ভূমিকা
শুরুতেই জাপানি লেখক মাসানোবু ফুকুওকার কথা মনে পড়ছে। তাঁর জীবনের ৯৫ বছরের মধ্যে ৬৫ বছর যিনি প্রাকৃতিক চাষাবাদ করে কাটিয়েছেন। ২০০৮ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তা অব্যাহত রেখেছিলেন। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, প্রকৃতির সম্পদকে কাজে লাগিয়েই ভালো উৎপাদন করে ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব। তাঁকে বলা হয় একালের প্রাকৃতিক কৃষির জনক। প্রকৃতি নির্ভর সেই চাষাবাদের অভিজ্ঞতা ও তাঁর সেই দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তিনি লিখে রেখে গেছেন তাঁর অসাধারণ ‘The One-Straw Revolution’ বইয়ে। বইটি পঁচিশটিরও বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। প্রাকৃতিক চাষাবাদ নিয়ে তাঁর ‘The Natural Way of Farming’ ‘The Road Back to Nature’ বই দুটিও সাড়া জাগিয়েছে।
সুস্থ থাকাটা খুব দরকার। সুস্থ থাকার জন্য রোজ কিছু শাকসবজি ও ফল খেতে হয়। কিন্তু সেই শাকসবজি যদি খাওয়ার জন্য নিরাপদ না হয় তাহলে তা খেয়ে আমরা সুস্থ থাকব কেমন করে? এদেশে সারাবছর ধরে নানারকমের “সবজি পাওয়া যায়। এখন মৌসুমের বাধা ভেঙে যাওয়ায় ও অনেক নতুন নতুন আধুনিক জাত আসায় এখন বলতে গেলে সব সবজিই প্রায় সারাবছর ধরে পাওয়া যায়। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ব প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করার মতো। কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে আমরা হোঁচট খাচ্ছি, তা হলো এদেশে উৎপাদিত শাকসবজিতে ব্যবহৃত বালাইনাশকের বিষাক্ততা। এর কারণে আমাদের সবজিগুলো বিদেশিদের কাছে যেন অস্পৃশ্য হয়ে উঠেছে। সবজিতে দেওয়া বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ বাজারে এমনকি রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। কৃষকদেরই বা দোষ কী? তাঁরা তো বিভিন্ন বালাইয়ের হাত থেকে সবজি ফসলকে রক্ষার চেষ্টা করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। অধিকাংশ কৃষকরা বালাই নিয়ন্ত্রণ মানেই বুঝে থাকেন বালাইনাশকের ব্যবহার। এর ফলে তাঁর নিজের ও ভোক্তাদের কী ক্ষতি হচ্ছে, পরিবেশের কী হচ্ছে সে কথা হয়ত তাঁরা ভাবেন না। বালাইনাশক দেওয়া সেসব সবজি আমরা বিদেশে রপ্তানিও করতে পারছি না। ফলে সবজি চাষ করে যে বৈদেশিক মুদ্রা এদেশে আসার সুযোগ রয়েছে তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। বিষাক্ত বালাইনাশকের এই দুষ্টুচক্র থেকে বেরিয়ে প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব চাষ ব্যবস্থাপনায় ফেরা দরকার।
দেশে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে একটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অনেক কৃষক তাই এখন আর আগের মতো যথেচ্ছ ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
তবুও গবেষণায় দেখা গেছে দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ কৃষক এখনো সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এর ফলে তাঁদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে। কীটনাশক ব্যবহারকারী কৃষকদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা যারা সেসব শাকসবজি খাচ্ছি তাঁরাও আছি ঝুঁকির মধ্যে।
প্রশ্ন হলো, এসব ক্ষতির কথা জেনেও কৃষকরা কেন তা করে যাচ্ছেন? দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা ফসলের বালাই নিয়ন্ত্রণে বালাইনাশকের ওপর নির্ভর করে আসছেন। বালাইনাশক ছাড়াও যে আরও অনেক কৌশল আছে যেগুলো ব্যবহার করে সফলভাবে সবজির বালাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এ বইয়ে এদেশে প্রয়োগযোগ্য সেসব কলাকৌশলসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উত্তম কৃষিচর্চা বা জিএপি মেনে, জৈব কৃষির নীতিমালা অনুসরণ করে ও আইপিএম কৌশলের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
একসময় আমাদের শুধু খাদ্যের দরকার ছিল, এখন দরকার নিরাপদ পুষ্টির। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন পর্যায়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন নিশ্চিত করা দরকার। অন্যদিকে দেশে শতভাগ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত না হওয়া পর্যন্ত বাজার থেকে কেনা সবজিগুলোকে হুট করে না খেয়ে সেগুলোকে বিষমুক্ত বা শোধন করে নেওয়া উচিত। এ বইয়ে কীভাবে এ কাজ করা যায় তা আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি শুধু সবজি উৎপাদনকারী কৃষকরাই নয়, ভোক্তারাও এ বই থেকে উপকার পাবেন। যাঁরা ছাদের বাগানে শাকসবজি চাষ করেন, তারা অবশ্যই বিনা বিষে শাকসবজি ফলাবেন। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কলাকৌশলগুলো কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রসারণকর্মীদেরও বইটি কাজে লাগতে পারে। কৃষির ছাত্র-ছাত্রীদেরও এ বই থেকে এ বিষয়ে জানা ও শেখার সুযোগ আছে। বলতে দ্বিধা নেই, এ বিষয়ে হয়ত আরও অনেক কিছু এ বইয়ে সংযোজন করা যেত। ভবিষ্যতে তা করার আশা রইলো। এ বিষয়ে কারো কোনো পরামর্শ থাকলে তা জানালে খুশি হবো।
প্রান্ত প্রকাশনের সুযোগ্য প্রকাশক জনাব মো. আমিনুর রহমান এ ধরনের একটি বই প্রকাশের আগ্রহ না দেখালে ও তাগিদ না দিলে হয়ত এ বই লেখা হতো না। এজন্য তাঁকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ।
-মৃত্যুঞ্জয় রায়
১৪ মার্চ ২০২১.00
সূচিপত্র
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে = Geo Grow Bag
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 HIGH QUALITY GARDENING TOOLS
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 ORGANIC FERTILIZERS AND PESTICIDES
Reviews
There are no reviews yet.