১. পুষ্টি কী?
দেহে খাদ্যের প্রতিফলনকে পুষ্টি বলে। পুষ্টি হচ্ছে খাদ্য এবং দেহ সম্পর্কিত একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে গ্রহণ করা খাদ্য পরিপাক, বিপাক এবং দেহের কাজে লাগে।
পুষ্টি উপাদান কী?
আমাদের দেহ ছয়টি উপাদান দিয়ে গঠিত এসব উপাদানসমূহকেই পুষ্টি উপাদান বলা হয়। বিভিন্ন ধরনের খাবারে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন পরিমাণে থাকে। শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাবার যাতে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পরিমাণমতো থাকে। খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই সব পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি। নিম্নের সারণিতে খাদ্যের পুষ্টি উপাদান, এর উৎস এবং মানবদেহে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ দেখানো হয়েছে।
ক্রঃ নং | পুষ্টি উপাদান | উৎস |
১ | শ্বেতসার- শর্করা | ভাত, আটা, রুটি, ছাতু, পাকা কলা, চিনি, গুড়, আলু, মিষ্টি আলু, কাউন, ভুট্টা, সাগু, কাসাবা, মাটির নিচের আলু, মধু, মিষ্টি এবং পাকা কলা, পানীয় ফল মাখনা, পদ্মগোটা, শালুক ইত্যাদি। |
২ | আমিষ | প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ দুই উৎস থেকেই আমিষ পাওয়া যায়। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শুটকি মাছ ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষ এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, বিচিযুক্ত সবজি (যেমন- শিম, বরবটি) ইত্যাদি থেকে উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া যায়। |
৩ | স্নেহ পদার্থ | আমিষের মতো প্রাণী এবং উদ্ভিদ দুই উৎস থেকেই স্নেহ পদার্থ পাওয়া। যায়। যেমন ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি প্রাণী থেকে এবং সরিষার তেল, তিলের তেল, বাদামের তেল, সয়াবিনের তেল ইত্যাদি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। |
৪ | খনিজ লবণ | প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ্জ দুই উৎস থেকেই খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। যেমন- আয়রন/লৌহ: মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু, কচু শাক, লাল শাক, সজনে, সবুজ শাক, পালং শাক, কলমি শাক, পাট শাক, ঢেঁড়স ইত্যাদি আয়োডিন: সামুদ্রিক মাছ, মাংস, যেকোনো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, শাকসবজি, এবং ফলমূলে সামান্য পরিমাণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি জিংক: মাছ, মাংস, ডিম, যে কোনো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ক্যালসিয়াম: দুধ, দই, কাটাসহ ছোটমাছ, মাংসের নরম হাড় ইত্যাদি । |
৫ | ভিটামিন | স্নেহ পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন- ভিটামিন এ, ডি, ই, কে এসবের উৎস তৈলাক্ত মাছ, মলা ও ঢেলা মাছ, রঙিন শাকসবজি ও রঙিন মিষ্টি ফল- আম, কাঁঠাল, পেঁপে ইত্যাদি। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন- ভিটামিন বি ও সি। এদের উৎস দুধ, ডিমের কুসুম, কলমি, ডাঁটা, লাল শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, জাম্বুরা, লেবু, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি। |
৬ | পানি | নলকূপ, বৃষ্টির পানি, ইত্যাদি। |
৩. পুষ্টি উপাদানের কাজ
শ্বেতসার/শর্করার কাজ:
- দেহে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে, (তাপ ও শক্তির একক ক্যালরি) ১ গ্রাম শ্বেতসার/শর্করা = ৪ কি. ক্যালরি পরিমাণ শক্তি দিয়ে থাকে।
- সকল পুষ্টি উপাদান কাজে লাগানোর জন্য দেহের ভিতরে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তার বেশিরভাগ শ্বেতসার-শর্করা দিয়ে থাকে।
- আঁশ জাতীয় শ্বেতসার খাবার দেহের বর্জ্য বা মল তৈরিতে এবং নিষ্কাশনে সাহায্য করে। দেহকে কিটোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আমিষের কাজ:
- দেহের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করে।
- দেহের ক্ষয়পূরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে।
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমিষ বিভিন্ন উৎসেচক এবং হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে।
- আমিষ থেকেও তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়। (১ গ্রাম আমিষ = ৪ কি.ক্যালরি) মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
স্নেহ পদার্থের কাজ:
- দেহে শক্তি সরবরাহ করে (১ গ্রাম থেকে ৯ ক্যালরি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়)
- দেহের ত্বককে মসৃণ রাখে এবং দেহকে আঘাত থেকে রক্ষা করে।
- খাবারকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করে।
- তেল থেকে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা দেহের বৃদ্ধি, ত্বকের মসৃণতা রক্ষা করে এবং হৃৎপিণ্ডের সঞ্চালনে সহায়তা করে।
খনিজ লবণের কাজ:
খনিজ লবণ দেহে অস্থি, দাঁত, রক্ত, মাংস, চুল, দেহ কোষে পাওয়া যায়। দেহে খনিজ লবণ স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। তাই এগুলোকে অনুখাদ্য উপাদান/মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বলা হয়। খনিজ লবণ বলতে বোঝায় ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, সালফার, আয়োডিন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, তামা ইত্যাদি।
ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ:
বেঁচে থাকার জন্য ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। মানবদেহে ভিটামিন সামান্যতম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। কিন্তু ভিটামিনের অভাবে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের কাজ ব্যাহত হয়। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর কাজ ও উৎসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো-
ভিটামিন ‘এ’ এর কাজ
- চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।
- রাতকানা রোগপ্রতিরোধ করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ফলে সহজে সংক্রামক রোগ হতে পারে না।
- দেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- হাড় এবং দাঁতের গঠনের জন্য সহায়ক।
- সংক্রামক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
ভিটামিন-বি, এর কাজ
- শরীরে শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন করে।
- চর্বি ও আমিষ থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধনে সাহায্য করে।
ভিটামিন ‘সি’ এর কাজ
ভিটামিন ‘সি’ একটি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন যা প্রতি ২৪ ঘণ্টা পর পর দেহে সরবরাহ করতে হয়। ভিটামিন ‘সি’ কোলোজেন নামক আমিষ তৈরিতে এবং রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করে। কোলোজেন হাড় এবং চামড়ার মধ্যস্থিত বাঁধন/সংযোগের কাজ করে। এটা শ্বেতসার, শর্করা, আমিষের বিপাকে সহায়তা করে এবং দেহের সকল কার্যক্রমের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ লৌহ এবং আমিষকে একত্রিত করে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এটা বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন হাম, যক্ষ্মা, নিউমেনিয়া এসব রোগসমূহের প্রতিরোধক তৈরি করে। চামড়াকে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। দেহের ক্ষত সহজেই শুকাতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রান্না করলে বা পানিতে অধিক সময় ভিজিয়ে রাখলে ভিটামিনের অপচয় হয়। সে কারণে ভিটামিন সি এর দৈনিক চাহিদা মেটাতে হলে কিছু শাকসব্জি ফলমূল রান্না না করে খেতে হয়।
ভিটামিন ‘ডি’ এর কাজ
সূর্যালোকে দেহ ত্বকে তৈরি হয় এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত গঠন ও সংরক্ষণে সহায়তা করে।
ভিটামিন ‘ই’ এর কাজ
ভিটামিন ‘ই’ দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং যৌবনকাল অধিক সময় ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিন ‘কে’ এর কাজ
ভিটামিন ‘কে’ রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে ও হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ‘কে’ এর অভাব হলে প্রসবকালে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না। সে কারণে গর্ভকালীন মহিলাদের ভিটামিন কে যুক্ত খাবার বেশি করে দিতে হয়।
পানির কাজ
আমাদের দেহের শতকরা প্রায় ৬২ ভাগই পানি। দেহ কোষে এবং তরল পদার্থে যথা- রক্ত, হজমের পাচক রসে এমনকি চোখের পানি তৈরিতে পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া দেহের সকল কার্যক্রম যথা রক্তসঞ্চালন, পরিপাক, শ্বসন ইত্যাদি কাজে পানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পানি মুখের গ্রন্থিসমূহ, ফুসফুস ও ত্বকের ঝিল্লির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে। দেহের ঘর্ম নিঃসরণে সহায়তা করে, দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। দেহের তাপমাত্রা সংরক্ষণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির দৈনিক ২-২.৫ লিটার পানি পান করা উচিত।
শাক-সবজির পুষ্টিমান সংরক্ষণ
শাক-সবজির পুষ্টি রক্ষায় মহিলার মুখ্য ভূমিকা রাখে। শাক-সবজি কাটা, ধোঁয়াসহ রান্না করার সঠিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে সবজির পুষ্টিমান নিজের অজান্তেই অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আইপিএম প্রশিক্ষণে মহিলাদের সম্পৃক্ত করে এতদ্বিষয়ে আধুনিক জ্ঞানদানের মাধ্যমে যেমন বড় বড় করে সবজি কাটা, কাটার আগেই ধোঁয়া ইত্যাদি সবজির পুষ্টিমান রক্ষাসহ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি গ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শাকসবজির পুষ্টিমান সংরক্ষণে করণীয়:
রন্ধন-পূর্ব | রন্ধনকালীন | রন্ধন পরবর্তী |
বসতবাড়ির সবজি বাগান থেকে তাজা সবজি সংগ্রহ করা | কম জ্বালে পাক করা | অতিরিক্ত পানি বা ঝোল না ফেলা। |
কাটার পূর্বে ধোঁয়া | পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা | পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা |
লম্বা করে কাটা | যতটুকু সম্ভব খোসাসহ পাক করা | গরম গরম পরিবেশন করা। |
যেসব সবজি কাঁচা খাওয়া যায় তা কাঁচা খাওয়া | বেশি তেলে শাক সবজি রান্না করা | |
ভক্ষণোপযোগী সবজি নির্বাচন | কম পানিতে এবং কম মশলা ব্যবহার করে সবজি রান্না | |
শাকসবজির রং নষ্ট না করে রান্না করা। |
আমাদের ফেসবুক পেজ = Siraj Tech Facebook
গাছের জন্য বিভিন্ন জৈব কীটনাশক। 👉 Organic Fertilizers and Pesticides
ছাদ বাগান করার জন্য জিও ব্যাগের অর্ডার করতে 👉 Geo Grow Bag
দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব ফল ও শাক-সব্জির বীজ পাবেন আমাদের কাছে। 👉 High Quality Gardening Seeds
ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম। 👉 High Quality Gardening Tools
নদী ও পুকুরের পাড় ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও রোল। 👉Geobag Geotube and Geosheet