু ছাদবাগানে গিয়েও কিছু সমস্যার দেখা পেলাম। তবে সত্যি বলতে কী, বাস্তবে ফুলগাছে এমন কিছু সমস্যা বর্তমানে দেখা দিচ্ছে যার সাথে আমাদের অনেকেরই কোনো পরিচয় নেই, বইপত্র ঘেঁটেও তেমন সমাধান পাওয়া যায় না। যেমন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গোলাপ গ্রাম খ্যাত বিরুলিয়ায় গোলাপ বাগানে ব্যাপকভাবে এক অজানা রোগ দেখা দেয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বের হয় ‘অচেনা ছত্রাকে বিবর্ণ গোলাপ গ্রাম, ক্ষতি ৩২ কোটি টাকা’। এক অজানা রোগে ফুল ফোটার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলাপের কুঁড়িগুলো, এমনকি এ রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলাপ গাছের নতুন ডগা ও পুরো গাছ ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। সঠিকভাবে এ রোগকে শনাক্ত করতে না পারায় সমাধানও সঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাই আরও গবেষণা করা দরকার। এরকম আরও অনেক জানা- অজানা সমস্যায় শখের ফুলবাগান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
যাহোক, এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতেই এই বই লেখার পরিকল্পনা মাথায় আসে। মুশকিলটা হলো, ফুলের রাজ্যে যেমন আছে শত রকমের ফুল, তেমনি আছে সেগুলোর শত শত রকমের সমস্যা। সমস্যগুলোর বেশিরভাগই রোগ ও পোকামাকড় সংক্রান্ত। কিছু রয়েছে সার ও পরিচর্যাগত সমস্যা। লিখতে বসে ভাবলাম, এতসব ফুলের মধ্যে কোন ফুলগলোর রোগ-পোকামাকড় নিয়ে লিখব? আজ যে পোকা বা রোগকে পাত্তা দিচ্ছি না, কালই যে সে রোগে ফুলবাগান উজাড় হবে না, সেকথা হলফ করে বলতে পারি না। সব বাগানী তো আর এক ফুলের চাষ করেন না- এক এক জনের বাগানে এক এক রকমের ফুল। অনেক ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ দেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে যেসব ফুল চাষ করা হচ্ছে, সেসব ফুলগুলোর রোগ ও পোকামাকড় সম্বন্ধে আগে লেখা দরকার। কেননা, এর সাথে ফুলচাষিদের লাভ-লোকসান জড়িয়ে আছে। এজন্য এ বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস, ডালিয়া, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুলগুলোর রোগ ও. পোকামাকড়। সম্প্রতি জারবেরা ও লিলিয়াম ফুলের চাষও হচ্ছে। সেজন্য এ ফুল দুটির রোগ-পোকামাকড় সম্পর্কেও এ বইয়ে লেখা হয়েছে। এ ছাড়া যারা ছোট্ট ঘরোয়া ফুলবাগানে, টবে, ছাদবাগানে এসব বাণিজ্যিক ফুল ছাড়া অন্য যেসব ফুল ও বাহারি গাছ লাগান- সেসব গাছেরও দু চারটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ ও পোকামাকড় সম্পর্কে লেখা হয়েছে। সাথে দেওয়া হয়েছে অনেক ছবি, যাতে তাঁরা সেসব রোগ ও পোকামাকড় ভালভাবে চিনতে পারেন।
বইটি লিখতে গিয়ে অনেক লেখকদের বই, ওয়েবসাইট, গবেষণাপত্র ইত্যাদির দ্বারস্থ হয়েছি। তাঁদের সকলের কাছে আমার তথ্যঋণের কৃতজ্ঞতা রইলো। ধন্যবাদ জানাই এ দেশে কৃষি বিষয়ক বইয়ের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রান্ত প্রকাশনের প্রকাশক জনাব মোঃ আমিনুর রহমানকে, যিনি অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এ বইটি প্রকাশ করলেন। সত্যি বলতে কী, বইমেলায় প্রকাশের আগ্রহে ও তাগিদে বইটির কাজ খুব দ্রুততার সাথে শেষ করতে হয়েছে, সময় পেলে আরও ভালো করা যেত। এজন্য কিছু তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। পরবর্তীতে এরকম কিছু চোখে পড়লে বা পরামর্শ পেলে সংশোধনের আশা রাখি। আমার জানা মতে, এ বিষয়ে এ দেশে আর একটিও বই নেই। তাই আশা করি ফুলবাগানী, সম্প্রসারণকর্মী, কৃষির ছাত্র-ছাত্রীদের বইটি যথেষ্ট সহায়ক হবে। পাশাপাশি গবেষকরাও গবেষণা কাজে সহায়তা পাবেন।
মৃত্যুঞ্জয় রায়
সূচিপত্র
অধ্যায় ১: গোলাপের রোগ ও পোকামাকড় # ০৯
অধ্যায় ২: রজনীগন্ধার রোগ ও পোকামাকড় # ৩২
অধ্যায় ৩: গ্ল্যাডিওলাসের রোগ ও পোকামাকড় # ৪৪
অধ্যায় ৪: লিলিয়ামের রোগ ও পোকামাকড় # ৫৬
অধ্যায় ৫: ডালিয়ার রোগ ও পোকামাকড় # ৬৪
অধ্যায় ৬: গাঁদার রোগ ও পোকামাকড় # ৭৫
অধ্যায় ৭: চন্দ্রমল্লিকার রোগ ও পোকামাকড় # ৮৬
অধ্যায় ৮: জারবেরার রোগ ও পোকামাকড় # ৯৬
অধ্যায় ৯: অন্যান্য ফুল ও বাহারি গাছের রোগ-পোকামাকড় # ১০৫
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে = Geo Grow Bag
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 HIGH QUALITY GARDENING TOOLS
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 ORGANIC FERTILIZERS AND PESTICIDES
Reviews
There are no reviews yet.